“দিনমজুর থেকে উদ্যোক্তা—শাহজামালের হাতে গড়া ২৫০ মানুষের কর্মসংস্থান”
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে প্রতিদিন ভোর শুরু হয় শত শত নারী শ্রমিকের ঘুমচেরা কর্মদিবস দিয়ে। কোনো বড় শিল্পাঞ্চলে নয়—নিজ গ্রামে, নিজের ঘরের এক কোণে তৈরি ছোট্ট একটি ঘরেই চলে চুল প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ। এখানেই তৈরি হয় একের পর এক রফতানিযোগ্য চুলের বান্ডিল, যার গন্তব্য বহু দূরের চীন।
এই ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তা মো. শাহজামাল (৪০)। একসময় যিনি ছিলেন দিনমজুর, ফলের ব্যবসা দিয়ে শুরু করেছিলেন পথচলা। পরে অন্যের দেখে শুরু করেন চুল ব্যবসা। সময়ের ব্যবধানে গড়ে তোলেন ১৫টি চুল কারখানা, যেখানে প্রতিদিন কাজ করছেন প্রায় ২০০ জন নারী ও ৫০ জন পুরুষ।
পুরুষরা কাজ করেন ভোর ৫টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। নারীরা কাজ করেন ভোর ৫টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত—প্রায় ৬ ঘণ্টা। কাজের ধরনে বিশেষ পার্থক্য নেই—সবই হাতে করা। নারীরা চুল ছাড়ান, জট খোলেন, গুছিয়ে রাখেন। পরে পুরুষরা সেই চুল ছেঁটে, ধুয়ে বান্ডিল তৈরি করেন।
তবু বৈষম্য থেকে যায় বেতনে।
পুরুষ শ্রমিকরা মাসে পান ১৮-২০ হাজার টাকা, আর নারী শ্রমিকরা পান মাত্র ২,৫০০ টাকা। সময়ের হিসেবে নারী শ্রমিকদের বেতন হওয়া উচিত কমপক্ষে ৮-১০ হাজার টাকা—মনে করছেন শ্রম বিশ্লেষকেরা।
নারী শ্রমিক রহিমা খাতুন বলেন,
“সকালে উঠে চুল ছাড়াতে বসি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করি হাতে। ছেলেরা তো পরে কাজটা করে, তার আগে আমরাই সব করি। এই আড়াই হাজার টাকায় সংসার চালানো খুব কষ্ট… তবুও চালিয়ে নিচ্ছি আল্লাহ ভরসা।”
আজ মো. শাহজামালের মালিকানায় বিলাসবহুল দুটি দোতলা বাড়ি, আর রয়েছে প্রায় ১৪-১৫ বিঘা জমি।
একসময় যিনি ছিলেন দিনমজুর, আজ তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। তার হাতে তৈরি হয়েছে ২৫০ মানুষের কর্মসংস্থান।
কিন্তু এই গল্পের মাঝেই রয়ে গেছে একটি প্রশ্ন—যা আজকের দিনটিতে আরও বেশি করে নাড়া দেয়।
আজ ১ মে—আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।
সারাবিশ্বে যেখানে সমান মজুরির দাবি উঠছে, সেখানে দামুড়হুদার নারীরা এখনও ঠিকে আছেন আড়াই হাজার টাকায়।
শ্রম সমান, পরিশ্রম সমান—তবু কি শুধু নারী বলেই কম পারিশ্রমিক?
এই প্রশ্নই আজ শ্রমিক দিবসের প্রতিটি স্লোগানের পেছনে গর্জে উঠছে দামুড়হুদার চুল কারখানায়।