শিরোনাম :
Logo বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন। Logo টাকার জন্য হরিদাস বাবু’কে হয়রানী তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার অনুসন্ধানে প্রমাণ। Logo খুবির সঙ্গে গবেষণা সহযোগিতায় আগ্রহ জাপানি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের Logo শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে ট্রাকের ধাক্কায় এনজিও কর্মীর মৃত্যু Logo সাতক্ষীরায় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ তরুণী, থানায় সাধারণ ডায়েরি Logo আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কয়রায় র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo দর্শনা থানা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান, ৪ কেজি গাঁজাসহ আটক ১ Logo জীবননগরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২৫ উদযাপন Logo আইএফএডিকে বাংলাদেশের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার Logo চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিষাক্ত মদপানে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

নেতা হিসেবে যেমন ছিলেন সাঈদ জুমাহি (রা.)

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৩:৩৭:৩২ অপরাহ্ণ, শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ৭৩২ বার পড়া হয়েছে
নবীজির অন্যতম দুনিয়াবিমুখ সাহাবি সাঈদ ইবনে আমির আল-জুমাহি (রা.)। তাঁর বংশমূলে ষষ্ঠ পুরুষ ‘জুমাহ ইবনে আমর’-এর দিকে সম্পর্ক করে তাঁকে ‘জুমাহি’ বলা হয়। তাঁর চোখের সামনেই কাফেররা নির্মম ভাবে খুবাইব (রা.)-এর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। আর সেটিই তাঁর ইসলামগ্রহণের মাধ্যম হয়।

বদর যুদ্ধে মক্কার কাফিরদের বহু নেতা প্রাণ হারায়। তার প্রতিশোধ গ্রহণ করার হীন মানসে তারা খুবাইব (রা.)-কে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। সে হত্যা কার্যকর করেছিল তারা বিশাল আয়োজনের মাধ্যমে, লোক-সমাবেশের উপস্থিতিতে। খুবাইব (রা.)-কে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে তারা বিশেষ পুলক অনুভব করেছিল। সেদিন দর্শকদের কাতারে ছিলেন এই সাঈদ ইবনে আমির (রা.)-ও। তাঁর বয়স তখন ২৩/২৪ বছর। একজন অসহায় মানুষের উপর পেশীবাদীদের এমন নিষ্ঠুর আচরণে সেদিন কারও পাষাণ হূদয় কেঁপেছে কি না-সেটা তাঁর জানা ছিল না। কিন্তু তাঁর হূদয়জগত কেঁপেছে। অন্তররাজ্য চুরমার হয়েছে। ধাক্কা লেগেছে তাঁর বিবেকে। অবশেষে কিছু দিনের মধ্যেই তিনি কলেমা পড়েন ইসলামের; শপথ নেন ঈমানের। তখনো খাইবারের যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। অতপর মক্কা ছেড়ে পথ ধরেন মদিনার। সঙ্গী হন প্রিয় নবীর। অংশগ্রহণ করেন খাইবার যুদ্ধে। পরবর্তী সকল যুদ্ধেও শরিক থাকেন রাসুল (সা.)-এর সাথে। (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা : ৪/২০৩)

দুনিয়ার আসবাব-পত্র ও ভোগ-বিলাসের প্রতি আকর্ষণ বলতে কিছুই ছিল না সাঈদ ইবনে আমির (রা.)-এর। অর্থসম্পদ দেখলে আকৃষ্ট হওয়ার পরিবর্তে আঁঁতকে উঠতেন। ভয় করতেন, না জানি এই অর্থ পরকালীন জীবনের জন্য বিপদের কারণ হয়। উমার (রা.) এর পক্ষ থেকে তিনি সিরিয়ার ‘হিমস’-এর গভর্নর ছিলেন। রাষ্ট্রীয় একজন দায়িত্বশীল হওয়া সত্ত্বেও তাঁর আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। একবার হজরত উমার (রা.) তাঁকে দশ হাজার দিরহাম দিয়ে বললেন, পরিবারের জন্য একটু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করুন। তিনি বললেন, যারা আমার থেকে বেশি অভাবী তাদেরকে দিন; আমার প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নিয়মিত যে ভাতা পেতেন, তা থেকে পারিবারিক খরচের জন্য যত্সামান্য রেখে বাকিটুকু গরিব-মিসকিনের মাঝে বণ্টন করে দিতেন। (আল-ইসাবাহ : ৩/৯৩, ক্র.৩২৮০)

তিনি কতটা সাধাসিধে ছিলেন একটি ঘটনা তার আরো স্পষ্ট করে দেয়। একবার হিমসবাসী উমার (রা.)-এর কাছে তাঁর বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ করলেন।

অভিযোগগুলো ছিল,

১. প্রতিদিন তিনি বাড়ি থেকে দেরিতে করে বের হন।
২. রাতের বেলা কাউকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন না।
৩. প্রতি মাসে দুই দিন তাঁকে দেখা যায় না।
৪. মাঝে মধ্যে মজলিসেও সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।
খলিফা উমার (রা.) একে একে প্রতিটি অভিযোগের কারণ জানতে চাইলেন সাঈদ (রা.)-এর কাছে। সাঈদ (রা.) বললেন, বিষয়গুলো আমি প্রকাশ করতে ইচ্ছুক না। আপনি যখন জিজ্ঞেস করছেন, না বলে আর উপায় নেই। এই বলে ধারাবাহিকভাবে অভিযোগগুলোর জবাব দিয়ে গেলেন। যথাক্রমে :
১. আমার কোনো খাদেম নেই। নিজ হাতেই খাবার প্রস্তুত করি। এরপর চাশতের নামাজ পড়ে প্রজাদের কাজে বের হই।
২. দিনের বেলায় আমি ব্যস্ত থাকি প্রজাদের কাজে। তাই রাতে মিলিত হই প্রভুর সনে। এ কারণে কাউকে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে পারি না।
৩. আমার অতিরিক্ত কাপড় নেই; আবার খাদেমও নেই। নিজের কাপড় নিজেই ধুই। মাসে দুই দিন কাপড় ধুই। দিনের শুরুরে ধুয়ে দিই। শুকানোর অপেক্ষায় থাকি। ফলে দিনের শুরুরে কারও সাথে সাক্ষাতে মিলিত হতে পারি না। অবশ্য, দিনের শেষের দিকে বের হই।
৪. ইসলামগ্রহণের পূর্বে আমি খুবাইবের মৃত্যুদণ্ডের করণীয় দৃশ্য দেখেছিলাম। কাফিররা কতো নিষ্ঠুরভাবে তাঁকে হত্যা করেছিল। সে দৃশ্য এখনো আমি ভুলতে পারি না। যখনি সে দৃশ্য আমার স্মৃতিপটে ভেসে উঠে, আমি স্থির থাকতে পারি না; সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি।
খলিফা উমার (রা.) তাঁর কথাগুলো শুনে যারপর নাই আনন্দিত হয়ে তাঁকে বুকে জড়িয়ে নিলেন এবং তাঁর কপালে চুমু খেলেন। (রিজালুন হাওলার রাসুল : ১/১১৭)

ইন্তিকাল
ইবনে সাদ (রহ.) বলেন, সাঈদ ইবনে আমির (রা.) দ্বিতীয় খলিফা উমার (রা.)-এর খেলাফতামলে ২০ হিজরি সনে ইন্তিকাল করেন। আল-ইসতিআব গ্রন্থকার ইবনে আবদুল বার (রহ.) বলেন, কেউ ১৯ হিজরির, কেউ ২১ হিজরির কথাও বলেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৪০ বছর। (আত-তাবাক্বাতুল কুবরা : ৭/২৮০, আল-ইসতিআব : ২/৬২৫)

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন।

নেতা হিসেবে যেমন ছিলেন সাঈদ জুমাহি (রা.)

আপডেট সময় : ০৩:৩৭:৩২ অপরাহ্ণ, শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নবীজির অন্যতম দুনিয়াবিমুখ সাহাবি সাঈদ ইবনে আমির আল-জুমাহি (রা.)। তাঁর বংশমূলে ষষ্ঠ পুরুষ ‘জুমাহ ইবনে আমর’-এর দিকে সম্পর্ক করে তাঁকে ‘জুমাহি’ বলা হয়। তাঁর চোখের সামনেই কাফেররা নির্মম ভাবে খুবাইব (রা.)-এর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। আর সেটিই তাঁর ইসলামগ্রহণের মাধ্যম হয়।

বদর যুদ্ধে মক্কার কাফিরদের বহু নেতা প্রাণ হারায়। তার প্রতিশোধ গ্রহণ করার হীন মানসে তারা খুবাইব (রা.)-কে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। সে হত্যা কার্যকর করেছিল তারা বিশাল আয়োজনের মাধ্যমে, লোক-সমাবেশের উপস্থিতিতে। খুবাইব (রা.)-কে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে তারা বিশেষ পুলক অনুভব করেছিল। সেদিন দর্শকদের কাতারে ছিলেন এই সাঈদ ইবনে আমির (রা.)-ও। তাঁর বয়স তখন ২৩/২৪ বছর। একজন অসহায় মানুষের উপর পেশীবাদীদের এমন নিষ্ঠুর আচরণে সেদিন কারও পাষাণ হূদয় কেঁপেছে কি না-সেটা তাঁর জানা ছিল না। কিন্তু তাঁর হূদয়জগত কেঁপেছে। অন্তররাজ্য চুরমার হয়েছে। ধাক্কা লেগেছে তাঁর বিবেকে। অবশেষে কিছু দিনের মধ্যেই তিনি কলেমা পড়েন ইসলামের; শপথ নেন ঈমানের। তখনো খাইবারের যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। অতপর মক্কা ছেড়ে পথ ধরেন মদিনার। সঙ্গী হন প্রিয় নবীর। অংশগ্রহণ করেন খাইবার যুদ্ধে। পরবর্তী সকল যুদ্ধেও শরিক থাকেন রাসুল (সা.)-এর সাথে। (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা : ৪/২০৩)

দুনিয়ার আসবাব-পত্র ও ভোগ-বিলাসের প্রতি আকর্ষণ বলতে কিছুই ছিল না সাঈদ ইবনে আমির (রা.)-এর। অর্থসম্পদ দেখলে আকৃষ্ট হওয়ার পরিবর্তে আঁঁতকে উঠতেন। ভয় করতেন, না জানি এই অর্থ পরকালীন জীবনের জন্য বিপদের কারণ হয়। উমার (রা.) এর পক্ষ থেকে তিনি সিরিয়ার ‘হিমস’-এর গভর্নর ছিলেন। রাষ্ট্রীয় একজন দায়িত্বশীল হওয়া সত্ত্বেও তাঁর আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। একবার হজরত উমার (রা.) তাঁকে দশ হাজার দিরহাম দিয়ে বললেন, পরিবারের জন্য একটু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করুন। তিনি বললেন, যারা আমার থেকে বেশি অভাবী তাদেরকে দিন; আমার প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নিয়মিত যে ভাতা পেতেন, তা থেকে পারিবারিক খরচের জন্য যত্সামান্য রেখে বাকিটুকু গরিব-মিসকিনের মাঝে বণ্টন করে দিতেন। (আল-ইসাবাহ : ৩/৯৩, ক্র.৩২৮০)

তিনি কতটা সাধাসিধে ছিলেন একটি ঘটনা তার আরো স্পষ্ট করে দেয়। একবার হিমসবাসী উমার (রা.)-এর কাছে তাঁর বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ করলেন।

অভিযোগগুলো ছিল,

১. প্রতিদিন তিনি বাড়ি থেকে দেরিতে করে বের হন।
২. রাতের বেলা কাউকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন না।
৩. প্রতি মাসে দুই দিন তাঁকে দেখা যায় না।
৪. মাঝে মধ্যে মজলিসেও সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।
খলিফা উমার (রা.) একে একে প্রতিটি অভিযোগের কারণ জানতে চাইলেন সাঈদ (রা.)-এর কাছে। সাঈদ (রা.) বললেন, বিষয়গুলো আমি প্রকাশ করতে ইচ্ছুক না। আপনি যখন জিজ্ঞেস করছেন, না বলে আর উপায় নেই। এই বলে ধারাবাহিকভাবে অভিযোগগুলোর জবাব দিয়ে গেলেন। যথাক্রমে :
১. আমার কোনো খাদেম নেই। নিজ হাতেই খাবার প্রস্তুত করি। এরপর চাশতের নামাজ পড়ে প্রজাদের কাজে বের হই।
২. দিনের বেলায় আমি ব্যস্ত থাকি প্রজাদের কাজে। তাই রাতে মিলিত হই প্রভুর সনে। এ কারণে কাউকে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে পারি না।
৩. আমার অতিরিক্ত কাপড় নেই; আবার খাদেমও নেই। নিজের কাপড় নিজেই ধুই। মাসে দুই দিন কাপড় ধুই। দিনের শুরুরে ধুয়ে দিই। শুকানোর অপেক্ষায় থাকি। ফলে দিনের শুরুরে কারও সাথে সাক্ষাতে মিলিত হতে পারি না। অবশ্য, দিনের শেষের দিকে বের হই।
৪. ইসলামগ্রহণের পূর্বে আমি খুবাইবের মৃত্যুদণ্ডের করণীয় দৃশ্য দেখেছিলাম। কাফিররা কতো নিষ্ঠুরভাবে তাঁকে হত্যা করেছিল। সে দৃশ্য এখনো আমি ভুলতে পারি না। যখনি সে দৃশ্য আমার স্মৃতিপটে ভেসে উঠে, আমি স্থির থাকতে পারি না; সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি।
খলিফা উমার (রা.) তাঁর কথাগুলো শুনে যারপর নাই আনন্দিত হয়ে তাঁকে বুকে জড়িয়ে নিলেন এবং তাঁর কপালে চুমু খেলেন। (রিজালুন হাওলার রাসুল : ১/১১৭)

ইন্তিকাল
ইবনে সাদ (রহ.) বলেন, সাঈদ ইবনে আমির (রা.) দ্বিতীয় খলিফা উমার (রা.)-এর খেলাফতামলে ২০ হিজরি সনে ইন্তিকাল করেন। আল-ইসতিআব গ্রন্থকার ইবনে আবদুল বার (রহ.) বলেন, কেউ ১৯ হিজরির, কেউ ২১ হিজরির কথাও বলেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৪০ বছর। (আত-তাবাক্বাতুল কুবরা : ৭/২৮০, আল-ইসতিআব : ২/৬২৫)