চলাচলের মাঝপথে লিফট আটকে যাওয়া, বিকল হয়ে বন্ধ থাকা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ক্ষেত্রে। ফলে চলাচলের সুবিধার জন্য তৈরি করা লিফট এখন আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলাচলের সুবিধার জন্য রয়েছে দুইটি লিফট। তবে সবসময়ই দুইটির মধ্যে একটি লিফট বন্ধ থাকতে দেখা যায়। ফলে তিনটি অনুষদের প্রায় চার হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থীর চাপ পড়ে চালু থাকা একটি লিফটের ওপরই। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সেই লিফটটিও মাঝেমধ্যে বন্ধ থাকায় তখন ৪র্থ কিংবা ৫ম তলায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। গত রবিবার (১৩ জুলাই) বৈদ্যুতিক সংযোগ না থাকায় চলাচলের মাঝপথে লিফট আটকে গিয়ে এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট আটকে থাকে এই ভবনের একটি লিফট। এর ফলে নতুন করে আবারও পুরাতন লিফট আতঙ্ক জেকে বসেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
ওয়াজেদ ভবনের পাশাপাশি নতুন নির্মিত কুদরাত-এ-খুদা একাডেমিক ভবনের লিফটও যেনো আতঙ্কের আরেক নাম শিক্ষার্থীদের কাছে। কয়েকদিন পরপরই চলাচলের মাঝপথে শিক্ষার্থীদের নিয়ে লিফট আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটে এই ভবনে। লিফটের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোন লিফট অপারেটর না থাকায় এমন অবস্থায় ঝুকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। তবে বারবার লিফট আটকালেও এখনও পর্যন্ত কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে। ফলে ঝুঁকি এবং আতঙ্ক দিন দিন বেড়েই চলেছে।
লিফটের এমন অবস্থা নিয়ে নিজেদের মতামত জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রায়ই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এক শিক্ষার্থী বলেন, এই লিফটগুলো প্রায়ই আটকে থাকে। প্রশাসনের দায়িত্বহীনতায় আমাদের জীবন হুমকির মুখোমুখি হয়। কুদরাত-এ-খুদা ভবনে বিভিন্ন ফ্লোরে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস করে, কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ গেলে কি প্রশাসনের টনক নড়বে নাকি এর আগেই প্রশাসন তার দায়িত্ব পালন করবে? প্রশাসনের এমন দায়িত্বহীনতায় কোনো শিক্ষার্থীর বিন্দুমাত্র ক্ষতি হলে এর সম্পূর্ণ দায় প্রশাসনকে নিতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হাবিপ্রবি শাখার আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন তপু লিফট আটকে যাওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যদি একটা শিক্ষার্থীর কোনো ক্ষতি হয় তাহলে পুরো দায়ভার প্রশাসন কে নিতে হবে। বারবার বলার পরও, ফেসবুকে অনেক লেখালেখির পরও নিশ্চুপ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এনারা শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু না করলেও তাদের শিক্ষক রাজনীতি ১০০/১০০ চলছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী শাখার নিয়ন্ত্রক তারিকুল ইসলাম বলেন, ওয়াজেদ ভবনের লিফটের জন্য অটো রেস্কিউ ডিভাইসের ব্যবস্থা করলে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও আর আটকাবেনা। এ ডিভাইসের ব্যবস্থা করার জন্য আমাদেরকে ফাইল রেডি করে পাঠাতে বলা হয়েছে। ফাইল অনুমোদনের পর এ ডিভাইস পেলে আশা করি ওয়াজেদ ভবনের লিফটে আর সমস্যা থাকবেনা।
তিনি আরও বলেন, কুদরাত-এ-খুদা বিল্ডিংয়ে শিক্ষকদের একটি লিফটে সমস্যা ছিল সেটা ঠিক করা হয়েছে। এই ভবনে যে ছয়টি লিফট আছে সেগুলো একসঙ্গে চালানো হয় না। অতিরিক্ত চাপ এড়াতে অল্টারনেট করে চালানো হয়। লিফটের সব সমস্যা সমাধান করতে আমরা নির্দিষ্ট সেকশনে ফাইল করে প্রস্তাব পাঠাচ্ছি।
কতদিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাজ সমস্যা সমাধানের জন্য ফাইল তৈরি করে পাঠানো। এটা অনুমোদন হয়ে আসার ব্যাপার আছে, অনুমোদন না হলে আমরা কাজ শুরু করতে পারবোনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে অফিসারদের আন্দোলন চলছে তারপরও আমরা ফাইল পাঠিয়েছি, আশা করবো দ্রুতই সমাধান হবে।