শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব নয় জানিয়ে পুরাতন শিক্ষা পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে প্রাথমিকে বর্তমান শিক্ষাক্রমের পাঠ্যসূচি ঠিক থাকলেও মূল্যায়ন হবে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী। প্রসঙ্গত, ২০১২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দেশে সৃজনশীল পদ্ধতি/যোগ্যতাভিত্তিক পড়াশোনা ছিল।
সময় স্বল্পতায় চলতি শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই পরিবর্তন করা সম্ভন নয়। বছর শেষে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতিতে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল পদ্ধতির পাঠ্যবই দেওয়া হবে। গত বছর তিনটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়। চলতি বছর আরও চারটি নতুন শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। নতুন কারিকুলামে পরীক্ষার ধরন ও নম্বর বণ্টনসহ নানা অসঙ্গতির কারণে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। একের পর এক একাডেমিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পরিপত্রে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে প্রাক-প্রাথমিক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে ধারাবাহিকতা রেখে এরই মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইগুলোর পাণ্ডুলিপি প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করে মুদ্রণ করা হবে। এক্ষেত্রে পাঠদান পদ্ধতি ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে। যতদূর সম্ভব মূল্যায়ন পদ্ধতি পূর্বের জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর মতো হবে। পরিপত্রে জানানো হয়-ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চলমান পাঠ্য বইগুলো ২০২৪ সালের পুরোটা সময় বহাল থাকবে। তাদের এ বছরই বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৫ সালে যথাসম্ভব সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হবে।
এতে বলা হয়, যেসব শিক্ষার্থী ২০২৫ সালে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে, তাদের জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর আলোকে প্রণীত শাখা ও গুচ্ছভিত্তিক সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তকগুলো (২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ব্যবহৃত) প্রদান করা হবে। এসব শিক্ষার্থী নবম ও দশম শ্রেণি মিলিয়ে দুই শিক্ষাবর্ষে সম্পূর্ণ পাঠ্যসূচি শেষে ২০২৭ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
এছাড়া ফিরছে নবম শ্রেণির বিভাগ বিভাজনও। আগের মতো বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ চালু হচ্ছে। চলতি শিক্ষাবর্ষের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিভাজন না থাকলেও দশম শ্রেণিতে তাদের সুনির্দিষ্ট বিভাগ নিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিতে। এতে পড়াশোনায় এক ধরনের ঘাটতি থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রমে বিভাগ বিভাজন (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) নেই। ফলে নবম শ্রেণিতেও অভিন্ন ১০টি পাঠ্যবই পড়ছে সব শিক্ষার্থী। তবে তারা যখন দশম শ্রেণিতে উঠবে, তখন বিভাগ বিভাজনের সুযোগ পাবে। তারা আগের নিয়মে যেন ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে, সেজন্য সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিও প্রণয়ন করা হবে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, স্বাধীনতার ৫ দশকেরও অধিক সময় পার হলেও দেশের শিক্ষাক্রম কী হবে-তা এখনো বাস্তবতার নিরিখে সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ হয়নি। শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়াই ঘন ঘন শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। একটি নতুন শিক্ষাক্রমে অভ্যস্ত হতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেক সময় চলে যায়। এভাবে একের পর এক নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে মানিয়ে নিতে হচ্ছে।