কর্মজীবী গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যের যত্নে কয়েকটি বিষয়ে নজর দিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। ভালো খাবার খান, যথেষ্ট পানি পান করুন এবং স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স উপভোগ করুন।
ভারতের হিমালয়া ড্রাগ কম্পানির সিনিয়র রিসার্চ সায়েন্টিস্ট পূর্ণিমা সরকার হবু মায়েদের জন্য কিছু টিপস দিয়েছেন। বিশেষ করে কর্মজীবী হবু মায়েরা স্বাস্থ্যের যত্নে খুব বেশি সময় পান না। তাদের জন্য এসব পরামর্শ দারুণ কাজের হবে।
১. শক্তির ভারসাম্য: স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে শক্তি অর্জন করা জরুরি। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, ততটুকুই শক্তির নিতে হবে যতটা আপনি খরচ করছেন। গ্রহণ ও ত্যাগের ভারসাম্য স্থাপন করতে হবে। এতে দেহে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং ওজন কিছু বাড়বে। কিন্তু শক্তি গ্রহণের চেয়ে যদি খরচ বেশি হয় তো ওজন কমে যাবে।
যা করবেন: গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন এবং কর্মচঞ্চল থাকুন। এ সময় ওজন হারানোর চেষ্টা করবেন না। ওজন বেশি বাড়লে ব্যায়াম করার প্রস্তুতি নিন।
২. প্লেটে রংধনু: সুষম খাবারের অর্থ হলো ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের সমন্বয়। প্রথমটি কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাট দেয়। আর দ্বিতীয়টি দেয় ভিটামিন আর খনিজ। এগুলো দেহের যাবতীয় কাজ সঠিনভাবে সম্পন্ন হতে সহায়তা করে। তাই প্লেটে সব ধরনের খাবারের সমাবেশ থাকতে হবে।
যা করবেন: অবশ্যই খাবারে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, মাছ, সবজি এবং ফলের সমন্বয় থাকতে হবে।
৩. আরাম করুন: প্রত্যেক হবু মায়ের জন্য বিষয়টি জরুরি। প্রতিদিনের একই কাজের সূচি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। একটু আরাম-আয়েশ করে দেহ-মনের আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। সন্তান জন্মের পর ওজন বৃদ্ধি এবং ত্বকের নানা সমস্যা নিয়ে ব্যাপ দুশ্চিন্তায় থাকেন মায়েরা। এতে গোটা স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ে।
যা করবেন: এ সময় নিয়মিত গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে নিজেকে সামলে নেওয়া যায়। মেডিটেশন ও ইয়োগার মাধ্যমে এ কাজ করা সম্ভব।
৪. সব ফ্যাট মন্দ নয়: সবাই মনে করেন, ফ্যাট মানেই অস্বাস্থ্যকর কোনো জিনিস। কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। স্বাস্থ্যকর ফ্যাট উদ্ভিজ্জ-ভিত্তিক প্রাকৃতিকভাবে তরল অবস্থায় থঅকে। ওলিভ ওয়েল এমনই এক উদাহরণ। এসব ফ্যাট দেহের ক্ষতিকর কোরেস্টরেলের মাত্রা হ্রাস করে। তবে ঘি বা মাখনের মতো স্যাটুরেটেড ফ্যাট দেহে ক্ষতিকর কোরেস্টরেল বৃদ্ধি করে এবং এসব না খাওয়াই ভালো। আর ওমেগা-৩ ফ্যাট খেলে ত্বক ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা দূর হবে।
যা করবেন: খাবারে চর্বিযুক্ত মাছ এবং সবজি যোগ করুন। এ ছাড়া ওয়ালনাট এবং ফ্ল্যাক্সসিড খেতে পারেন।
৫. বুঝে-শুনে স্ন্যাক্স: পুষ্টিকর ও ফাইবার সমৃদ্ধ, নিম্ন ও মধ্যম মাত্রার ক্যালোরি রয়েছে এমন স্ন্যাক্স বেছে নেবেন। খুব ভারী ও আঠালো স্ন্যাক্স না নিয়ে হালকা খাবার খান। এতে গ্যাস্ট্রিক ও হার্টবার্ন থেকে রক্ষা পাবেন। বাদামে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ই এবং জরুরি ফ্যাটি এসিড। দুগ্ধজাত খাবারে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ এবং ডি। ডিম, সবজি ও ফল অবশ্যই খেতে হবে।
যা করবেন: প্রায় সময় মধ্যম এবং ভারী প্রোটিন খাওয়াই হবে লক্ষ্য।
৬. বেশি লবণ নয়: বাড়তি লবণ খাবেন না। এতে রক্তচাপ বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। এর সঙ্গে আরো অনেক সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে।
যা করবেন: লবণযুক্ত স্ন্যাক্স, আঁচার ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
৭. হাইড্রেটেড থাকুন: প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু দেহে যেন পানির অভাব না ঘটে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় বেশি পানির দরকার রয়েছে। পানি ছাড়াও দুধ, বাটারমিল্ক, ফলের রস ও নারকেলের পানি পান করুন।
যা করবেন: প্রতিদিন ৮-১২ গ্লাস পানি পান করুন। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া