রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে একই বিভাগের অনুজ দুই শিক্ষার্থীকে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা ধরে র্যাগ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় অশ্লীল কবিতা পড়তে ও কুকুরের মতো হয়ে যৌন অঙ্গভঙ্গি দেখানোর জন্য জোরাজুরি করা হয়েছে বলে জানা যায়।
গত শনিবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অ্যাকাডেমিক ভবনের ছাদে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। এতে মানসিক চাপ, লজ্জা ও নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে গতকাল রোববার (৪ মে) দুপুরে প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন দুই শিক্ষার্থী।
অভিযুক্তরা হলেন- হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের মুকমিনুল ইসলাম চৌধুরী, গোলাম রাব্বী, মাহাবুব হোসেন, মেহেদী হাসান মিঠু, শাহ পরান এবং শাহাদাত হোসেন। এসময় তাদের ব্যাচের আরো ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।
অন্যদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন- একই বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের আব্দুল্লাহ শেখ ও মেজবাহ দেওয়ান ও তাদের কয়েকজন সহপাঠী। লিখিত অভিযোগে শুধুমাত্র তাদের দুজনের নাম থাকলেও ব্যাচের অন্য কারোর নাম নেই এমন প্রশ্নে তারা দু’জন জানায়, ‘অন্যরা ভয়ে প্রক্টর স্যারের কাছে অভিযোগ দিতে আসেনি। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে এবং ঘটনার বিচার চেয়ে তারাই শুধুমাত্র সাহস করে এসেছেন।’
লিখিত অভিযোগপত্রে তারা উল্লেখ করেছেন, ‘শনিবার সন্ধ্যায় আমাদের বিভাগের সদ্য সিনিয়র কয়েকজন ভাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের ছাদে আমাদের কয়েকজন বন্ধুকে ডেকে নিয়ে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর সামনে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা ধরে মানসিকভাবে নির্যাতন করে। এ সময় তারা আমাদের বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে গালিগালাজ করে। এরপর আমাদের দিয়ে বিভিন্ন অশালীন অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করে। সেই সঙ্গে আমাদের দিয়ে অশ্লীল কবিতা আবৃত্তি করার পাশাপাশি কুকুরের মতো হয়ে যৌন অঙ্গভঙ্গি দেখানোর জন্য বাধ্য করে। এতে আমরা অনাগ্রহ প্রকাশ করলে আমাদের মা–বাবা তুলে গালিগালাজ করে, যা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য চরম অবমাননাকর।’
মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে জানিয়ে তারা উল্লেখ করেছেন, ‘সিনিয়র ভাইয়েরা আমাদের মোবাইল ফোন জমা রেখে এসব কর্মকাণ্ড করেছে, যাতে কেউ কোনো প্রমাণ রাখতে না পারে। তারা এ-ও বলেছে, এগুলো নিয়ে অভিযোগ দিয়ে কেউ কিছু করতে পারবে না। গতকালের বিষয়টি আমাদের মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে গতকালের ঘটনাটি আমাদের জন্য চরম লজ্জাজনক ও ভীতিকর অভিজ্ঞতা।’ অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে অভিযুক্ত ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের গোলাম রাব্বী ফোন দেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘র্যাগিংয়ের মতো কোনো ধরনের ঘটনা গতকাল সে সময় হয়নি। একটি টুর্ণামেন্টে আমাদের বিভাগ জয়ী হয়, সে উপলক্ষ্যে জুনিয়রদের সাথে আমাদের খাওয়া দাওয়ার একটি আয়োজন ছিল। আপনি ওদের (ভুক্তভোগীদের) ব্যাচের অন্য কারো থেকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, আমাদের তরফ থেকে এ ধরনের কিছু হয়নি।’
আরেক অভিযুক্ত মাহাবুব হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এসেছে সেগুলোর কোনোটিই সত্য নয়। গতকাল একটি খাবারের আয়োজন ছিল। এর বেশি কিছুই হয় নি। আমাদের কাছে খাবারের ভিডিও, নিজেদের একসাথে তোলা ছবি সবই আছে। অভিযোগগুলো সবই মিথ্যা।’
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান মিঠুও একই সুরে কথা বলে অভিযোগটি অস্বীকার করেন। আরেক অভিযুক্ত মুকমিনুল ইসলাম চৌধুরীর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং শাহাদাত হোসেন ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবর রহমান বলেন, ‘র্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলে দুজন শিক্ষার্থী অভিযোগ জমা দিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ ছাড়া ওই ব্যাচের ক্লাস ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। বিষয়টি নিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদেরও সঙ্গে কথা বলে মূল ঘটনা জানার চেষ্টা করা হবে। যদি র্যাগিংয়ের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, সে যে–ই হোক না কেন, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’