শিরোনাম :
Logo চাঁদপুরে কল্যাণ ট্রাস্টের চেক পেয়েছেন ১৯ সাংবাদিক Logo কাল চাঁদপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিশাল সমাবেশ Logo খানপুর ইয়ং স্টার ক্লাবের উদ্যোগে আট দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। Logo পাইকোশায় ধানের চাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মিথ্যা মামলার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন Logo চাঁদপুর সদরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ Logo ইবিতে দুর্গাপূজার মধ্যে পরীক্ষা না নেয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি Logo চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ব্র্যাকের উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ক্লিনিং ক্যাম্পেইন Logo কয়রা হরিণের মাংস উদ্ধার Logo শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে ইবির চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন Logo পালাখাল রোস্তম আলী ডিগ্রি কলেজে নবগঠিত গভর্নিংবডি পরিচিতি ও মতবিনিময়ে ভরপুর ছিলো প্রাণের উচ্ছ্বাস

ভারতে মুসলিম নারীকে রাস্তায় ‘বোরকা খুলে হেনস্তার’ ঘটনায় যা জানা যাচ্ছে

সম্প্রতি ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরে জোর করে এক মুসলিম নারীর হিজাব খুলে দেওয়া এবং মারধরের অভিযোগ ওঠে। এ সময় ওই নারীর সঙ্গে থাকা পুরুষকেও লাঞ্ছিত করা হয়।

গত ১২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে বাকি অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ফুটেজের ওপর ভিত্তি করে সরতাজ, শাদাব, মহম্মদ উমর, আর্শ, শোয়েব ও শামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তবে এই কাণ্ডের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ভিকটিম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তার মা, ‘আমার মেয়ে কোনো অপরাধ করেনি। কিন্তু কিছু লোক প্রকাশ্যে তাকে হেনস্তা করে।’

বিবিসিকে ওই নারীর মা আরও বলেন, ‘তারা ভুল সন্দেহ করে আমার মেয়েকে মারধর করেছে এবং আমার সহকর্মীর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেছে। আমি তাদের কখনোই ক্ষমা করব না। আমার মেয়ের মানসিক অবস্থা এখন ভালো নয়, সে কথা বলতে পারবে না। তবে আমরা দোষীদের শাস্তি চাই।’

হেনস্তার শিকার ওই নারীর মা নিজেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার কথা জানিয়েছেন। সংসারের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় তাদের বাইরে গিয়ে কাজ করতে হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ঘটনার পর থেকে ওই নারী এবং তার পরিবার আতঙ্কে রয়েছে। বিবিসিকে ওই নারীর মা বলেন, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে কী কী হয়েছে, আপনারা নিশ্চয়ই তা ভিডিওতে দেখেছেন। ও আর কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। এখনও বিয়ে হয়নি আমার মেয়ের। ঘটনার পর থেকে খুবই আতঙ্কে রয়েছে সে।’

পরিবারের আর্থিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার ছয় সন্তান। তাদের মধ্যে পাঁচজন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। আমার স্বামী আট বছর আগে মারা গিয়েছেন। তাই সংসারের সব খরচ আমাদেরই চালাতে হয়।’

তিনি আরও জানান, গত কয়েক মাস ধরে তার সঙ্গে ব্যাংকে কাজ করছেন শচীন নামে ওই ব্যক্তি। ওইদিন তার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে কাজে যান শচীন। তারপরই এই ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন আর্শ নামে স্থানীয় বাসিন্দা। তার মা বলেছেন, ‘মেয়েটির সঙ্গে যা ঘটেছে তা অন্যায়, কিন্তু এতে আমার ছেলের কোনো দোষ নেই। ও গিয়ে ঘটনাস্থলে শুধু দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে লেখাপড়া করছে আমার ছেলে। ওর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।’

প্রসঙ্গত, এই ঘটনায় পুলিশ যাদের গ্রেপ্তার করেছে, তাদের বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনাটি যে দোকানের সামনে ঘটেছিল, সেই দোকানের মালিক নওশাদ। তিনি জানিয়েছেন, তার দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নওশাদের দাবি, তার দোকানে কর্মরত দুইজন হেনস্থার শিকার ওই নারীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘কিছু লোক জোর করে আমার দোকানে ঢুকে ভিক্টিমকে (হেনস্থার শিকার নারীকে) মারধর করছিল। আমার কর্মচারীরা তাদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে স্থানী কাউন্সিলর নওশাদ পাহলওয়ান বলেন, ‘মা-মেয়ে একটি স্মল ফিন্যান্স কোম্পানির ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে কাজের জন্য এই এলাকায় আসতেন। একজন ব্যাংক কর্মীর সঙ্গে মেয়েটিকে দেখে ভুল বোঝাবুঝির ফলে তাকে (মেয়েটিকে) মারধর করা হয়।’

শুধু সন্দেহের বশবর্তী হয়ে অভিযুক্তরা তাদের মারধর করে বলে জানান তিনি। তার কথায়, ‘বর্তমানে ঋণ দেওয়ার একটি প্রকল্প চলছে, সেখানে ওই মা-মেয়ে কাজ করেন। ওরা যে কাজে যাচ্ছে, সেটা কেউ ভাবেনি। শুধু সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ওই ছেলে ও মেয়েটিকে দাঁড় করিয়ে মারধর করা হয়েছে। এটি অন্যায়।’

সেদিন ওই নারীর সঙ্গে থাকা ব্যাংক কর্মীর নাম শচীন। এই ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের পদক্ষেপ ন্যায়সঙ্গত। ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে তাই ঘটেছে।’

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁদপুরে কল্যাণ ট্রাস্টের চেক পেয়েছেন ১৯ সাংবাদিক

ভারতে মুসলিম নারীকে রাস্তায় ‘বোরকা খুলে হেনস্তার’ ঘটনায় যা জানা যাচ্ছে

আপডেট সময় : ০৪:৩৭:৪৯ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
সম্প্রতি ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরে জোর করে এক মুসলিম নারীর হিজাব খুলে দেওয়া এবং মারধরের অভিযোগ ওঠে। এ সময় ওই নারীর সঙ্গে থাকা পুরুষকেও লাঞ্ছিত করা হয়।

গত ১২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে বাকি অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ফুটেজের ওপর ভিত্তি করে সরতাজ, শাদাব, মহম্মদ উমর, আর্শ, শোয়েব ও শামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তবে এই কাণ্ডের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ভিকটিম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তার মা, ‘আমার মেয়ে কোনো অপরাধ করেনি। কিন্তু কিছু লোক প্রকাশ্যে তাকে হেনস্তা করে।’

বিবিসিকে ওই নারীর মা আরও বলেন, ‘তারা ভুল সন্দেহ করে আমার মেয়েকে মারধর করেছে এবং আমার সহকর্মীর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেছে। আমি তাদের কখনোই ক্ষমা করব না। আমার মেয়ের মানসিক অবস্থা এখন ভালো নয়, সে কথা বলতে পারবে না। তবে আমরা দোষীদের শাস্তি চাই।’

হেনস্তার শিকার ওই নারীর মা নিজেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার কথা জানিয়েছেন। সংসারের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় তাদের বাইরে গিয়ে কাজ করতে হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ঘটনার পর থেকে ওই নারী এবং তার পরিবার আতঙ্কে রয়েছে। বিবিসিকে ওই নারীর মা বলেন, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে কী কী হয়েছে, আপনারা নিশ্চয়ই তা ভিডিওতে দেখেছেন। ও আর কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। এখনও বিয়ে হয়নি আমার মেয়ের। ঘটনার পর থেকে খুবই আতঙ্কে রয়েছে সে।’

পরিবারের আর্থিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার ছয় সন্তান। তাদের মধ্যে পাঁচজন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। আমার স্বামী আট বছর আগে মারা গিয়েছেন। তাই সংসারের সব খরচ আমাদেরই চালাতে হয়।’

তিনি আরও জানান, গত কয়েক মাস ধরে তার সঙ্গে ব্যাংকে কাজ করছেন শচীন নামে ওই ব্যক্তি। ওইদিন তার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে কাজে যান শচীন। তারপরই এই ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন আর্শ নামে স্থানীয় বাসিন্দা। তার মা বলেছেন, ‘মেয়েটির সঙ্গে যা ঘটেছে তা অন্যায়, কিন্তু এতে আমার ছেলের কোনো দোষ নেই। ও গিয়ে ঘটনাস্থলে শুধু দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে লেখাপড়া করছে আমার ছেলে। ওর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।’

প্রসঙ্গত, এই ঘটনায় পুলিশ যাদের গ্রেপ্তার করেছে, তাদের বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনাটি যে দোকানের সামনে ঘটেছিল, সেই দোকানের মালিক নওশাদ। তিনি জানিয়েছেন, তার দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নওশাদের দাবি, তার দোকানে কর্মরত দুইজন হেনস্থার শিকার ওই নারীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘কিছু লোক জোর করে আমার দোকানে ঢুকে ভিক্টিমকে (হেনস্থার শিকার নারীকে) মারধর করছিল। আমার কর্মচারীরা তাদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে স্থানী কাউন্সিলর নওশাদ পাহলওয়ান বলেন, ‘মা-মেয়ে একটি স্মল ফিন্যান্স কোম্পানির ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে কাজের জন্য এই এলাকায় আসতেন। একজন ব্যাংক কর্মীর সঙ্গে মেয়েটিকে দেখে ভুল বোঝাবুঝির ফলে তাকে (মেয়েটিকে) মারধর করা হয়।’

শুধু সন্দেহের বশবর্তী হয়ে অভিযুক্তরা তাদের মারধর করে বলে জানান তিনি। তার কথায়, ‘বর্তমানে ঋণ দেওয়ার একটি প্রকল্প চলছে, সেখানে ওই মা-মেয়ে কাজ করেন। ওরা যে কাজে যাচ্ছে, সেটা কেউ ভাবেনি। শুধু সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ওই ছেলে ও মেয়েটিকে দাঁড় করিয়ে মারধর করা হয়েছে। এটি অন্যায়।’

সেদিন ওই নারীর সঙ্গে থাকা ব্যাংক কর্মীর নাম শচীন। এই ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের পদক্ষেপ ন্যায়সঙ্গত। ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে তাই ঘটেছে।’