মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সৌদি আরবকে ‘বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেন।
তিনি গত বছর ওয়ার্ল্ড ফুটবল সামিটে সৌদি আরব সফরের কথা স্মরণ করেন যেখানে তিনি সৌদি মহিলা ফুটবল দলের উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং বিশ্ব পরিবর্তনের ক্ষেত্রে খেলাধুলার অসাধারণ ক্ষমতার বিষয়ে আলোচনা করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ৩২ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন যারা তার দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
তিনি জানান, সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা বছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স বৈধ চ্যানেলে পাঠান এবং আরও ৫ বিলিয়ন ডলার অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের অর্থ বৈধ পথে পাঠানো সম্ভব হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘তারা কঠোর পরিশ্রমী এবং অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ। ’
১৯৭০ সাল থেকে সৌদি আরবে বসবাসরত ৬৯ হাজার অনিবন্ধিত বাংলাদেশির পাসপোর্ট নবায়নের বিষয়টি তিনি উত্থাপন করেন।
রাষ্ট্রদূত দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, সৌদি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে লজিস্টিকস, পরিষেবা খাত এবং আরএসজিটি ইন্টারন্যাশনাল ও আকওয়া পাওয়ারের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, হজ ও উমরাহ পালনের সুবিধার্থে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য মক্কা রোড ইনিশিয়েটিভ চালু করা হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন যে, গত বছর প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি উমরাহ পালন করেছেন।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য সৌদি নেতৃত্বের প্রশংসা করে ড. ইউনূস সৌদি আরবের চলমান সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
পরে যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমদ মারুফ।
এ সাক্ষাতে প্রধান উপদেষ্টা দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সার্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো একটি মডেল হতে পারে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, আমাদের পারস্পরিক সুবিধার জন্য একসাথে কাজ করতে হবে।
বৈঠকে পাকিস্তানের হাইকমিশনার দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করার পাশাপাশি বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে সহযোগিতা বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং একসাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
হাইকমিশনার জানান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং দেশটির জনগণ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পাকিস্তান বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আহমদ মারুফ পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ এবং উভয় দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর আহ্বান জানান।
তিনি উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব আরও জোরালো করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম টেস্ট জয়ে অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রদূত।