কিশোরগঞ্জ থেকে নিখোঁজের ২৫ বছর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে পরিবারের দেখা পেয়েছেন

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৩:৩৫:২৯ অপরাহ্ণ, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪
  • ৭২৬ বার পড়া হয়েছে

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

জাহানারা বেগম (৬০) নামের এক নারী। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া এলাকায় ২৫ বছর পর তার ছোট মেয়ে হাসি বেগমসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয় জাহানারা বেগমের।

জাহানারা বেগম ১৯৯৯ সালে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ৩ বছরের ছোট ছেলে ছায়দুলকে সাথে নিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন। ১০ বছর আগে ছায়দুলকেও খুঁজে পায় তার পরিবার।

জাহানারা বেগম বরগুনা সদর উপজেলার ঘটবাড়িয়া গ্রামের আবদুল লতিফ ফরায়েজীর স্ত্রী এবং ৫ সন্তানের জননী।

জানা যায়, গত ১৫-২০ দিন ধরে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া বাজারে জাহানারা বেগমকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছিল। পরে জাঙ্গালিয়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আশরাফুল আলম রিপন তাকে তার বাড়িতে নিয়ে রাখেন। বাড়িতে নিয়ে তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়।

মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় ঠিকমতো পরিবারের নাম-ঠিকানাও বলতে পারছিলেন না তিনি। শুধু বোঝা যাচ্ছিল ‘বরগুনা এবং ঘটবাড়িয়া’ শব্দগুলো। তখন আশরাফুল আলম রিপন ঢাকায় তার ছেলে শাহরিয়ার হৃদয়কে জানায়। হৃদয় বরগুনায় তার পরিচিত একজনকে জাহানারা বেগমের কথা জানায় ও তার কয়েকটি ছবি পাঠায়। সেই ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জাহানারা বেগমের ছবিসহ পোস্ট দেয়। এর পরই বরগুনা থেকে তার স্বজনরা যোগাযোগ করেন আশরাফুল আলম রিপনের সঙ্গে।

জাহানারা বেগমের ভগ্নিপতি মোস্তফা মির্জা বলেন, আজ থেকে ২৫ বছর আগে জাহানারা বেগম তার ৩ বছরের ছোট ছেলে ছায়দুলকে সঙ্গে নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে লঞ্চযোগে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় যাচ্ছিলেন। ভোরে সদরঘাটে লঞ্চ থেকে নেমে তিনি ছেলেকে রেখে টয়লেটে যান। টয়লেট থেকে বের হয়ে আর ছেলেকে পাননি। এর পর থেকে তাকেও আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আত্মীয়-স্বজনের বাসাসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। হারিয়ে যাওয়া ছোট ছেলে ছায়দুলকেও ১০ বছর আগে খুঁজে পেয়েছে তার পরিবার।

ছোট মেয়ে হাসি বেগম বলেন, মা যখন নিখোঁজ হয় তখন আমার বয়স ৫ বছরের মতো। ২৫ বছর ধরে মাকে খুঁজে বেড়িয়েছি অনেক জায়গায়। কল্পনাতেও ভাবিনি মাকে খুঁজে পাবো। মাকে ফিরে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসি বেগম।

জাঙ্গালিয়া বাজার কমিটির সভাপতি আশরাফুল আলম রিপন বলেন, গত ১৫-২০ দিন ধরে এই মহিলা আমার দোকানের সামনে অবস্থান করছিলেন। পরে তাকে ৫-৬ দিন আগে আমার বাড়িতে নিয়ে রাখি। তার কিছু ছবি তুলে আমার ছেলে শাহরিয়ার হৃদয়ের কাছে পাঠানো হয়। সে বরগুনার পরিচিত একজনকে দিলে ওই ব্যক্তি জাহানারা বেগমের ছবিগুলো ফেসবুক পোস্ট করলে তার পরিবার তাকে চিনতে পারেন। আজকে তারা আমার বাড়িতে এসে তাকে নিয়ে যায়। এত বছর পর জাহানারা বেগমকে তার মেয়ের হাতে তুলে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কিশোরগঞ্জ থেকে নিখোঁজের ২৫ বছর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে পরিবারের দেখা পেয়েছেন

আপডেট সময় : ০৩:৩৫:২৯ অপরাহ্ণ, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

জাহানারা বেগম (৬০) নামের এক নারী। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া এলাকায় ২৫ বছর পর তার ছোট মেয়ে হাসি বেগমসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয় জাহানারা বেগমের।

জাহানারা বেগম ১৯৯৯ সালে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ৩ বছরের ছোট ছেলে ছায়দুলকে সাথে নিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন। ১০ বছর আগে ছায়দুলকেও খুঁজে পায় তার পরিবার।

জাহানারা বেগম বরগুনা সদর উপজেলার ঘটবাড়িয়া গ্রামের আবদুল লতিফ ফরায়েজীর স্ত্রী এবং ৫ সন্তানের জননী।

জানা যায়, গত ১৫-২০ দিন ধরে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া বাজারে জাহানারা বেগমকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছিল। পরে জাঙ্গালিয়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আশরাফুল আলম রিপন তাকে তার বাড়িতে নিয়ে রাখেন। বাড়িতে নিয়ে তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়।

মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় ঠিকমতো পরিবারের নাম-ঠিকানাও বলতে পারছিলেন না তিনি। শুধু বোঝা যাচ্ছিল ‘বরগুনা এবং ঘটবাড়িয়া’ শব্দগুলো। তখন আশরাফুল আলম রিপন ঢাকায় তার ছেলে শাহরিয়ার হৃদয়কে জানায়। হৃদয় বরগুনায় তার পরিচিত একজনকে জাহানারা বেগমের কথা জানায় ও তার কয়েকটি ছবি পাঠায়। সেই ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জাহানারা বেগমের ছবিসহ পোস্ট দেয়। এর পরই বরগুনা থেকে তার স্বজনরা যোগাযোগ করেন আশরাফুল আলম রিপনের সঙ্গে।

জাহানারা বেগমের ভগ্নিপতি মোস্তফা মির্জা বলেন, আজ থেকে ২৫ বছর আগে জাহানারা বেগম তার ৩ বছরের ছোট ছেলে ছায়দুলকে সঙ্গে নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে লঞ্চযোগে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় যাচ্ছিলেন। ভোরে সদরঘাটে লঞ্চ থেকে নেমে তিনি ছেলেকে রেখে টয়লেটে যান। টয়লেট থেকে বের হয়ে আর ছেলেকে পাননি। এর পর থেকে তাকেও আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আত্মীয়-স্বজনের বাসাসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। হারিয়ে যাওয়া ছোট ছেলে ছায়দুলকেও ১০ বছর আগে খুঁজে পেয়েছে তার পরিবার।

ছোট মেয়ে হাসি বেগম বলেন, মা যখন নিখোঁজ হয় তখন আমার বয়স ৫ বছরের মতো। ২৫ বছর ধরে মাকে খুঁজে বেড়িয়েছি অনেক জায়গায়। কল্পনাতেও ভাবিনি মাকে খুঁজে পাবো। মাকে ফিরে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসি বেগম।

জাঙ্গালিয়া বাজার কমিটির সভাপতি আশরাফুল আলম রিপন বলেন, গত ১৫-২০ দিন ধরে এই মহিলা আমার দোকানের সামনে অবস্থান করছিলেন। পরে তাকে ৫-৬ দিন আগে আমার বাড়িতে নিয়ে রাখি। তার কিছু ছবি তুলে আমার ছেলে শাহরিয়ার হৃদয়ের কাছে পাঠানো হয়। সে বরগুনার পরিচিত একজনকে দিলে ওই ব্যক্তি জাহানারা বেগমের ছবিগুলো ফেসবুক পোস্ট করলে তার পরিবার তাকে চিনতে পারেন। আজকে তারা আমার বাড়িতে এসে তাকে নিয়ে যায়। এত বছর পর জাহানারা বেগমকে তার মেয়ের হাতে তুলে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।