চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খাবার সরবরাহের টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ, আদালতে মামলা দায়ের, অভিযোগ সম্পর্কে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অস্বীকার
মোঃ মুনাইম হোসেন, জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি:
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সের সরকারি বরাদ্দের খাবার সরবরাহের টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগীরা চুয়াডাঙ্গার আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, সম্প্রতি জীবননগর উপজেলা স্থাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ ২০২৫-২৬ সনের জন্য রোগীদের খাবার সরবরাহের নিমিত্তে দরপত্র আহবান করে। এই দরপত্রে সরকারি ঘোষিত দর দেয়া হয় ৩২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এতে চারটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।
৩১ লাখ ৩২ হাজার টাকা দর দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে অনন্যা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান মনোনীত হলে তাদেরকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।
দরপত্রের শর্তাবলী হিসাবে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোন সরকারি/ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ন্যুনতম এক বছরের খাবার সরবরাহের অভিজ্ঞতা সনদ চাওয়া হয়। কার্যাদেশ প্রাপ্ত অনন্যা এন্টারপ্রাইজের দাখিলকৃত অভিজ্ঞতা সনদটি ভুয়া বলে জানা যায়।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, উক্ত প্রতিষ্ঠান দরপত্রের সাথে স্থানীয় দারুল ইলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসায় খাবার সরবরাহের যে অভিজ্ঞতা সনদ দাখিল করেছে, সেটি সম্পূর্ণ ভূয়া।
উক্ত মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জীবননগর উপজেলা স্থাস্থ্য কর্মকর্তা বরাবর লিখিত ভাবে জানান যে তারা এধরনের কোন অভিজ্ঞতা সনদ কাউকে প্রদান করেননি। ভূয়া অভিজ্ঞতা সনদ দাখিল করে অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জীবননগর উপজেলা স্থাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০২৫-২৬ সনের জন্য খাবার সরবরাহের কার্যাদেশ পাওয়া অনন্যা এন্টারপ্রাইজের দরপত্র বাজেয়াপ্ত করে পূনরায় দরপত্র আহ্বান করার জোর দাবি জানিয়ে গতকাল চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে দরপত্রে অংশ নেয়া অন্য তিন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।
জীবননগর দৌলতগঞ্জ এলাকার এন এম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মানিক মিয়া এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করে জানান, ভূয়া অভিজ্ঞতা সনদ দাখিল করে কাজ পাওয়ার নজির কোথাও নেই।
এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা স্থাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মকবুল হাসান জানান, সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে অনন্যা এন্টারপ্রাইজ ১ম হওয়ায় তারা কার্যাদেশ পেয়েছে। ভূয়া সনদ দাখিলের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি।
কেবলমাত্র কম রেটের কারনে তাদেরকে কাজটা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে দরপত্রের নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া তিনি শুধুমাত্র টেন্ডারের বিষয়টি যাচাই বাছাই করতে পারেন। কার্যাদেশ দেয়ার অথরিটি খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তা, এই বলে তিনি দায় এড়ানোর অপচেষ্টা করেছেন।
টেন্ডারে ঘাপলা এবং অনিয়মতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে এবং পূনরায় টেন্ডারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে এলাকার মানুষ। এব্যাপারে জীবননগর উপজেলা স্থাস্থ্য কর্মকর্তা যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন সহ আদালতে মামলা চলমান রাখার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এ দরপত্রে অংশ নেয়া অন্য তিন প্রতিষ্ঠানের লোকজন সহ এলাকাবাসী।