শুক্রবার | ৩১ অক্টোবর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo সিরাজগঞ্জের সাবেক এমপি জয়ের ১২০৮ কোটি টাকার রহস্যময় লেনদেনে তদন্তে সিআইডি Logo সিরাজগঞ্জে চাঞ্চল্যকর মাদক ব্যবসায়ী খুনে পিবিআইয়ের হাতে দুই আসামি গ্রেফতার Logo সুন্দরবনে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ দুর্ধর্ষ ডাকাত করিম শরীফ বাহিনীর অস্ত্র সরবরাহকারী আটক করেছে কোস্ট গার্ড Logo ইবি শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যু  Logo সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সহজভাবে প্রকাশের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Logo চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের মাছপট্টি এলাকায় গ্যাস সিলিণ্ডার বিস্ফোরণে ২ জন আহত Logo ইবির আরবী বিভাগের স্নাতক সমাপনী র‍্যালি অনুষ্ঠিত! Logo খুবিতে ওবিই পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন ও পরিমার্জন বিষয়ক প্রশিক্ষণ! Logo সম্পাদক আশরাফ ইকবালের জন্মদিনে শিক্ষার্থীদের গাছের চারা উপহার দিলেন তরুছায়া Logo মাদকবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন শ্যামনগরের ছফিরুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়

গাজী টায়ারে লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ, নিখোঁজ ১৭৬

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৫:২৫ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট ২০২৪
  • ৭৬৫ বার পড়া হয়েছে

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসীতে সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর মালিকানাধীন গাজী টায়ার কারখানায় লুটপাটের পর দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনের ঘটনায় অন্তত ১৭৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ লোকজনের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে এদের নাম পাওয়া গেছে। এরা সবাই বহিরাগত বলে কারখানা সূত্র জানিয়েছে। হামলা শুরু হলে কারখানার কর্মীরা আগেই পালিয়ে গিয়েছিল। কারখানার আগুন ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের ২৩ ঘণ্টার চেষ্টাতেও নেভানো সম্ভব হয়নি।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম সাংবাদিকদের জানান, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার পর আগুনের তীব্রতা কমে আসে। তবে সম্পূর্ণ নেভাতে আরো সময় লাগবে। পুরোপুরি আগুন নেভা পর্যন্ত ও হতাহতরা উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। দুর্ঘটনাকবলিত কারখানার ভবনের ইট ও আস্তর খসে গোটা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই এই ভবন থেকে সবাইকে নিরাপদে থাকতে হবে।

জানা গেছে, রবিবার রাত ৯টার দিকে গাজী টায়ার কারখানার ছয় তলা ভবনের নিচতলায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর শত শত মানুষ সেখানে জড়ো হয়। খবর পেয়ে ১০টা ৩৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। একে একে ১২টি ইউনিট যোগ দেয়। কারখানার গেটে নিখোঁজদের খুঁজতে আসা স্বজনদের দাবি, কারখানায় লুটপাটের খবর পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যরা সেখানে এসেছিল। এর পর তারা আর বাড়ি ফিরে যায়নি।

রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা নিখোঁজদের একটি খসড়া তালিকা করেছি। এ মুহূর্তে তা যাচাই-বাছাইয়ের কোনো সুযোগ নেই। যারা স্বজন নিখোঁজের দাবি করছেন, তাদের নাম-ঠিকানা লিখে রাখছি। তবে নিখোঁজদের মধ্যে কারখানার কোনো শ্রমিক নেই। অবকাঠামোগত ও ভেতরে থাকা টায়ার উত্পাদনের দাহ্য পদার্থ থাকার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারটি জটিল হয়ে পড়েছে। আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে কিছুই ধারণা করা যায়নি। তিনি জানান, থেমে থেমে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দে আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আগুনের মধ্যে আটকা পড়াদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে কারখানা এলাকা। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি রূপগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশও কাজ করছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তারের পর নারায়ণগঞ্জের আদালত ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। তার গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে একদল লোক কারখানাটিতে গণহারে লুটপাট শুরু করে। লুট করতে কারখানার ভেতরে গিয়ে ৪০০/৫০০-এর বেশি মানুষ ভেতরে আটকা পড়ে। এ সময় দুই তলা ও তিন তলার জানালা দিয়ে অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে নিচে লাফিয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা ও ভেতরে আটকাপড়াদের উদ্ধারের ব্যাপারটি জটিল হয়ে পড়ে। আগুন লাগার পর লুটপাটকারীরা মেশিনপত্র, আসবাবপত্র ও উৎপাদিত পণ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে যেতে শুরু করে। একপর্যায়ে আগুন পুরো ছয় তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। আটকে পড়ারা আর বের হতে পারেনি। ছয় তলা ভবনটির অধিকাংশ ফ্লোরে প্লাস্টিক, রাবার ও কেমিক্যালসহ বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ মজুত ছিল। যে কারণে এগুলো জ্বলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগুন নেভানো প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ভবনের ভেতর থেকে আহত ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

সিরাজগঞ্জের সাবেক এমপি জয়ের ১২০৮ কোটি টাকার রহস্যময় লেনদেনে তদন্তে সিআইডি

গাজী টায়ারে লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ, নিখোঁজ ১৭৬

আপডেট সময় : ০৩:৫৫:২৫ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট ২০২৪

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসীতে সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর মালিকানাধীন গাজী টায়ার কারখানায় লুটপাটের পর দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনের ঘটনায় অন্তত ১৭৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ লোকজনের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে এদের নাম পাওয়া গেছে। এরা সবাই বহিরাগত বলে কারখানা সূত্র জানিয়েছে। হামলা শুরু হলে কারখানার কর্মীরা আগেই পালিয়ে গিয়েছিল। কারখানার আগুন ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের ২৩ ঘণ্টার চেষ্টাতেও নেভানো সম্ভব হয়নি।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম সাংবাদিকদের জানান, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার পর আগুনের তীব্রতা কমে আসে। তবে সম্পূর্ণ নেভাতে আরো সময় লাগবে। পুরোপুরি আগুন নেভা পর্যন্ত ও হতাহতরা উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। দুর্ঘটনাকবলিত কারখানার ভবনের ইট ও আস্তর খসে গোটা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই এই ভবন থেকে সবাইকে নিরাপদে থাকতে হবে।

জানা গেছে, রবিবার রাত ৯টার দিকে গাজী টায়ার কারখানার ছয় তলা ভবনের নিচতলায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর শত শত মানুষ সেখানে জড়ো হয়। খবর পেয়ে ১০টা ৩৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। একে একে ১২টি ইউনিট যোগ দেয়। কারখানার গেটে নিখোঁজদের খুঁজতে আসা স্বজনদের দাবি, কারখানায় লুটপাটের খবর পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যরা সেখানে এসেছিল। এর পর তারা আর বাড়ি ফিরে যায়নি।

রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা নিখোঁজদের একটি খসড়া তালিকা করেছি। এ মুহূর্তে তা যাচাই-বাছাইয়ের কোনো সুযোগ নেই। যারা স্বজন নিখোঁজের দাবি করছেন, তাদের নাম-ঠিকানা লিখে রাখছি। তবে নিখোঁজদের মধ্যে কারখানার কোনো শ্রমিক নেই। অবকাঠামোগত ও ভেতরে থাকা টায়ার উত্পাদনের দাহ্য পদার্থ থাকার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারটি জটিল হয়ে পড়েছে। আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে কিছুই ধারণা করা যায়নি। তিনি জানান, থেমে থেমে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দে আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আগুনের মধ্যে আটকা পড়াদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে কারখানা এলাকা। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি রূপগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশও কাজ করছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তারের পর নারায়ণগঞ্জের আদালত ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। তার গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে একদল লোক কারখানাটিতে গণহারে লুটপাট শুরু করে। লুট করতে কারখানার ভেতরে গিয়ে ৪০০/৫০০-এর বেশি মানুষ ভেতরে আটকা পড়ে। এ সময় দুই তলা ও তিন তলার জানালা দিয়ে অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে নিচে লাফিয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা ও ভেতরে আটকাপড়াদের উদ্ধারের ব্যাপারটি জটিল হয়ে পড়ে। আগুন লাগার পর লুটপাটকারীরা মেশিনপত্র, আসবাবপত্র ও উৎপাদিত পণ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে যেতে শুরু করে। একপর্যায়ে আগুন পুরো ছয় তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। আটকে পড়ারা আর বের হতে পারেনি। ছয় তলা ভবনটির অধিকাংশ ফ্লোরে প্লাস্টিক, রাবার ও কেমিক্যালসহ বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ মজুত ছিল। যে কারণে এগুলো জ্বলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগুন নেভানো প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ভবনের ভেতর থেকে আহত ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।