নিউজ ডেস্ক:
বিশ্ব জুড়ে গোপন সামরিক ঘাঁটি গুলোর মধ্যে আমেরিকার ‘এরিয়া ৫১’ খুব বিখ্যাত। যেখানে হাতে গোনা কয়েকজন অফিসার ছাড়া আর কেউ যেতে পারে না। বিশ্বযুদ্ধের সময়কার অনেক গোপন সেনা ঘাঁটি আবিষ্কার করা হয়েছে। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি রয়েছে ভারতেও।
ভারতের সেইসব গোপন সামরিক ঘাঁটি সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। সেসব রয়েছে জনবসতি থেকে অনেক দূরে। আর চাইলেও সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ এইসব ঘাঁটিতে জড়িয়ে রয়েছে দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন। কোনোটা এয়ারফোর্সের, কোনোটা আবার গুপ্তচর সংস্থা RAW-এর কর্মক্ষেত্র। এবার জেনে নিন গোপন ঘাঁটিগুলো কী কী-
১. আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ:
ভারতের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে থাকা এই দ্বীপপুঞ্জে অনেকেই বেড়াতে যান। ভারত শাসিত এই অঞ্চলে রয়েছে ছোট-বড় মোট ৫০টি দ্বীপ। যার মধ্যে মাত্র ৩৪টিতে আমাদের যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। জানা যায়, এখানকার কোন এক দ্বীপেই রয়েছে ভারতের গোপন সামরিক ঘাঁটি। ভারতের গোপনতম ট্রাই-সার্ভিস কমান্ডের কমান্ড পোস্টও নাকি এখানেই। ১৯৮০ সাল থেকে আন্দামানে গোপন সামরিক ঘাঁটির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। বঙ্গোপসাগরের বুকে এই দ্বীপপুঞ্জ বর্তমানে কূটনৈতিক দিক থেকেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাই এখানে সামরিক ঘাঁটি সাজাতে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।
২. বরেলি বিমানবাহিনীর ঘাঁটি
ভারতের কাছে ছিল Mig-25 Foxbat। যা সমসাময়িক বিশ্বের সবথেকে দ্রুততম এয়ারক্রাফট। শুধু আপনি নন, ভারতেরও কেউই জানতেন না, এমনকি শত্রুদেশের কাছেও এই খবর ছিল না। যেদিন এই এয়ারক্রাফটের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, সেদিনই এটি জানা যায়। আর সেই এয়ারক্রাফট থাকত বরেলি বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে।
এই এয়ারবেস এতটাই গোপনীয় যে, এখান থেকে কোন বিমান উড়তেও দেখা যায় না। উত্তরপ্রদেশের বরেলি থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তরে ইজ্জতনগরের কাছে এক জনশূন্য জায়গায় অবস্থিত এই ত্রিশুল এয়ার বেস। ভারতীয় বিমানবাহিনীর গোপনতম ঘাঁটি এটি। এখানেই রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম আন্ডারগ্রাউন্ড এয়ারক্রাফট হ্যাংগার। সরকারের কয়েকজন উচ্চপদস্থ আধিকারিকই কেবল যেতে পারেন এখানে। বর্তমানে এই এয়ারবেসে Su-30Mki ও হেলিকপ্টার ইউনিট রয়েছে বলে জানা যায়।
৩. হুইলার আইল্যান্ড, ওড়িশা:
শুধুমাত্র নিরাপত্তার জন্য এই দ্বীপ তৈরি করা হয়েছে। ওড়িশার ভুবনেশ্বর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপ, যেটি তৈরি করেছিলেন এপিজে আব্দুল কালাম। এখান থেকে অনেক মিসাইল পরীক্ষা করে ভারত। বেশির ভাগ লং রেঞ্জের মিসাইল এখান থেকে পরীক্ষা করা হয়েছে। ভারতের পূর্ব উপকূল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত এই দ্বীপ। শুধুমাত্র জাহাজ ছাড়া এই দ্বীপে যাওয়ার আর কোনও উপায় নেই। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে কোনও ব্রিজ বা বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থাও নেই। একটা ছোট হেলিপ্যাড রয়েছে, তবে মিসাইল বা অন্যান্য যাবতীয় জিনিস জাহাজেই নিয়ে যাওয়া হয়।
৪. চরবেতিয়া এয়ারবেস, কটক:
ভারতের গুপ্তচর সংস্থা RAW- কে এরিয়াল সাপোর্ট দেয় বেশ কিছু আধুনিক যুদ্ধবিমান, যা Aviation Research Centre(ARC)-র অধীনে রয়েছে। কিন্তু কোথা থেকে সেইসব সুপার -সিক্রেট এয়ারক্রাফট চালানো হয়, সেটা কারও জানা নেই। উত্তরটা হল, চরবেতিয়া এয়ারবেস। এটি ওড়িশার কটক থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। উনিশ শতকের মাঝামাঝি চিনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়তে ভারতকে গোপন সাহায্য করে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। এই সিআইএ Aviation Research Centre(ARC) গঠন করতে সাহায্য করে। এরপর চীনের কূটনৈতিক চাল নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে ভারত ও মার্কিন সংস্থা সিআইএ উভয়েই এই এয়ারবেস ব্যবহার করে।
৫. ফারখোর এয়ারবেস, তাজিকিস্তান:
শুনে অবাক হচ্ছেন তো? ভারতের এয়ারবেস কেন তাজিকিস্তানে থাকতে যাবে! ৯০ সাল নাগাদ যখন তালিবানের হত্যালীলায় বিধ্বস্ত আফগানিস্তান, তখন বন্ধু দেশ হিসেবে তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। আফগানিস্তানের গেরিলা বাহিনী ‘আফগান নর্দার্ন অ্যালায়েন্স’ কে সাহায্যের বার্তা দেয় ভারত। কিন্তু, আফগানিস্তানে ঢোকা, একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ভারতের জন্য। তাই তাজিকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতা করতে শুরু করে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা RAW. আফগানিস্তানে অস্ত্র পৌঁছে দিতে সেখানকার ফারখোস এয়ারবেস ব্যবহারের আর্জি জানায়। পরবর্তীকালে, RAW এই এয়ারবেস ব্যবহারের সুবিধার বুঝতে পারে। এয়ারবেসটি ভালো অবস্থায় ছিল না। ভারত সরকার ১ কোটি ডলারে সেই এয়ারবেস পুনর্নির্মাণ করে। ভারত বর্তমানে Mig-29 UPG ও Su-30Mki যুদ্ধবিমান ওড়ায় এই এয়ারবেস থেকে। এই এয়ারবেস পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ভারতের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
একসময় পারভেজ মোশারফ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘ভারতের ফারখোর এয়ারবেস সত্যিই আতঙ্কের। এই এয়ারবেস থেকে কয়েক মিনিটের মধ্যে ভারতীয় যুদ্ধবিমান ঢুকে পড়তে পারবে পাকিস্তানে।