শিরোনাম :
Logo মুন্সিগঞ্জে আড়িয়াল বিলে ধান কাটার উদ্ধোধনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও শিল্প উপদেষ্টার পরিদর্শন। Logo হাবিপ্রবিতে আয়োজিত হলো অফিস ম্যানেজমেন্ট (প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট) Logo ছাত্রদলের অপেশাদার বিবৃতি ও সাংবাদিককে হুমকির প্রতিবাদে জাবিসাসের নিন্দা Logo হাবিপ্রবিতে রিসার্চ সোসাইটির গবেষণা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত Logo ভুল অ্যাডমিট নিয়ে আসা শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ালেন ছাত্রদল কর্মী জেমস Logo চুরির অভিযোগে কুবি শিক্ষার্থীকে পুলিশে সোপর্দ Logo জবিতে সাইকেল পার্কিংয়ে চালু হচ্ছে টোকেন ব্যবস্থা Logo রাজনীতির চেয়ারে ঘুণপোকা ধরেছে চেয়ারটি সংস্কার প্রয়োজন: চুয়াডাঙ্গায় এবি পার্টির Logo পঞ্চগড়ের বোদায় সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে ৪ অফিস দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ। Logo ইবিতে ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

ভ্যানচালক বাবার স্বপ্ন পূরণে ভর্তিযুদ্ধে শীর্ষস্থানীয় ৫বিশ্ববিদ্যালয় জয় করলো মাদ্রাসা ছাত্র সালমান

অভাবকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাওয়া এক মেধাবীর নাম মো. সালমান খন্দকার রিয়াদ। সীমাহীন আর্থিক সংকট, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর জীবনযুদ্ধে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করেও হার মানেনি সে। ভ্যানচালক বাবার ঘামে ভেজা টাকায় বই-খাতা কেনা সেই ছেলেটিই এবার জয় করে নিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধ।

শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের পিরিজপুর গ্রামের সন্তান সালমান। বাবা মো. বাবুল খন্দকার একজন ভ্যানচালক, মা মোছা. ছালেমা বেগম গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় সালমান ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতো উচ্চশিক্ষার। তবে স্বপ্ন পূরণের পথে ছিল হাজারো বাধা।

প্রথম শ্রেণি থেকেই কাকিলাকুড়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করেন সালমান। সেখান থেকেই আলিম পাস করে অংশ নেন দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায়। আর সেখানেই সৃষ্টি করেন এক অনন্য ইতিহাস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাক্রম ৬২৭, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬৪, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিটে ২০৩ ও বি ইউনিটে ২৬৬, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২৩ এবং বিইউপিতে ১৩৮তম অবস্থান অর্জন করেন এই মেধাবী ছাত্র। তার স্বপ্ন এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে একদিন দেশের জন্য কিছু করার।

সালমানের এই সাফল্যের পেছনে যেমন ছিল বাবার অমানুষিক পরিশ্রম, তেমনি ছিল ভাইয়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। পরিবারে যখন টানাপোড়েন চরমে, তখন সালমানকে উৎসাহ দিয়ে বড় ভাই বলেছিলেন, “তুই শুধু পড়, প্রয়োজনে আমি রক্ত বিক্রি করেও তোর পড়ার খরচ চালাবো।” ভাইয়ের সেই কথাই হয়ে ওঠে তার অনুপ্রেরণার উৎস।

সালমান জানায়, “বাবার সংগ্রাম, মায়ের দোয়া আর ভাইয়ের আত্মত্যাগ আমাকে এগিয়ে যেতে সাহস দিয়েছে। মাদ্রাসা থেকে এসেও যে কেউ দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নিতে পারে—আমি সেটাই প্রমাণ করতে চেয়েছি।”

এ বিষয়ে শ্রীবরদী সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রিফাত আহমেদ বলেন, “যেসব শিক্ষার্থী আর্থিক দুরবস্থাকে পড়াশোনা না করতে পারার অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে চায় তাদের জন্য সালমান একটি দৃষ্টান্তের নাম। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা সমাজের এক বাড়ে নিম্নস্তরের। একটি মলিন সাইকেলে করে প্রায় ১০ কি.মি. দূর থেকে প্রতিদিন আমার কাছে আসত পড়াশোনার আশায় আর মনিটরিং এর আশায়। সে ২০২৩ এর ফেব্রুয়ারিতে আমার তত্ত্বাবধানে আসে। আমি প্রথমেই জানতে চাই সারাদিনে কতক্ষণ পড়া হয় এভারেজে। সে ৪-৫ ঘন্টার কথা বলে। আমি বললাম যে আমার নির্দেশনা হচ্ছে প্রতিদিন ১২ ঘন্টা বা কমপক্ষে ১০ ঘন্টা পড়া আর নিয়মিত ধর্মীয় কাজ আদায় করা। জানতে চাইলাম যে সে পারবে কি না। বলল যে পারবে। এরপর থেকে প্রায় ১৮ মাস সে ধারাবাহিকভাবে আমার নির্দেশনা মেনেছে। ফলে এখন কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই তার চান্স আটকাচ্ছে না। সকল শিক্ষার্থীকে আমার একটাই পরামর্শ যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল তাদের সেটাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানোর সুযোগ নেই এবং সকলেরই এখান থেকে ধারাবাহিকতা ও আনুগত্যের যে অপরিসীম শক্তি সে বিষয়ে শিক্ষা নিতে হবে তবেই জীবনে সফলতা আসবে।”

তার এই অসামান্য অর্জনে গর্বিত পুরো পিরিজপুর গ্রাম। এলাকাবাসী বলছে, সালমান এখন শুধু একটি নাম নয়—একটি অনুপ্রেরণার প্রতীক, যার গল্প শুনে স্বপ্ন দেখতে শিখছে আরও শত তরুণ।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মুন্সিগঞ্জে আড়িয়াল বিলে ধান কাটার উদ্ধোধনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও শিল্প উপদেষ্টার পরিদর্শন।

ভ্যানচালক বাবার স্বপ্ন পূরণে ভর্তিযুদ্ধে শীর্ষস্থানীয় ৫বিশ্ববিদ্যালয় জয় করলো মাদ্রাসা ছাত্র সালমান

আপডেট সময় : ০৩:০৮:৪৬ অপরাহ্ণ, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

অভাবকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাওয়া এক মেধাবীর নাম মো. সালমান খন্দকার রিয়াদ। সীমাহীন আর্থিক সংকট, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর জীবনযুদ্ধে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করেও হার মানেনি সে। ভ্যানচালক বাবার ঘামে ভেজা টাকায় বই-খাতা কেনা সেই ছেলেটিই এবার জয় করে নিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধ।

শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের পিরিজপুর গ্রামের সন্তান সালমান। বাবা মো. বাবুল খন্দকার একজন ভ্যানচালক, মা মোছা. ছালেমা বেগম গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় সালমান ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতো উচ্চশিক্ষার। তবে স্বপ্ন পূরণের পথে ছিল হাজারো বাধা।

প্রথম শ্রেণি থেকেই কাকিলাকুড়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করেন সালমান। সেখান থেকেই আলিম পাস করে অংশ নেন দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায়। আর সেখানেই সৃষ্টি করেন এক অনন্য ইতিহাস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাক্রম ৬২৭, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬৪, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিটে ২০৩ ও বি ইউনিটে ২৬৬, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২৩ এবং বিইউপিতে ১৩৮তম অবস্থান অর্জন করেন এই মেধাবী ছাত্র। তার স্বপ্ন এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে একদিন দেশের জন্য কিছু করার।

সালমানের এই সাফল্যের পেছনে যেমন ছিল বাবার অমানুষিক পরিশ্রম, তেমনি ছিল ভাইয়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। পরিবারে যখন টানাপোড়েন চরমে, তখন সালমানকে উৎসাহ দিয়ে বড় ভাই বলেছিলেন, “তুই শুধু পড়, প্রয়োজনে আমি রক্ত বিক্রি করেও তোর পড়ার খরচ চালাবো।” ভাইয়ের সেই কথাই হয়ে ওঠে তার অনুপ্রেরণার উৎস।

সালমান জানায়, “বাবার সংগ্রাম, মায়ের দোয়া আর ভাইয়ের আত্মত্যাগ আমাকে এগিয়ে যেতে সাহস দিয়েছে। মাদ্রাসা থেকে এসেও যে কেউ দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নিতে পারে—আমি সেটাই প্রমাণ করতে চেয়েছি।”

এ বিষয়ে শ্রীবরদী সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রিফাত আহমেদ বলেন, “যেসব শিক্ষার্থী আর্থিক দুরবস্থাকে পড়াশোনা না করতে পারার অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে চায় তাদের জন্য সালমান একটি দৃষ্টান্তের নাম। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা সমাজের এক বাড়ে নিম্নস্তরের। একটি মলিন সাইকেলে করে প্রায় ১০ কি.মি. দূর থেকে প্রতিদিন আমার কাছে আসত পড়াশোনার আশায় আর মনিটরিং এর আশায়। সে ২০২৩ এর ফেব্রুয়ারিতে আমার তত্ত্বাবধানে আসে। আমি প্রথমেই জানতে চাই সারাদিনে কতক্ষণ পড়া হয় এভারেজে। সে ৪-৫ ঘন্টার কথা বলে। আমি বললাম যে আমার নির্দেশনা হচ্ছে প্রতিদিন ১২ ঘন্টা বা কমপক্ষে ১০ ঘন্টা পড়া আর নিয়মিত ধর্মীয় কাজ আদায় করা। জানতে চাইলাম যে সে পারবে কি না। বলল যে পারবে। এরপর থেকে প্রায় ১৮ মাস সে ধারাবাহিকভাবে আমার নির্দেশনা মেনেছে। ফলে এখন কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই তার চান্স আটকাচ্ছে না। সকল শিক্ষার্থীকে আমার একটাই পরামর্শ যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল তাদের সেটাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানোর সুযোগ নেই এবং সকলেরই এখান থেকে ধারাবাহিকতা ও আনুগত্যের যে অপরিসীম শক্তি সে বিষয়ে শিক্ষা নিতে হবে তবেই জীবনে সফলতা আসবে।”

তার এই অসামান্য অর্জনে গর্বিত পুরো পিরিজপুর গ্রাম। এলাকাবাসী বলছে, সালমান এখন শুধু একটি নাম নয়—একটি অনুপ্রেরণার প্রতীক, যার গল্প শুনে স্বপ্ন দেখতে শিখছে আরও শত তরুণ।