নিউজ ডেস্ক:
দেশে কার্যরত ৫৬টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ২৫টি ব্যাংককে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পরিচালনার লাইসেন্স দেওয়া হলেও বর্তমানে ১৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোর এই সেবাটির সঙ্গে মোবাইল ফোন অপারেটরদের বড় ধরনের অংশগ্রহণ রয়েছে।
মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস নীতিমালায় মোবাইল ফোন অপারেটরদের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার ১৫ শতাংশ শেয়ার ধারণের সুযোগও রাখা হয়েছে। কিন্তু মোবাইল ফোন অপারেটররা নিজেরাই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নেতৃত্ব দিতে চাইছে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর শুরু থেকেই তারা এই দাবি করে আসছে। তাদের বক্তব্য, মোবাইল ফোন ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং সম্ভব নয়। তাহলে এই সেবার নেতৃত্বে তারা কেন থাকবে না। তবে মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নিয়ন্ত্রণে থাকায় তাদের এককভাবে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দিতে রাজি নয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, মোবাইল ফোন অপারেটরদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমতি দেওয়ার পর তাদের কাজে কোনো অনিয়ম হলে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু করার থাকবে না।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘সার্ক ফিন্যান্স সেমিনার অন ইমপ্যাক্টস অব মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস ইন দ্য সার্ক রিজিওন’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগ এই সেমিনারের আয়োজন করে।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে আর্থিক অনিয়ম সংঘটিত হচ্ছে কি না সে বিষয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির সেমিনারে বলেন, ‘প্রযুক্তির উৎকর্ষ দিন দিন বাড়ছে। এ সময়ে মোবাইল মানি অর্থপাচারের বড় হাতিয়ার হতে পারে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে আর্থিক জালিয়াতি ও প্রতারণা। এটি প্রতিরোধে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস (মোবাইল ব্যাংকিং) সংশ্লিষ্টদের একযোগে কাজ করতে হবে। ’
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, ‘তফসিলি ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকির মধ্যে থাকে বলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসে অর্থায়নের সুযোগ থাকে না। গ্রামীণফোন, বাংলালিংকসহ অন্যান্য মোবাইল ফোন অপারেটর কম্পানি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকির মধ্যে নেই। তাই এ মুহূর্তে মোবাইল ফোন অপারেটরদের ব্যাংকিং সেবার লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। ’
সেমিনারে জানানো হয়, ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় মোবাইল ব্যাংকিং খাতে ১০ কোটি ২০ লাখ গ্রাহক আছে। যার মাত্র ২৫ শতাংশ সক্রিয়। আর বাংলাদেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ২৫টির মধ্যে ১৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। বর্তমানে দেশে ১৩ কোটি ১০ লাখ মোবাইল ফোন গ্রাহক আছে। এর মধ্যে তিন কোটি ৯০ লাখ গ্রাহক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছে। সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে বলে জানান তিনি।
ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে মাসে ৬৯০ কোটি টাকা লেনদেন হয়, যা ছয় লাখ ৭১ হাজার এজেন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। আর্থিক লেনদেনে ঝুঁকি এড়ানো সব সময়ের জন্য চ্যালেঞ্জ বলে তিনি মনে করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. এম এ বাকী খলিলী। স্বাগত বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মো. আখতারুজ্জামান।
প্রবন্ধে অধ্যাপক খলিলী উল্লেখ করেন, যেসব অঞ্চলে যাতায়াত সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল সেসব অঞ্চলে বেশি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহৃত হচ্ছে। বরিশালের ৪৩ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফিন্যান্সিং করছে বলেও তিনি জানান। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও প্রণোদনা মোবাইল ফিন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করা উচিত।
সেমিনারে অর্থনীতিবিদ, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও দেশি-বিদেশি মোবাইল ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। দিনব্যাপী এই সেমিনারে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা ও অংশগ্রহণকারীরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অতিরিক্ত খরচ এবং একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিন-চতুর্থাংশ লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।