ছেলুন জোয়ার্দ্দার ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১২:০৩:১৬ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৭২২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এবং তার স্ত্রী আকতারি জোয়ার্দ্দারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে গতকাল রোববার এই আদেশ প্রদান করা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিন দুদকের পক্ষ থেকে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করা হয়। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহাম্মদ আলী সালাম তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে তাদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞার আবেদন মঞ্জুর করেন। আবেদনে বলা হয়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ গুরুত্বপূর্ণ আলামত এবং অবৈধ টাকাসহ যেকোনো মুহূর্তে দেশত্যাগ করতে পারেন। এ জন্য সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিদেশ গমন রহিত করা একান্ত আবশ্যক।

সংসদ সদস্য থাকাকালীন ১৫ বছরে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বিপুল সম্পদের মালিক হন। এসব সম্পদের উৎসের খোঁজে দুর্নীতি অনুসন্ধানে মাঠে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২৮ আগস্ট দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

সূত্রে জানা যায়, সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টানা ৪ বারের সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার আয় ও সম্পদের পরিমাণ ছিল বেশ কম। সে সময় তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল মাত্র ২২ লাখ ৯০ হাজার ৯৬৬ টাকার। ১৫ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে প্রায় ২০ গুণ। বর্তমানে নগদ টাকাসহ ৪ কোটি ৬০ লাখ ২৮ হাজার ৯৬৬ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক সোলায়মান হক।

সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় ১৫ বছরে তার স্ত্রীর সম্পদও বেড়েছে প্রায় ছয় গুণ। ২০০৮ সালে তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬৮ লাখ ১০ হাজার ১০ টাকা। বর্তমানে তার স্ত্রী ৪ কোটি ৬২ লাখ ৪৯ হাজার টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক।

এছাড়া ছেলুন জোয়ার্দ্দারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বেআইনি কার্যকলাপের মাধ্যমে নিজ নামে চুয়াডাঙ্গা সদরে ৩ তলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল ‘জোয়ার্দ্দার কুটির’ নামীয় বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় জমি কেনার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া দুর্নীতির অর্থে প্রায় ৮০-১০০টি এসি/ননএসি বাসসহ ১৫-২০টি ট্রাক, তার স্ত্রী ও নিজ নামে সঞ্চয়পত্র, ১টি প্রাডো গাড়িসহ তার দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।

চুয়াডাঙ্গার এই সাবেক সংসদ সদস্যের নির্বাচনী হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০৮ সালে যখন সংসদ নির্বাচন করেন, তখন ছেলুন জোয়ার্দ্দারের স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে সম্পদের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ লাখ ৯০ হাজার ৯৬৬ টাকার। ৫ বছরের ব্যবধানে ২০১৪ সালের নির্বাচনে সময় তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়ায় ২ কোটি ২ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬৫ টাকা। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল ২ কোটি ৭৭ লাখ ৮৫ হাজার ৯৬৬ টাকার। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার ৪ কোটি ৬০ লাখ ২৮ হাজার ৯৬৬ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণ পাওয়া যায়।

তবে নির্বাচনী হলফনামায় ছেলুন জোয়ার্দ্দার যে সম্পদের হিসাব দিয়েছেন, বাস্তবে তা অসম্পূর্ণ ও সঠিক নয় বলে অভিযোগ বিশ্লেষকদের। তারা বলেন, ছেলুন জোয়ার্দ্দার টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। যার সবকিছু তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেননি। শুধু তিনিই নয়, তার স্ত্রী, ভাই, ভাতিজাসহ আত্মীয়-স্বজনরাও বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করে অবৈধভাবে সম্পদ গড়েছেন বিদেশে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ছেলুন জোয়ার্দ্দার ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

আপডেট সময় : ১২:০৩:১৬ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এবং তার স্ত্রী আকতারি জোয়ার্দ্দারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে গতকাল রোববার এই আদেশ প্রদান করা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিন দুদকের পক্ষ থেকে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করা হয়। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহাম্মদ আলী সালাম তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে তাদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞার আবেদন মঞ্জুর করেন। আবেদনে বলা হয়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ গুরুত্বপূর্ণ আলামত এবং অবৈধ টাকাসহ যেকোনো মুহূর্তে দেশত্যাগ করতে পারেন। এ জন্য সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিদেশ গমন রহিত করা একান্ত আবশ্যক।

সংসদ সদস্য থাকাকালীন ১৫ বছরে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বিপুল সম্পদের মালিক হন। এসব সম্পদের উৎসের খোঁজে দুর্নীতি অনুসন্ধানে মাঠে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২৮ আগস্ট দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

সূত্রে জানা যায়, সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টানা ৪ বারের সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার আয় ও সম্পদের পরিমাণ ছিল বেশ কম। সে সময় তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল মাত্র ২২ লাখ ৯০ হাজার ৯৬৬ টাকার। ১৫ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে প্রায় ২০ গুণ। বর্তমানে নগদ টাকাসহ ৪ কোটি ৬০ লাখ ২৮ হাজার ৯৬৬ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক সোলায়মান হক।

সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় ১৫ বছরে তার স্ত্রীর সম্পদও বেড়েছে প্রায় ছয় গুণ। ২০০৮ সালে তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬৮ লাখ ১০ হাজার ১০ টাকা। বর্তমানে তার স্ত্রী ৪ কোটি ৬২ লাখ ৪৯ হাজার টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক।

এছাড়া ছেলুন জোয়ার্দ্দারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বেআইনি কার্যকলাপের মাধ্যমে নিজ নামে চুয়াডাঙ্গা সদরে ৩ তলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল ‘জোয়ার্দ্দার কুটির’ নামীয় বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় জমি কেনার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া দুর্নীতির অর্থে প্রায় ৮০-১০০টি এসি/ননএসি বাসসহ ১৫-২০টি ট্রাক, তার স্ত্রী ও নিজ নামে সঞ্চয়পত্র, ১টি প্রাডো গাড়িসহ তার দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।

চুয়াডাঙ্গার এই সাবেক সংসদ সদস্যের নির্বাচনী হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০৮ সালে যখন সংসদ নির্বাচন করেন, তখন ছেলুন জোয়ার্দ্দারের স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে সম্পদের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ লাখ ৯০ হাজার ৯৬৬ টাকার। ৫ বছরের ব্যবধানে ২০১৪ সালের নির্বাচনে সময় তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়ায় ২ কোটি ২ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬৫ টাকা। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল ২ কোটি ৭৭ লাখ ৮৫ হাজার ৯৬৬ টাকার। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার ৪ কোটি ৬০ লাখ ২৮ হাজার ৯৬৬ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণ পাওয়া যায়।

তবে নির্বাচনী হলফনামায় ছেলুন জোয়ার্দ্দার যে সম্পদের হিসাব দিয়েছেন, বাস্তবে তা অসম্পূর্ণ ও সঠিক নয় বলে অভিযোগ বিশ্লেষকদের। তারা বলেন, ছেলুন জোয়ার্দ্দার টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। যার সবকিছু তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেননি। শুধু তিনিই নয়, তার স্ত্রী, ভাই, ভাতিজাসহ আত্মীয়-স্বজনরাও বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করে অবৈধভাবে সম্পদ গড়েছেন বিদেশে।