‘আমি আরও ৩০ বছর বাঁচতে পারতাম, কিন্তু মরতে চাই’: কেন স্বেচ্ছায় মরতে চান এই কানাডীয়

নাম তার এপ্রিল হাবার্ড। একটি নাট্যশালার মঞ্চে বসে আছেন তিনি। ওই মঞ্চে তিনি অনেকবার পারফর্ম করেছেন। কিন্তু এবার ওই মঞ্চেই মৃত্যু বরণ করতে চান এপ্রিল। পরিকল্পনা করেছেন চলতি বছরের শেষ দিকে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন। সেজন্য অনুমতিও পেয়েছেন তিনি।

প্রাণঘাতী কোনো রোগে আক্রান্ত নন এপ্রিল। তবে ৩৯ বছর বয়সী এই পারফরমার ও বার্লেস্ক শিল্পী কানাডার ক্রমবর্ধমান উদার আইনের অধীন সহায়তামূলক মৃত্যুর (স্বেচ্ছায় কারও সহায়তায় যন্ত্রণাহীন মৃত্যু) অনুমোদন পেয়েছেন।

কানাডার নোভা স্কশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর হ্যালিফ্যাক্সের বাসস্টপ নাট্যশালায় বিবিসি নিউজের সঙ্গে কথা বলেন এপ্রিল। বলেন, তার আসন্ন ৪০তম জন্মদিনের ‘কয়েক মাসের মধ্যে’ তিনি ওই নাট্যশালার মঞ্চে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর পরিকল্পনা করছেন। এ সময় তার পরিবার ও বন্ধুদের একটি ছোট দল উপস্থিত থাকবে।

এপ্রিল বড় একটি আরামদায়ক বিছানায় শুয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর পরিকল্পনা করেছেন। এটিকে তিনি ‘উদ্‌যাপনের’ মুহূর্ত বলে মনে করছেন। একজন পেশাদার চিকিৎসক তার রক্তপ্রবাহে একটি প্রাণঘাতী ইনজেকশন দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করবেন। তিনি চান, মৃত্যুর সময় তার ভালোবাসার মানুষেরা যাতে তাকে ঘিরে থাকে ও জড়িয়ে থাকে। তাদের সমর্থন নিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চান তিনি।

এপ্রিল জন্ম থেকেই স্পাইনা বিফিডা নামের মেরুদণ্ডের একটি জটিল রোগে আক্রান্ত। তার মেরুদণ্ডের গোড়ায় একটি টিউমার ধরা পড়েছে। তিনি জানান, ওই টিউমারের কারণে তাকে অবিরত কাহিল করে দেওয়া যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে।

২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শক্তিশালী ব্যথানাশক নিচ্ছেন এপ্রিল। তিনি ২০২৩ সালের মার্চে মরার জন্য চিকিৎসা সহায়তার (মেইড) আবেদন করেছিলেন। শরীরে এই রোগ নিয়ে তিনি কয়েক দশক বাঁচতে পারবেন। এরপরও আবেদন করার সাত মাসের মধ্যেই তাকে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এ অনুমতি পাওয়া সম্ভব।

এপ্রিল বলেন, ‘আমার ভোগান্তি ও যন্ত্রণা ক্রমে বাড়ছে। আমার জীবনযাত্রার সেই মান নেই, যা আমাকে সুখী ও পরিপূর্ণ করে তুলতে পারবে।’

এপ্রিল যেখানে আছেন, সেখান থেকে তিন হাজার মাইল দূরে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের পার্লামেন্ট সদস্যরা সহায়তায় মৃত্যুকে বৈধ করার প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করছেন। তারা ২০২৪ সালের নভেম্বরে নীতিগতভাবে এ পরিকল্পনার সমর্থনে ভোট দিয়েছিলেন। কয়েক মাস ধরে বিস্তারিত যাচাই-বাছাই হয়েছে। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার আগে আইনসভার উভয় কক্ষে আরও ভোটের প্রয়োজন।

সমালোচকেরা বলছেন, কানাডা ‘পিচ্ছিল ঢালু জায়গার’ মতো। এর অর্থ হলো, একবার আপনি সহায়তায় মৃত্যুর আইন পাস করলে এটি অনিবার্যভাবে পরিধি বাড়াবে ও এর সুরক্ষাও কম থাকবে।

সহায়তায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উদারব্যবস্থা রয়েছে কানাডায়। নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামেও এই মৃত্যুর আইন আছে। ২০১৬ সালে তারা মেইড চালু করে। প্রাথমিকভাবে অসহনীয় যন্ত্রণার শিকার গুরুতর ও দুরারোগ্য শারীরিক অসুস্থতায় আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য এটি চালু করা হয়েছিল। ২০২১ সালে সহায়তায় মৃত্যুর জন্য প্রাণঘাতী রোগ থাকার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নেওয়া হয়। এরপর দুই বছরের মধ্যে কানাডা সরকার শারীরিক নয়; বরং শুধু মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের জন্যও মেইড উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

মেইডের বিরোধীরা বলছেন, প্রতিবন্ধী ও জটিল সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য মৃত্যুকে একটি আদর্শ বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

২০২৩ সালে কানাডায় মেইডের মাধ্যমে ১৫ হাজার ৩৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সে হিসাবে প্রতি ২০ জনে একজনের মৃত্যু হয়েছে মেইডের মাধ্যমে। ২০১৬ সাল থেকে দেশটিতে সহায়তায় মৃত্যুর হার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ। যাঁরা এই মৃত্যু বেছে নিয়েছেন, তাঁদের গড় বয়স ৭৭ বছর।

হাতে গোনা কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া সাধারণত একজন চিকিৎসক বা নার্স প্রাণঘাতী ডোজ সরবরাহ করেন। এরিক থমাস নামের এক চিকিৎসকের সঙ্গে বিবিসি কথা বলেছে। তিনি ৫৭৭ জন রোগীকে মৃত্যুবরণ করতে সাহায্য করেছেন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

‘আমি আরও ৩০ বছর বাঁচতে পারতাম, কিন্তু মরতে চাই’: কেন স্বেচ্ছায় মরতে চান এই কানাডীয়

আপডেট সময় : ০৫:৪৮:২৯ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫
নাম তার এপ্রিল হাবার্ড। একটি নাট্যশালার মঞ্চে বসে আছেন তিনি। ওই মঞ্চে তিনি অনেকবার পারফর্ম করেছেন। কিন্তু এবার ওই মঞ্চেই মৃত্যু বরণ করতে চান এপ্রিল। পরিকল্পনা করেছেন চলতি বছরের শেষ দিকে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন। সেজন্য অনুমতিও পেয়েছেন তিনি।

প্রাণঘাতী কোনো রোগে আক্রান্ত নন এপ্রিল। তবে ৩৯ বছর বয়সী এই পারফরমার ও বার্লেস্ক শিল্পী কানাডার ক্রমবর্ধমান উদার আইনের অধীন সহায়তামূলক মৃত্যুর (স্বেচ্ছায় কারও সহায়তায় যন্ত্রণাহীন মৃত্যু) অনুমোদন পেয়েছেন।

কানাডার নোভা স্কশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর হ্যালিফ্যাক্সের বাসস্টপ নাট্যশালায় বিবিসি নিউজের সঙ্গে কথা বলেন এপ্রিল। বলেন, তার আসন্ন ৪০তম জন্মদিনের ‘কয়েক মাসের মধ্যে’ তিনি ওই নাট্যশালার মঞ্চে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর পরিকল্পনা করছেন। এ সময় তার পরিবার ও বন্ধুদের একটি ছোট দল উপস্থিত থাকবে।

এপ্রিল বড় একটি আরামদায়ক বিছানায় শুয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর পরিকল্পনা করেছেন। এটিকে তিনি ‘উদ্‌যাপনের’ মুহূর্ত বলে মনে করছেন। একজন পেশাদার চিকিৎসক তার রক্তপ্রবাহে একটি প্রাণঘাতী ইনজেকশন দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করবেন। তিনি চান, মৃত্যুর সময় তার ভালোবাসার মানুষেরা যাতে তাকে ঘিরে থাকে ও জড়িয়ে থাকে। তাদের সমর্থন নিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চান তিনি।

এপ্রিল জন্ম থেকেই স্পাইনা বিফিডা নামের মেরুদণ্ডের একটি জটিল রোগে আক্রান্ত। তার মেরুদণ্ডের গোড়ায় একটি টিউমার ধরা পড়েছে। তিনি জানান, ওই টিউমারের কারণে তাকে অবিরত কাহিল করে দেওয়া যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে।

২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শক্তিশালী ব্যথানাশক নিচ্ছেন এপ্রিল। তিনি ২০২৩ সালের মার্চে মরার জন্য চিকিৎসা সহায়তার (মেইড) আবেদন করেছিলেন। শরীরে এই রোগ নিয়ে তিনি কয়েক দশক বাঁচতে পারবেন। এরপরও আবেদন করার সাত মাসের মধ্যেই তাকে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এ অনুমতি পাওয়া সম্ভব।

এপ্রিল বলেন, ‘আমার ভোগান্তি ও যন্ত্রণা ক্রমে বাড়ছে। আমার জীবনযাত্রার সেই মান নেই, যা আমাকে সুখী ও পরিপূর্ণ করে তুলতে পারবে।’

এপ্রিল যেখানে আছেন, সেখান থেকে তিন হাজার মাইল দূরে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের পার্লামেন্ট সদস্যরা সহায়তায় মৃত্যুকে বৈধ করার প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করছেন। তারা ২০২৪ সালের নভেম্বরে নীতিগতভাবে এ পরিকল্পনার সমর্থনে ভোট দিয়েছিলেন। কয়েক মাস ধরে বিস্তারিত যাচাই-বাছাই হয়েছে। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার আগে আইনসভার উভয় কক্ষে আরও ভোটের প্রয়োজন।

সমালোচকেরা বলছেন, কানাডা ‘পিচ্ছিল ঢালু জায়গার’ মতো। এর অর্থ হলো, একবার আপনি সহায়তায় মৃত্যুর আইন পাস করলে এটি অনিবার্যভাবে পরিধি বাড়াবে ও এর সুরক্ষাও কম থাকবে।

সহায়তায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উদারব্যবস্থা রয়েছে কানাডায়। নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামেও এই মৃত্যুর আইন আছে। ২০১৬ সালে তারা মেইড চালু করে। প্রাথমিকভাবে অসহনীয় যন্ত্রণার শিকার গুরুতর ও দুরারোগ্য শারীরিক অসুস্থতায় আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য এটি চালু করা হয়েছিল। ২০২১ সালে সহায়তায় মৃত্যুর জন্য প্রাণঘাতী রোগ থাকার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নেওয়া হয়। এরপর দুই বছরের মধ্যে কানাডা সরকার শারীরিক নয়; বরং শুধু মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের জন্যও মেইড উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

মেইডের বিরোধীরা বলছেন, প্রতিবন্ধী ও জটিল সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য মৃত্যুকে একটি আদর্শ বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

২০২৩ সালে কানাডায় মেইডের মাধ্যমে ১৫ হাজার ৩৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সে হিসাবে প্রতি ২০ জনে একজনের মৃত্যু হয়েছে মেইডের মাধ্যমে। ২০১৬ সাল থেকে দেশটিতে সহায়তায় মৃত্যুর হার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ। যাঁরা এই মৃত্যু বেছে নিয়েছেন, তাঁদের গড় বয়স ৭৭ বছর।

হাতে গোনা কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া সাধারণত একজন চিকিৎসক বা নার্স প্রাণঘাতী ডোজ সরবরাহ করেন। এরিক থমাস নামের এক চিকিৎসকের সঙ্গে বিবিসি কথা বলেছে। তিনি ৫৭৭ জন রোগীকে মৃত্যুবরণ করতে সাহায্য করেছেন।