পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের লতিফাবাদ এলাকার কৃষক হোমলা ঠাকুর নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর চিন্তায় আছেন। একটি সবজিখেতে কীটনাশক ছিটানোর সময় তিনি বলেন, যদি ভারত সিন্ধু নদীর পানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে পুরো অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে।
সিন্ধু নদ তিব্বত থেকে শুরু হয়ে পাকিস্তান হয়ে আরব সাগরে পতিত হয়। এই নদীর পানি পাকিস্তানের কৃষি এবং জীবনযাত্রার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি হয়েছিল, তা ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে একতরফাভাবে স্থগিত করেছে ভারত। ভারতের দাবি, পাকিস্তান যদি আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ বন্ধ না করে, তাহলে পানির প্রবাহে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
পানি সংকটের প্রভাব: কৃষি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপদ
পাকিস্তানের কৃষি খাতে পানি সংকটের প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে। পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষিজমি, যা প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ হেক্টর, সিন্ধু নদী ও এর শাখা নদীগুলোর পানি দিয়ে সেচ করা হয়। পানির ঘাটতি শুধু কৃষির ওপরই নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদ ভাকার আহমেদ আশঙ্কা করছেন, ‘এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যেখানে পাকিস্তান দ্রুত পানি সংকট মোকাবেলা করতে না পারলে দেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়বে।’
ভারত গত ১৯ এপ্রিল সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা ‘তাদের ইচ্ছেমতো’ সিন্ধু নদী ও এর শাখা নদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনা করতে পারবেন, বিশেষ করে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করতে। ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান কুশবিন্দর ভোহরা বলেন, ‘এখন আমরা পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে উদ্যোগ নিতে চাই, তা করতে পারব।’
পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহল এবং বিশেষজ্ঞরা চিন্তা করছেন, সিন্ধু চুক্তি থেকে ভারত সরে গেলে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে। পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলছেন, চুক্তি স্থগিতের ঘটনা একটি বিপজ্জনক নজির সৃষ্টি করবে এবং এটি ভবিষ্যতে নতুন সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
পাকিস্তানের কৃষকদের ক্ষোভ ও হতাশা
পাকিস্তানের কৃষকরা উদ্বেগের মধ্যে আছেন। সিন্ধু প্রদেশের ১৫০ একর কৃষি জমির মালিক নাদিম শাহ, যিনি আখ, গম, এবং সবজি চাষ করেন, বলেন, আমরা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখি, তবে ভারতের কার্যক্রম নিয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগ রয়েছে।
এদিকে, পাকিস্তানের গবেষক ঘাশারিব শওকত মনে করছেন, ভারতের একতরফা পদক্ষেপ পাকিস্তানে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। এ চুক্তির আওতায় থাকা নদীগুলোর পানি শুধু কৃষির জন্য নয়, বরং বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং নাগরিক জীবনযাত্রার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বব্যাংকের ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি, যেটি ভারত ও পাকিস্তানকে অভিন্ন সিন্ধু নদীর পানি ব্যবহারের একটি নির্দিষ্ট কাঠামো দিয়েছে, এখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি চুক্তি স্থগিত থাকে, তাহলে পাকিস্তানের কৃষি খাত, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপদে পড়বে।