কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিলের বন্দুক হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে সামরিক উত্তেজনা দেখা দেয়। ওই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় দু’দেশ একে অপরের শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যার ফলে যুদ্ধাবস্থার আশঙ্কা তৈরি হয়। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ১০ মে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তখন দাবি করেন, এই যুদ্ধবিরতিতে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তবে ভারত এই দাবি পুরোপুরি অস্বীকার করেছে।
সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, যুদ্ধবিরতি কোনো আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার ফলে হয়নি। ভারত ও পাকিস্তান নিজেদের মধ্যে সরাসরি আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।
জয়শঙ্করের ভাষায়, ১০ মে পাকিস্তান থেকেই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আসে। তারা হটলাইনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানায়, গোলাগুলি বন্ধে তারা রাজি।
তিনি আরও জানান, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনার সঙ্গে সরাসরি কথা বলে এই বিষয়ে সম্মতি জানায়।
সাক্ষাৎকারে জয়শঙ্কর স্বীকার করেন, সংঘাত চলাকালীন সময় বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও ফোন এসেছিল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স যোগাযোগ করেন। তবে তিনি স্পষ্ট করে দেন, এই আলোচনায় কোনো তৃতীয় পক্ষ বা আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার ভূমিকা ছিল না।
‘আমরা সবার কাছে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলাম- যদি পাকিস্তান থামতে চায়, সেটা আমাদেরই জানাতে হবে, অন্য কারও নয়,’ বলেন জয়শঙ্কর।
তিনি ট্রাম্পের দাবিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘এটা পুরোপুরি আমাদের এবং পাকিস্তানের মধ্যকার বিষয়। কাশ্মীর ইস্যুতে কোনো মধ্যস্থতার প্রস্তাবও গ্রহণযোগ্য নয়।’
জয়শঙ্করের মতে, ভারত কেবল দুটি বিষয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী-এক, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং দুই, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ভারতের কাছে হস্তান্তর।
জয়শঙ্কর আরও বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে ফোন এসেছিল, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু সংঘাত থামানো এবং যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত কেবল ভারত ও পাকিস্তানের পারস্পরিক আলোচনার ফল।
উল্লেখ্য, ৬ ও ৭ মে রাতের দিকে ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। নয়াদিল্লির দাবি, তারা পহেলগাম হামলার প্রতিশোধ হিসেবে এই সামরিক অভিযান চালিয়েছে। পরে পাকিস্তান পাল্টা জবাব দিলে সংঘাত আরও বেড়ে যায়।
তবে সব উত্তেজনার অবসান ঘটে ১০ মে, যখন যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। সেই সময় ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি এবং তাঁর প্রশাসন দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু ভারত সেই দাবি পুরোপুরি নাকচ করে নিজেদের কূটনৈতিক সক্ষমতার ওপরই ভরসা রাখার বার্তা দিল।