1. [email protected] : amzad khan : amzad khan
  2. [email protected] : NilKontho : Anis Khan
  3. [email protected] : Nil Kontho : Nil Kontho
  4. [email protected] : Nilkontho : rahul raj
  5. [email protected] : NilKontho-news :
  6. [email protected] : M D samad : M D samad
  7. [email protected] : NilKontho : shamim islam
  8. [email protected] : Nil Kontho : Nil Kontho
  9. [email protected] : user 2024 : user 2024
  10. [email protected] : Hossin vi : Hossin vi
পারস্য পরবাসে! | Nilkontho
২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | শনিবার | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
হোম জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি জেলার খবর আন্তর্জাতিক আইন ও অপরাধ খেলাধুলা বিনোদন স্বাস্থ্য তথ্য ও প্রযুক্তি লাইফষ্টাইল জানা অজানা শিক্ষা ইসলাম
শিরোনাম :
অবশেষে চালু হলো ইন্টারনেট চুয়াডাঙ্গায় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ ছোটবেলায় মায়ের বয়সী শর্মিলাকে চড় মেরেছিলেন প্রসেনজিৎ, কেন? সকালের নাস্তায় রাখতে পারেন যেসব খাবার হানিফ ফ্লাইওভারে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে তরুণ নিহত ঢাকাসহ সারাদেশে ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ক্যান্সার আক্রান্তদের ৭৩.৫% পুরুষ ধূমপান, ৬১.৫% নারী তামাকে আসক্ত প্যারিসে ‘রৌদ্র ছায়ায় কবি কণ্ঠে কাব্য কথা’ শীর্ষক আড্ডা যে জিকিরে আল্লাহ’র রহমতের দুয়ার খুলে যায় কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা, দূতাবাস বন্ধ সারাদেশে আজ ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি আসামি ধরতে যেয়ে গ্রামবাসী হামলা ৫ পুলিশ সদস্য আহত, নারীসহ আটক ৭ বৃহস্পতিবার সারাদেশে  শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা যুগান্তরের সাংবাদিক ও তার পরিবারের প্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদে মানববন্ধন জাবিতে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ শিক্ষার্থীদের ফরিদপুরে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত ৩০ শেরপুরে শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিন্দা জানালেন প্রধানমন্ত্রী খাওয়ার পর যে ৫ ভুল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ভিসি চত্বরে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেডে পাঁচ সাংবাদিক আহত

পারস্য পরবাসে!

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬
  • ৫৬ মোট দেখা:

নিউজ ডেস্ক:

কাস্টমসের নাম করে পথ দেখাতে দেখাতে যে ঘরটিতে এনে ঢুকালো, তার ভেতরে পা রেখেই থ হয়ে গেলাম। এ যেন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ঢোকার মহড়া। বিশাল ঘর। এক পাশের দেয়ালজুড়ে খোমেনির ছবি। সামনে সারি সারি টেবিল। টেবিলের ওপর হাঁ করা স্যুটকেস। উর্দিপরা, সুন্দর চেহারার, শশব্যস্ত মানুষগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে খোলা স্যুটকেসের ওপর। কোনায়-কানায় হাত ঢোকাচ্ছে, যেন গোপন কিছু একটা বের করেই ছাড়বে। কাপড়গুলো একটা একটা করে ওপরে তুলে ঝেড়ে ঝেড়ে রাখছে পাশে। একান্ত ব্যক্তিগত কিংবা গৃহস্থালি জিনিসগুলোরও উন্মুক্ত প্রদর্শনী চলছে নির্বিচারে। একেকটা বস্তু বের হয় আর টেবিলের ওপাশে অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে থাকা স্যুটকেসের মালিকের শঙ্কাবনত মুখটা আরও লাল হয়। মহিলা হলে চেহারায় শুধু শঙ্কা নয়, লজ্জায়, রাগে, দুঃখে মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ার অবস্থা। আড়াল করে রাখা নিজস্ব জগতের কিছুই গোপন থাকল না আর। সবই এখন এজমালি।

কোনো কোনো টেবিলে চলছে মৃদু বৎসা। বোঝা গেল অফিসারদের কেউই ইংরেজি তেমন বোঝে না। তবুও যে যার মতো হাত নেড়ে নেড়ে বলেই চলেছে কথা। বইগুলোর পাতা উল্টিয়ে দেখা হচ্ছে। পাগড়ি পরা শিখ যাত্রীটি বোঝানোর কসরত চালাচ্ছে, ‘হিস্টরি অব মেডিসিন… এটা বিখ্যাত বই’। অফিসারটি বলছে, ‘ঠিক আছে, বইটা দেওয়া যাবে। তবে ম্যাগাজিনটা যাবে না। বেআব্রু ছবি আছে ওতে’। অন্য টেবিলে খুদে নিক্তিতে স্বর্ণের অলঙ্কারের ওজন করা হচ্ছে। ক্যাশ ডলার গোনা হচ্ছে। নিয়মের বাইরে কিছুই নেওয়ার অনুমতি নেই।

মালামাল খুলে দেখার এই যজ্ঞ শেষ হওয়ার পর স্যুটকেস বন্ধ করার কসরতটিও দেখার মতো। বিদেশ ভ্রমণের সময় ঠেসে ঠেসে ব্যাগ ভরা হয়। একবার খোলার পর সেই ব্যাগ আর বন্ধ হতে চায় না এখন। ওদিকে অফিসারদের তাড়া। তাড়াহুড়ায় আরও দেরি হচ্ছে। কাজটি যে একবার করেছে শুধু সেই জানে এর বিড়ম্বনা।  কাস্টমসের পর শরীর তল্লাশি। লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। সামনের বুথ থেকে অপ্রস্তুত চেহারা নিয়ে একেকজন বের হচ্ছে। বিধ্বস্ত, বিব্রত, বিপর্যস্ত চেহারা। কেন জানি হঠাৎ একাত্তরের কথা মনে হলো। শহরের উপকণ্ঠে বাস থেকে নামিয়ে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে শরীর তল্লাশি করা হতো। সবার সামনে, জনসমক্ষে নুনু-আণ্ডা-পাছা টিপে টিপে দেখা হতো। শুধু বিব্রত হওয়া নয়, জীবনের শঙ্কা নিয়ে অপেক্ষায় থাকতাম কাকে লাইন থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হবে। বাইরে নেওয়া মানেই তো মৃত্যু। ওফ! সেই দিনগুলো।

এত সব ঝক্কির পর সব শেষ করে, প্যান্টের বোতাম আর বেল্ট লাগাতে লাগাতে, যখন বের হওয়ার পথ খুঁজছি তখনই হঠাৎ বজ্রপাতের মতো ঘটল ঘটনাটা। ভোঁ করে বিকট শব্দে সাইরেন বেজে উঠল। সবুজ পোশাকের মিলিশিয়ারা হই-হই করে বাঁশি বাজাতে বাজাতে সবাইকে নির্দেশ দিতে লাগল। ভাষা জানি না তাই মাথামু-ু কিছুই বুঝলাম না। আমাদের সামনের একজন, দেখে ইউরোপিয়ান মনে হলো, চিৎকার করে তার সাথীদের বলছে, ‘এয়ার রেইড সাইরেন! লেটস গেট আউট কুইক!’ বের হওয়ার দরজার কাছেই ছিলাম। মিলিশিয়াদের একজন ‘বুরো, বুরো বিরুন! বের হও, বের হও, বাইরে যাও!’ বলে আক্ষরিক অর্থেই ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল বাইরে। এক ঝলক শীতের হাওয়া এসে তীরের মতো হুল ফুটাল মুখে। এর পর হঠাৎ সব স্তব্ধ হয়ে গেল মনে হলো। বাইরের মিলিশিয়ারা আরও কর্মতৎপর। ত্রস্ত হাতে প্রায় পাঁজাকোলা করেই সামনের শাটল বাসে তুলে দিলো ঝটপট। ঝড়ের বেগে বাস বের হয়ে এলো এয়ারপোর্ট চত্বর ছেড়ে। দূর থেকে আবছা শুনতে পাচ্ছি সাইরেনের শব্দ। বেজেই চলেছে তখনো। বুঝতে বাকি থাকল না, প্রকৃত যুদ্ধকবলিত দেশে এসে পৌঁছেছি।

বাস নামিয়ে দিল ময়দান-এ-আমির কবির বলে একটা চত্বরে। ওখান থেকে হাঁটা পথ, সামান্য এগিয়ে গেলেই হাতের ডান দিকে দেখা যাবে হোটেল আমির কবির। আনামের কাছ থেকে শুনে শুনে রাস্তাটা মুখস্থ করে ফেলেছি। পই পই করে বলে দিয়েছে। শুধু বলেই ক্ষান্ত হয় নি, কাগজে এঁকে বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু নামার পর ঠিকই অচেনা মনে হচ্ছে জায়গাটা। ভাগ্যিস হাতে আঁকা ম্যাপটা ছিল সঙ্গে।

শুনে শুনে আমির কবির হোটেলের পরিবেশটাও মুখস্থ আমার। আনামের কথায় নিখুঁত বর্ণনা উঠে এসেছে। ম্যানেজারের নাম আগায়ে রুশদি। টাক মাথা, সাদা গোঁফ। কুঁজো হয়ে হাঁটে। ভাঙা ভাঙা ইংলিশ বলে। লবিতেই দেখা পেলাম। চিনতে মোটেও অসুবিধা হলো না। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। খুবই দুঃখ নিয়ে একগাল হেসে জানাল সিট নেই। কবে খালি হবে সেটাও জানা নেই। আমার মাথায় বাজ পড়ল। মিন মিন করে আনামের শেখানো মন্ত্র উগড়ে দিলাম।

-আমি ডক্টর হাফিজের বন্ধু। দুইশ তেত্রিশ নম্বর রুমের বাসিন্দা ডক্টর হাফিজ। তাকে একটু খবর দেবে কি?
দুই গালে টোল ফেলে একটা মোহনীয় হাসি দিল আগায়ে রুশদি।

-এই হোটেলের সব বাসিন্দাই আগায়ে দকতর হাফিজের বন্ধু। তুমিও যে তাই সেটা না বললেও বুঝতে পারি। কিসসু চিন্তা করো না। আমি খবর পাঠাচ্ছি। বসো। একটু চা খাও বসে।

সামনের সোফায় বসে পড়লাম। মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে। এয়ারপোর্টের ধাক্কাটা এখনো সামলে উঠতে পারিনি। স্যুটকেসটা বাসে ওঠানো হয়নি। নির্ঘাত খোয়া গেছে। ভাগ্যিস হাত ব্যাগটা হাতছাড়া করিনি। নইলে এটাও যেত।

হোটেলের লবিটা যেন কোনো পুরনো রাজবাড়ির বিশাল ড্রইং রুম। বোঝাই যায় এককালে জৌলুস ছিল। সুপরিসর কিন্তু অনুজ্জ্বল একটা বসার জায়গা। নিচে পুরু কার্পেট। সোফাগুলো তেল চিটচিটে। দেয়ালটা পুরনো, ঝাড়বাতিগুলো জ্বলে না। মাঝখানে বড় একটা সামোভার। ওই আগুনে গরম হয়ে আছে এলাকাটা। ওপরের কেটলিতে সারাক্ষণ চা ফুটছে। পাশে একটা বাটিতে একগাদা ক্কান্দ, মানে চিনির কিউব। আগা রুশদি ওখানেই বসে থাকেন। হোটেলের বাসিন্দারাও আসা-যাওয়ার পথে ওখানে বসে কিছুক্ষণ। দুই টুকরো ক্কান্দ মুখে ঢুকিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে ফুরুত-ফারুত এক কাপ চা শেষ করার পরই শুধু কথা শুরু। আর কথারও কোনো শেষ নেই। ঘুরেফিরে শেষে ফ্রন্টের খবরে গিয়ে ঠেকবেই। খবর মানে উড়ো খবর। যুদ্ধের সময় রেডিও-টেলিভিশনের চেয়ে উড়ো খবরই দামি খবর।

আনামের কাছে শুনেছি, এ হোটেলটা একসময় ছিল একটা মাঝারি মানের ট্যুরিস্ট হোটেল। এখানকার স্টাফদের অনেকেই ইংরেজি জানে। বিপ্লবের পর ট্যুরিস্ট আসা বন্ধ। তাই আরও অনেক হোটেলের মতো এই হোটেলেরও নাস্তানাবুদ অবস্থা। মেরামত নেই, রঙ করা হয়নি কয়েক বছর, কর্মচারী নেই। সব মিলিয়ে বেহাল অবস্থা। এ ধরনের প্রচুর হোটেল মন্দা ব্যবসার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। আমির কবির এখনো টিকে আছে টিম টিম করে। এই টিকে থাকার মূল জোগানদার উপমহাদেশের কাস্টমাররা। পশ্চিমা এক্সপেট্রিয়টদের সব ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হয়েছে বিপ্লবের পর পরই। সেই জায়গায় এখন আসছে ভারত-পাকিস্তান আর বাংলাদেশের লোকজন।

এ মুহূর্তে হোটেলের প্রায় সব কাস্টমারই বাঙালি। সবাই আমার মতো ভাগ্যান্বেষী। গাদাগাদি করে থাকে। সার্ভিসের মান নিয়ে প্রশ্ন নেই। ভাড়া কম, এতেই সন্তুষ্ট সবাই। অনেকে কয়েক মাস ধরে আছেন। এদেরই একজন হাফিজ ভাই। হাফিজ ভাই আমাদের কয়েক বছরের সিনিয়র। একই মেডিক্যালের। আনামের খবর, হাফিজ ভাই পা ভেঙে বিছানায় বন্দি হয়ে আছেন মাস দুয়েক ধরে। আরো মাসখানেক থাকবেন।

হাফিজ ভাই আমাকে দেখে খুবই অবাক হলেন। আগা রুশদি সঙ্গে এসেছেন। কুশলাদির পর জানালাম আমার দুরবস্থার কথা। হাফিজ ভাই হুমড়ি খেয়ে পড়লেন রুশদির ওপর।

-আগায়ে রুশদি। তোমার মুখে না শব্দটা শুনলাম এই প্রথম। কিছু একটা করো! এই হতভাগা ডাক্তার সেই বাংলাদেশ থেকে এসেছে তোমাদের খেদমত করতে। ওকে রাস্তায় বের করে দেবে? এটা কি ঠিক হবে?

-আগায়ে দকতর, চিকার মিকোনাম? কি করব ডাক্তার। একটা রুমও খালি নেই। হিচ্চি! বাখোদা, খোদার কসম। তুমিই একটা পথ বাতলে দাও না!

রুম খালি নেই কথাটা ঠিক। তবে হাফিজ ভাই সহজ একটা পথ বাতলে দিলেন। পরে শুনেছি, এটা আগেও করেছেন বহুবার। আগা রুশদিও জানে। কিন্তু প্রতিবারই ভাব করে যেন নতুন শুনল। সিঙ্গেল রুমের একজনের সঙ্গে রুম শেয়ার করে থাকতে হবে। বিষয়টা হোটেলের নিয়মে পড়ে না। কিন্তু বিপ্লবোত্তর ইরানে অনেক অনিয়মই নিয়ম। আমি পুরো ভাড়া দেব কিন্তু থাকব শেয়ার করে। এ জন্যই দরকষাকষি।

সাত্তার ভাইয়ের রুমটা ছোট্ট, এক বেডরুমের। ধাক্কাধাক্কি করে কোনোভাবে বাড়তি একটা বিছানা ঢোকানো হলো আমার জন্য। রুমজুড়েই এখন বিছানা। খালি তেমন জায়গা বাকি রইল না। বিছানার পাশের টেবিলটাকে সরিয়ে পায়ের কাছে বুখারিটা রাখা হলো। ঠা-ার দেশে পাশ টেবিলের চেয়ে এটাই বেশি জরুরি।

ভাগ্যিস একটা জানালা আছে ঘরে। বস্তুত জানালাটাই এই কক্ষের একমাত্র সৌন্দর্য। চারপাশে সোনালি রঙ করা কাঠের কাজ। কাচের পাট, সারাক্ষণ বন্ধ থাকে। পর্দা সরালে দেখা যায় অনেক দূর পর্যন্ত। দেখা যায় প্রচুর গাছ। গাছগুলোর পাতা নেই। পাতা ছাড়া ডালে পাখি বসে আছে, উড়ে উড়ে আসে যায়। গাছ ছাড়িয়ে আকাশ। আকাশের নীল জমিনে সাদা মেঘের পালক। আমাদের দেশের শরতের আকাশের মতো। এখানে এখন কোন ঋতু কে জানে?

পুরো নাম আবুল ফাত্তাহ মোহাম্মদ সাত্তার। সন্দ্বীপের লোক, আঞ্চলিক টানে কথা বলেন। খর্বাকৃতি, কোঁকড়ানো চুল, ঘন দাড়ি। দেখেই মনে হয় নরম-সরম অমায়িক মানুষ। প্রথম দিনেই তার একটা অভ্যাস খেয়াল করলাম, মাথা চুলকে কথা শুরু করেন। আর দারুণ হাসির কথায়ও হাসেন না। তবে কথা বলেন প্রচুর। পরিচয়ের কিছুক্ষণের মধ্যেই জানিয়ে দিলেন, লেট ম্যারেজ। বাড়িতে বউ রেখে এসেছেন। এসে আটকা পড়েছেন এখানে। পাসটাসও হচ্ছে না, কাগজপত্রও ঠিক হচ্ছে না। কাগজ ঠিক না হলে তো দেশে ফেরা সম্ভব নয়।

এই কাগজপত্রের কথাটা আংশিক সত্য। পুরোটা জেনেছিলাম পরে হাফিজ ভাইয়ের কাছ থেকে। অজপাড়াগায়ের সন্তান সাত্তার ভাই ছোটবেলা থেকেই এতিম হিসেবে মানুষ হয়েছেন। আত্মীয়-পড়শির সহায়তায় মাদ্রাসায় পড়েছেন ফাজিল পর্যন্ত। মাথা ভালো ছিল, পরীক্ষায় ভালো করেছেন বরাবর। বিষয়টা স্থানীয় চেয়ারম্যানের নজরে এলে শহরের কলেজে ঢুকিয়ে দিলেন। কলেজ শেষ করে মেডিক্যালে। টাকা-পয়সার জোগান দিতেন নিয়মিত। অবশেষে একসময় মেয়েকেও বিয়ে দিলেন তার কাছে। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই হলেন সাত্তার ভাই। সরকারি চাকরিতে ঢোকেননি। গ্রামের বাজারে শ্বশুরের ফার্মেসিতে ঢিলেঢালা প্র্যাকটিস শুরু করলেন। এহেন সাত্তার ভাইয়ের মাথায় বিদেশ যাত্রার পোকা ঢুকল একদিন। শুনেই প্রচ- আপত্তি দিল শ্বশুরবাড়ির সবাই। কিন্তু এই প্রথম শ্বশুরের কোনো পরামর্শ আগ্রাহ্য করলেন সাত্তার ভাই। গোপনে গোপনে হাফিজ্জি হুজুরের দলে ভিড়ে ইরানের ভিসা জোগাড় করে ফেললেন। শ্বশুরকে না জানিয়েই দেশ ছেড়েছেন। এখন খালি হাতে দেশে ফিরবেন কোন মুখে? মুখ দেখাতে পারবেন?

হাফিজ ভাই পুরো একটা স্যুট নিয়ে থাকেন। এক পাশের দেয়ালজুড়ে বড় কাচের জানালা। জানালার পাশে লম্বা হেলান চেয়ারে বসে আছেন। প্লাস্টার করা পা’টা সোজা করে তুলে দিয়েছেন সামনের টুলে। বাইরে দেখা যায় সদর রাস্তা। হলুদ ট্যাক্সি যাচ্ছে। এর পরই ছোট্ট একটা পার্ক। শীতের কাপড় পরে বুড়ো লোকেরা হাঁটছে। হাফিজ ভাই দিনের প্রায় সারাটা সময়ই জানালার পাশে বসে কাটান। একটু পর পরই চা খান। বেশ কষ্ট করে জোগাড় করা বিদেশি ম্যাগাজিন আর দেশ থেকে আনা গল্পের বই নাড়াচাড়া করেন। একই জিনিস বারবার পড়েন।

হাফিজ ভাই আমাদের চেয়ে বছর দশেকের বড়। এফসিপিএস ফার্স্ট পার্ট শেষ করার পর সেকেন্ড পার্ট আর পাস করতে পারছিলেন না। হতাশ হয়ে পরে ভিয়েনা চলে গেলেন। ওখান থেকে ডিপ্লোমা নিয়ে এসে ঢুকেছেন ইরানে। এখানকার পরীক্ষাগুলো পাসটাস করার পর যোগ দিয়েছেন সিরাজ ইউনিভার্সিটিতে। তেহরানে স্বাস্থ্য দপ্তরে এসেছিলেন কি একটা কাজে। ওখানেই দুর্ঘটনা। সিঁড়ি থেকে পিছলে পড়ে পা ভাঙলেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর থাকার জন্য একটা বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তেহরানের আবাসিক এলাকায়, কিন্তু নিজেই তদবির করে এ হোটেলে এসেছেন। বাঙালিদের মাঝে থাকতে চান। বাড়িতে একা একা দুর্বিসহ সময় কাটবে।

আজ হাফিজ ভাইয়ের ভালো দিন। পায়ের ব্যথাটা কম। কাষ্টের নিচের সুরসুড়ি ভাবটাও নেই। বেশ হালকা মেজাজে কথা বলে চলেছেন অনবরত।
-বুঝলি কবির, বুড়ো বয়েসটা কীভাবে কাটবে এর একটা রিহার্সাল হয়ে যাচ্ছে। হা-হা-হা।
-কি যে বলেন, হাফিজ ভাই।
-চারপাশে বুড়োদের ভেতর থাকতে থাকতে নিজেকেও বুড়ো মনে হয় এখন। খেয়াল করেছিস, এ দেশের জোয়ান লোকজন প্রায় উধাও হয়ে গেছে। রাস্তায় চোখ রাখলেই বুঝবি।
-মানে? কোথায় গেল ওরা?
-যুদ্ধে। ওখানে ব্যস্ত আছে। নয়তো কবরে আশ্রয় নিয়েছে।
আমি অবাক হলাম। কি নিরাসক সাদামাটা উক্তি! তবে কথাটার অন্তর্নিহিত বক্তব্য অনুমান করতে মোটেও কষ্ট হলো না। পত্রপত্রিকার খবর আমরা সবাই জানি। পঙ্গপালের মতো মানুষ মরছে দুপক্ষেই।
-দেশটার কী যে হবে! লাশের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে পুরো দেশ। আগে খোমিনির দল মেরেছে, এবার মারছে সাদ্দাম হোসেন। (চলবে)

এই পোস্ট শেয়ার করুন:

এই বিভাগের আরো খবর

নামাযের সময়

সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:০৫
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৬:৫৫
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:১০
  • ১২:১৪
  • ৪:৪৯
  • ৬:৫৫
  • ৮:১৭
  • ৫:৩০

বিগত মাসের খবরগুলি

শুক্র শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১