শিরোনাম :
Logo বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা শহরের নিম্মাঞ্চল প্লাবিত, বিপর্যয়ের আশঙ্কা Logo চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বন্য হাতির আক্রমণে কৃষকের মৃত্যু Logo গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ১৩৮ ফিলিস্তিনি Logo ভয়াবহ দাবানলের কারণে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়েছে সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ Logo কার্নিশে ঝুলে থাকা ছাত্রকে গুলি: তদন্ত শেষ পর্যায়ে Logo ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৫৩ রানে গুটিয়ে দিয়েও অস্বস্তিতে অস্ট্রেলিয়া Logo শেখ হাসিনার মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর আশা প্রসিকিউসনের Logo দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মৎস্য সম্প্রসারণ বীজ উৎপাদনে সফলতা Logo শেরপুরে আমেরিকা প্রবাসী কামালের উদ্যোগে ফুটবল ক্লাব চালু; স্বপ্ন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার Logo পাকিস্তানে ভবন ধসে আটকে পড়াদের অনুসন্ধান চলছে

কোরআন ও হাদিসে চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ে মৌলিক নির্দেশনা

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৩:২৯:২৮ অপরাহ্ণ, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭৩১ বার পড়া হয়েছে
জার্মান গবেষক ড. কার্ল অপিটযাই তাঁর সুবিখ্যাত Die Medizin in Koran গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে কোরআনের ১১৪ সুরার মধ্যে ৯৭ সুরার ৩৫৫ আয়াত চিকিত্সা বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট। তিনি এ সকল আয়াত নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছেন। আয়াতসমূহকে তিনি ৩ ভাগে বিভক্ত করেছেন। তা হলো—

১. চিকিত্সা শাস্ত্র বিষয়ের আয়াত 
এতে আছে—
ক. সৃষ্টি, ভ্রূণ, গর্ভধারণ, গর্ভাবস্থা, শিশু পরিচর্যা, আয়তকাল ইত্যাদির আলোচনা
খ. শরীর জ্ঞান (Anatomy), শরীরবৃত্ত (Physiology) :
গ. নিদানশাস্ত্র (Pathology) নিদান (Etiology), মনন বিদ্যা (Psychology), মনমা নিদান (Psycho-Pathology)
ঘ. সাধারণ চিকিত্সা ও বিশেষ চিকিত্সা।
ঙ. মৃত্যু ও পুনর্জীবন।

২. স্বাস্থ্য বিদ্যা
ক. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি; পোশাক, বিশ্রাম, পুষ্টি, পানীয় ইত্যাদি।
খ. সমাজগত স্বাস্থ্যবিধি : ঘরবাড়ি, সংক্রামক ব্যাধি।
গ. আকস্মিক মহাদুর্ঘটনা, মহামারি।

৩. Gesundheitsgesetze তথা স্বাস্থ্যবিধান
ক. শারীরিক পুষ্টি বিধান; মদ, গোশত ইত্যাদি বিষয়ক।
খ. যৌন বিধি-বিধান, সুষ্ঠু ও অসুষ্ঠু যৌনক্রিয়া।
গ. আনুষ্ঠানিক বিধি-বিধান; ত্বকচ্ছেদ, রোজা, ওজু, গোসল, পীড়া, ক্রান্তি, বিনোদন ইত্যাদি।
ঘ. সামাজিক বিধি বিধান; হত্যা, প্রতিশোধ, অভিভাবকত্ব।

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ছয়টি পূর্বশর্ত
১. বায়ু-পরিচ্ছন্ন বায়ু স্বাস্থ্যের জন্য একান্ত প্রয়োজন;
২. খাদ্য ও পানীয়
৩. দৈহিক বিশ্রাম ও চলাফেরা
৪. ঘুম
৫. আবেগপূর্ণ বিশ্রাম ও চলাফেরা (গতিবিধি)
৬. নিঃসরণ ও ধারণ

মুসলিম চিকিত্সাবিজ্ঞানের প্রধান কয়েকটি বিষয়
১. শারীরবৃত্ত
২. অঙ্গব্যবচ্ছেদবিদ্যা
৩. রোগ নির্ণয়বিদ্যা
৪. কারণবিদ্যা (ইলমুল আসবাব)
৫. রোগ লক্ষণবিদ্যা
৬. স্বাস্থ্যবিজ্ঞান (হিফজআল সিহাহ) (শাহ আবদুল হান্নান, তাওহীদ, বিজ্ঞান ও মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান, দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২৫ আগস্ট ২০১৭, পৃ. ৬)

হাদিসে চিকিত্সাবিজ্ঞান বিষয়ে নির্দেশনা
চিকিত্সা বিজ্ঞানকে আল হাদিসে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রোগ ব্যাধি, রোগের চিকিত্সা, ঔষধ এবং সুস্বাস্থ্য সমপর্কে বিভিন্ন হাদিসে বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে। মহানবী (সা.) এর চিকিত্সা বিধান সমপর্কে অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করা হয়েছে। হাদিসের শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থ সহিহুল বুখারিতে কিতাবুত তিব্ব বা মহানবীর চিকিত্সাবিজ্ঞান শীর্ষক বিশাল অধ্যায় আছে। এ হাদিসগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় অধিকাংশই রোগ নিরাময়ের জন্য— নিবারণের ব্যবস্থা খুবই কম। তা সত্ত্বেও চিকিত্সা বিজ্ঞানকে বিশ্বনবী (সা.) যে গুরুত্ব প্রদান করেছেন তার ফল সুদূরপ্রসারী হয়েছে। অধ্যাপক ব্রাউন (Prof. Brown) বলেছেন, নবী মুহাম্মদ (সা.) চিকিত্সা বিজ্ঞানকে ধর্মের সাথে যুক্ত করে দিয়েছেন। তাঁর ভাষ্য হলো— Prophet Muhammad is a traditions familiar to all muslims is said to have linked medicine in importance with theology
বিভিন্ন রোগের চিকিত্সা সমপর্কে মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনা ছিল নিম্নরূপ।

রোগ নিরাময় পদ্ধতি : রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা হিসেবে মহানবী (সা.) মোটামুটি ৫টি পদ্ধতি ব্যবহারের উল্লেখ করেছেন।
১। হাজামত বা রক্তমোক্ষণ পদ্ধতি
২। লোলুদ বা মুখ দিয়ে ওষুধ ব্যবহার;
৩। সাউত বা নাক দিয়ে ওষুধ ব্যবহার।
৪। মাসিঈ বা পেটের বিশোধনের জন্য ওষুধ ব্যবহার।
৫। কাওয়াই তথ্য লোহা পুড়িয়ে ছ্যাকা দেওয়া।

আর ঔষধ হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন—১. মধু; ২. কালজিরা; ৩. সামুদ্রিক কুস্তা বা বুড়; ৪. মেহেদি; ৫. খেজুর; ৬. জলপাই; ৭. কাকরোল; ৮. মক্কার সোনামুখী গাছ, ৯. মান্না-ব্যাঙের ছাতার মতো এক
প্রকার উদ্ভিদ; ১০. ঘৃতকুমারী (মুসব্বর); ১১. এস্টেমনী; ১২. মৌরী; ১৩. মাদুরের পোড়া ছাই; ১৪. উটের দুধ প্রভৃতি।
সাধারণত জ্বর, মাথাধরা, চোখ উঠা, কুষ্ঠ, পুরিসি ইত্যাদি রোগের ঔষধ হিসেবে উক্ত জিনিসগুলো ব্যবহূত হয়েছে। (সূত্র : ইসলামের ধর্মীয় নীতি ও প্রতিষ্ঠাসমূহ এবং সাহিত্য ও বিজ্ঞানের ক্রমোন্নতি, ড. মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম)

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা শহরের নিম্মাঞ্চল প্লাবিত, বিপর্যয়ের আশঙ্কা

কোরআন ও হাদিসে চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ে মৌলিক নির্দেশনা

আপডেট সময় : ০৩:২৯:২৮ অপরাহ্ণ, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
জার্মান গবেষক ড. কার্ল অপিটযাই তাঁর সুবিখ্যাত Die Medizin in Koran গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে কোরআনের ১১৪ সুরার মধ্যে ৯৭ সুরার ৩৫৫ আয়াত চিকিত্সা বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট। তিনি এ সকল আয়াত নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছেন। আয়াতসমূহকে তিনি ৩ ভাগে বিভক্ত করেছেন। তা হলো—

১. চিকিত্সা শাস্ত্র বিষয়ের আয়াত 
এতে আছে—
ক. সৃষ্টি, ভ্রূণ, গর্ভধারণ, গর্ভাবস্থা, শিশু পরিচর্যা, আয়তকাল ইত্যাদির আলোচনা
খ. শরীর জ্ঞান (Anatomy), শরীরবৃত্ত (Physiology) :
গ. নিদানশাস্ত্র (Pathology) নিদান (Etiology), মনন বিদ্যা (Psychology), মনমা নিদান (Psycho-Pathology)
ঘ. সাধারণ চিকিত্সা ও বিশেষ চিকিত্সা।
ঙ. মৃত্যু ও পুনর্জীবন।

২. স্বাস্থ্য বিদ্যা
ক. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি; পোশাক, বিশ্রাম, পুষ্টি, পানীয় ইত্যাদি।
খ. সমাজগত স্বাস্থ্যবিধি : ঘরবাড়ি, সংক্রামক ব্যাধি।
গ. আকস্মিক মহাদুর্ঘটনা, মহামারি।

৩. Gesundheitsgesetze তথা স্বাস্থ্যবিধান
ক. শারীরিক পুষ্টি বিধান; মদ, গোশত ইত্যাদি বিষয়ক।
খ. যৌন বিধি-বিধান, সুষ্ঠু ও অসুষ্ঠু যৌনক্রিয়া।
গ. আনুষ্ঠানিক বিধি-বিধান; ত্বকচ্ছেদ, রোজা, ওজু, গোসল, পীড়া, ক্রান্তি, বিনোদন ইত্যাদি।
ঘ. সামাজিক বিধি বিধান; হত্যা, প্রতিশোধ, অভিভাবকত্ব।

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ছয়টি পূর্বশর্ত
১. বায়ু-পরিচ্ছন্ন বায়ু স্বাস্থ্যের জন্য একান্ত প্রয়োজন;
২. খাদ্য ও পানীয়
৩. দৈহিক বিশ্রাম ও চলাফেরা
৪. ঘুম
৫. আবেগপূর্ণ বিশ্রাম ও চলাফেরা (গতিবিধি)
৬. নিঃসরণ ও ধারণ

মুসলিম চিকিত্সাবিজ্ঞানের প্রধান কয়েকটি বিষয়
১. শারীরবৃত্ত
২. অঙ্গব্যবচ্ছেদবিদ্যা
৩. রোগ নির্ণয়বিদ্যা
৪. কারণবিদ্যা (ইলমুল আসবাব)
৫. রোগ লক্ষণবিদ্যা
৬. স্বাস্থ্যবিজ্ঞান (হিফজআল সিহাহ) (শাহ আবদুল হান্নান, তাওহীদ, বিজ্ঞান ও মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান, দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২৫ আগস্ট ২০১৭, পৃ. ৬)

হাদিসে চিকিত্সাবিজ্ঞান বিষয়ে নির্দেশনা
চিকিত্সা বিজ্ঞানকে আল হাদিসে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রোগ ব্যাধি, রোগের চিকিত্সা, ঔষধ এবং সুস্বাস্থ্য সমপর্কে বিভিন্ন হাদিসে বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে। মহানবী (সা.) এর চিকিত্সা বিধান সমপর্কে অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করা হয়েছে। হাদিসের শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থ সহিহুল বুখারিতে কিতাবুত তিব্ব বা মহানবীর চিকিত্সাবিজ্ঞান শীর্ষক বিশাল অধ্যায় আছে। এ হাদিসগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় অধিকাংশই রোগ নিরাময়ের জন্য— নিবারণের ব্যবস্থা খুবই কম। তা সত্ত্বেও চিকিত্সা বিজ্ঞানকে বিশ্বনবী (সা.) যে গুরুত্ব প্রদান করেছেন তার ফল সুদূরপ্রসারী হয়েছে। অধ্যাপক ব্রাউন (Prof. Brown) বলেছেন, নবী মুহাম্মদ (সা.) চিকিত্সা বিজ্ঞানকে ধর্মের সাথে যুক্ত করে দিয়েছেন। তাঁর ভাষ্য হলো— Prophet Muhammad is a traditions familiar to all muslims is said to have linked medicine in importance with theology
বিভিন্ন রোগের চিকিত্সা সমপর্কে মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনা ছিল নিম্নরূপ।

রোগ নিরাময় পদ্ধতি : রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা হিসেবে মহানবী (সা.) মোটামুটি ৫টি পদ্ধতি ব্যবহারের উল্লেখ করেছেন।
১। হাজামত বা রক্তমোক্ষণ পদ্ধতি
২। লোলুদ বা মুখ দিয়ে ওষুধ ব্যবহার;
৩। সাউত বা নাক দিয়ে ওষুধ ব্যবহার।
৪। মাসিঈ বা পেটের বিশোধনের জন্য ওষুধ ব্যবহার।
৫। কাওয়াই তথ্য লোহা পুড়িয়ে ছ্যাকা দেওয়া।

আর ঔষধ হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন—১. মধু; ২. কালজিরা; ৩. সামুদ্রিক কুস্তা বা বুড়; ৪. মেহেদি; ৫. খেজুর; ৬. জলপাই; ৭. কাকরোল; ৮. মক্কার সোনামুখী গাছ, ৯. মান্না-ব্যাঙের ছাতার মতো এক
প্রকার উদ্ভিদ; ১০. ঘৃতকুমারী (মুসব্বর); ১১. এস্টেমনী; ১২. মৌরী; ১৩. মাদুরের পোড়া ছাই; ১৪. উটের দুধ প্রভৃতি।
সাধারণত জ্বর, মাথাধরা, চোখ উঠা, কুষ্ঠ, পুরিসি ইত্যাদি রোগের ঔষধ হিসেবে উক্ত জিনিসগুলো ব্যবহূত হয়েছে। (সূত্র : ইসলামের ধর্মীয় নীতি ও প্রতিষ্ঠাসমূহ এবং সাহিত্য ও বিজ্ঞানের ক্রমোন্নতি, ড. মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম)