শিরোনাম :
Logo ভেড়ামারায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার Logo বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা সন্দেহে ভারতে আটক ৪৪৮ জন Logo ফ্রান্সে ভয়াবহ দাবানল, আহত শতাধিক মানুষ Logo জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে যুবককে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা Logo বীরগঞ্জে দুই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনিয়ম, ৬০ হাজার টাকা জরিমানা Logo দিনমজুরি করেও স্বপ্ন দেখেছে আইনজীবী হওয়ার, পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পেয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হলেও পড়ালেখার ভবিষ্যৎ টাকার অভাবে অনিশ্চিৎ Logo কুবিতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপনের দায়িত্বে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাকর্মীরা! Logo মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা Logo সুপারস্টার ডি এ তায়েব অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাবের আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী” শিশু শিল্পী টুনটুনির জন্মদিন উদযাপন Logo রাবিতে ডাইনিং সংকটসহ ৫ দফা দাবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের

ঝকঝকে দেশের গল্প!

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ০২:১৭:৩৯ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬
  • ৮০৭ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সে তিন ঘণ্টায় মালয়েশিয়া। তখন সন্ধ্যা। পাঁচ ঘণ্টা যাত্রাবিরতি। মধ্যরাতে আরেকটি বিমানে চড়ে জাপানের পথে উড়লাম। সৌভাগ্যবশত আসনটি জানালার পাশে। বিমানবালাদের দেওয়া ছোট কম্বলটি জড়িয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। ভোরে ঘুম-ঘুম চোখে একটা বিশাল লাল গোলক চোখে কিরণ ফেলল। চারদিকে সোনালি রঙের ছটা। শুভ্র মেঘের ভেতর থেকে ওই দৃশ্য এক কল্পলোকের ছবি। সূর্যোদয়ের দেশে প্রথম সূর্য দেখে শিহরিত হলাম। নিচে সমুদ্রে ভাসমান জাহাজ ছোট্ট একটি বিন্দুর মতো। আস্তে আস্তে বিমানটি নামছে। যেন পানিতেই পড়বে। একজন যাত্রী জানালেন, এটি কানসাই বিমানবন্দর, সমুদ্রের মাঝখানে অবস্থিত।

সকালে অবতরণ করা বিমান থেকে নেমে শাটল ট্রেনে পেঁৗছলাম ইমিগ্রেশন কাউন্টারে। আমার সঙ্গে আরও কয়েকজন বাঙালি। একে একে সবাইকে বিদায় দিয়ে আমার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষক সাইফুল ভাইয়ের গন্তব্য ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আমাকে আগেই রুট বলে দেওয়া ছিল। তবে সাইফুল ভাইয়ের একজন ল্যাবমেট তাকে নিতে আসায় এক গাড়িতেই যাত্রা।

পাহাড় ডিঙিয়ে, লোকালয় পেরিয়ে ছুটছি। রাস্তাগুলো দেখে মনে হচ্ছিল আজ সকালেই তা উদ্বোধন করা হয়েছে। আমরাই সেই রাস্তার প্রথম যাত্রী। রাস্তায় কোনো ময়লা, এমনকি এক টুকরো কাগজ পর্যন্ত নেই। প্রায় দেড় ঘণ্টা গাড়ি চলার পথ একই রকম পরিষ্কার। আমাদের দেশে প্রতি কদমে, কাগজের ঠোঙা কিংবা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ। আমরা তো অবাক হবোই।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পেঁৗছে ল্যাবমেটদের সঙ্গে দেখা করে তারপর ডরমিটরিতে। টুকটাক গোছগাছ করে ক্লান্তিতে বিছানায়। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে আমি আর সাইফুল ভাই বের হলাম কিছু কেনাকাটায়। দেশটিতে অধিকাংশ নিত্যসামগ্রীর দোকান বলতে সুপার শপকে বোঝায়। ডরমিটরি থেকে প্রায় ১০ মিনিট হাঁটার পর পেলাম একটি সুপার শপ। কেনাকাটার পর একটি স্ন্যাকসের প্যাকেট হাতে রেখে অন্যগুলোকে পলিথিন ব্যাগে ভরলাম।

আমরা দু’জন যখন হাঁটছি তখন পেছনে এক ষাটোর্ধ্ব জাপানি। আমরা স্ন্যাকস খেয়ে সদ্য দেখা জাপানের কথা ভুল গিয়ে প্যাকেটটি রাস্তায় ফেলে দিলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর পেছনে ঘুরে দেখি স্ন্যাকসের খালি প্যাকেটটি জাপানির হাতে!

তৃতীয় দিন একইভাবে অন্য একটি সুপার শপে কেনাকাটা শেষে ফিরছিলাম। কোমল পানীয় পান করে বোতলটি রাস্তার পাশে ফেলে দিতেই এক জাপানির বাধার মুখে পড়লাম। তার কথা কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। দেখি খালি বোতলটি তার হাতে। বলছেন, ‘আবু নাই আবু নাই।’ পরে বুঝেছি কথাটা হচ্ছে ‘বিপজ্জনক, বিপজ্জনক।’ ততক্ষণে আরও কিছু জাপানি জড়ো হয়েছেন। আমাদের চেহারা দেখে তারা বুঝে নিল আমরা বিদেশি। একজন এসে বললেন, ‘তুমি কোন দেশের নাগরিক?’ আমি উত্তর দেওয়ার পর কয়েকজনের প্রশ্ন, ‘তোমরা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র?’

মাথা নেড়ে সম্মতি জানানোর পর প্রথমজন বললেন, ‘তুমি একটু রাস্তার সামনে কিংবা তার চারপাশে খুঁজবে কি- কোথাও কোনো বোতল কিংবা কাগজের টুকরো আছে কি-না? তুমি কি একটিবারও মনে করনি, আমরা জাপানিরা ডাস্টবিন ছাড়া কোথাও কোনো আবর্জনা ফেলি না? এটা জাপানিদের সংস্কৃতি।’

আমি লজ্জায় অধোবদন হয়ে গেলাম। নিমিষে মলিন চেহারায় ক্ষমা চাইলাম। তারা বিষয়টি বুঝতে পেরে আর কিছু বললেন না।

এর পর আমি কয়েক দিন রাস্তা দিয়ে চলার সময় ইচ্ছা করে খুঁজে দেখেছি কোনো ময়লা, কাগজ বা প্লাস্টিকের টুুকরো পাই কি-না। না, পাইনি। যে ট্রেনেই উঠেছি, মনে হয়েছে ট্রেনটি নতুন বানানো।

বিস্কুট কিংবা কলা খাওয়ার পর আমি অনেক দিন জামা কিংবা প্যান্টের পকেটে খালি প্যাকেট বহন করে রুমে নিয়ে এসেছি। ল্যাবমেটদের কাছ থেকে জেনেছি, তারা পরিষ্কার থাকাকে নিজেদের দায়িত্ববোধ করে। এখানে নার্সারি স্কুলগুলোতে শেখায় কীভাবে স্বনির্ভর মানুষ হওয়া যায়, কীভাবে ডাস্টবিন ব্যবহার করা যায়। এ শিক্ষা শুরু হয় ৩-৪ বছর বয়স থেকে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ভেড়ামারায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

ঝকঝকে দেশের গল্প!

আপডেট সময় : ০২:১৭:৩৯ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

নিউজ ডেস্ক:

ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সে তিন ঘণ্টায় মালয়েশিয়া। তখন সন্ধ্যা। পাঁচ ঘণ্টা যাত্রাবিরতি। মধ্যরাতে আরেকটি বিমানে চড়ে জাপানের পথে উড়লাম। সৌভাগ্যবশত আসনটি জানালার পাশে। বিমানবালাদের দেওয়া ছোট কম্বলটি জড়িয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। ভোরে ঘুম-ঘুম চোখে একটা বিশাল লাল গোলক চোখে কিরণ ফেলল। চারদিকে সোনালি রঙের ছটা। শুভ্র মেঘের ভেতর থেকে ওই দৃশ্য এক কল্পলোকের ছবি। সূর্যোদয়ের দেশে প্রথম সূর্য দেখে শিহরিত হলাম। নিচে সমুদ্রে ভাসমান জাহাজ ছোট্ট একটি বিন্দুর মতো। আস্তে আস্তে বিমানটি নামছে। যেন পানিতেই পড়বে। একজন যাত্রী জানালেন, এটি কানসাই বিমানবন্দর, সমুদ্রের মাঝখানে অবস্থিত।

সকালে অবতরণ করা বিমান থেকে নেমে শাটল ট্রেনে পেঁৗছলাম ইমিগ্রেশন কাউন্টারে। আমার সঙ্গে আরও কয়েকজন বাঙালি। একে একে সবাইকে বিদায় দিয়ে আমার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষক সাইফুল ভাইয়ের গন্তব্য ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আমাকে আগেই রুট বলে দেওয়া ছিল। তবে সাইফুল ভাইয়ের একজন ল্যাবমেট তাকে নিতে আসায় এক গাড়িতেই যাত্রা।

পাহাড় ডিঙিয়ে, লোকালয় পেরিয়ে ছুটছি। রাস্তাগুলো দেখে মনে হচ্ছিল আজ সকালেই তা উদ্বোধন করা হয়েছে। আমরাই সেই রাস্তার প্রথম যাত্রী। রাস্তায় কোনো ময়লা, এমনকি এক টুকরো কাগজ পর্যন্ত নেই। প্রায় দেড় ঘণ্টা গাড়ি চলার পথ একই রকম পরিষ্কার। আমাদের দেশে প্রতি কদমে, কাগজের ঠোঙা কিংবা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ। আমরা তো অবাক হবোই।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পেঁৗছে ল্যাবমেটদের সঙ্গে দেখা করে তারপর ডরমিটরিতে। টুকটাক গোছগাছ করে ক্লান্তিতে বিছানায়। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে আমি আর সাইফুল ভাই বের হলাম কিছু কেনাকাটায়। দেশটিতে অধিকাংশ নিত্যসামগ্রীর দোকান বলতে সুপার শপকে বোঝায়। ডরমিটরি থেকে প্রায় ১০ মিনিট হাঁটার পর পেলাম একটি সুপার শপ। কেনাকাটার পর একটি স্ন্যাকসের প্যাকেট হাতে রেখে অন্যগুলোকে পলিথিন ব্যাগে ভরলাম।

আমরা দু’জন যখন হাঁটছি তখন পেছনে এক ষাটোর্ধ্ব জাপানি। আমরা স্ন্যাকস খেয়ে সদ্য দেখা জাপানের কথা ভুল গিয়ে প্যাকেটটি রাস্তায় ফেলে দিলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর পেছনে ঘুরে দেখি স্ন্যাকসের খালি প্যাকেটটি জাপানির হাতে!

তৃতীয় দিন একইভাবে অন্য একটি সুপার শপে কেনাকাটা শেষে ফিরছিলাম। কোমল পানীয় পান করে বোতলটি রাস্তার পাশে ফেলে দিতেই এক জাপানির বাধার মুখে পড়লাম। তার কথা কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। দেখি খালি বোতলটি তার হাতে। বলছেন, ‘আবু নাই আবু নাই।’ পরে বুঝেছি কথাটা হচ্ছে ‘বিপজ্জনক, বিপজ্জনক।’ ততক্ষণে আরও কিছু জাপানি জড়ো হয়েছেন। আমাদের চেহারা দেখে তারা বুঝে নিল আমরা বিদেশি। একজন এসে বললেন, ‘তুমি কোন দেশের নাগরিক?’ আমি উত্তর দেওয়ার পর কয়েকজনের প্রশ্ন, ‘তোমরা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র?’

মাথা নেড়ে সম্মতি জানানোর পর প্রথমজন বললেন, ‘তুমি একটু রাস্তার সামনে কিংবা তার চারপাশে খুঁজবে কি- কোথাও কোনো বোতল কিংবা কাগজের টুকরো আছে কি-না? তুমি কি একটিবারও মনে করনি, আমরা জাপানিরা ডাস্টবিন ছাড়া কোথাও কোনো আবর্জনা ফেলি না? এটা জাপানিদের সংস্কৃতি।’

আমি লজ্জায় অধোবদন হয়ে গেলাম। নিমিষে মলিন চেহারায় ক্ষমা চাইলাম। তারা বিষয়টি বুঝতে পেরে আর কিছু বললেন না।

এর পর আমি কয়েক দিন রাস্তা দিয়ে চলার সময় ইচ্ছা করে খুঁজে দেখেছি কোনো ময়লা, কাগজ বা প্লাস্টিকের টুুকরো পাই কি-না। না, পাইনি। যে ট্রেনেই উঠেছি, মনে হয়েছে ট্রেনটি নতুন বানানো।

বিস্কুট কিংবা কলা খাওয়ার পর আমি অনেক দিন জামা কিংবা প্যান্টের পকেটে খালি প্যাকেট বহন করে রুমে নিয়ে এসেছি। ল্যাবমেটদের কাছ থেকে জেনেছি, তারা পরিষ্কার থাকাকে নিজেদের দায়িত্ববোধ করে। এখানে নার্সারি স্কুলগুলোতে শেখায় কীভাবে স্বনির্ভর মানুষ হওয়া যায়, কীভাবে ডাস্টবিন ব্যবহার করা যায়। এ শিক্ষা শুরু হয় ৩-৪ বছর বয়স থেকে।