৪৬ বছর পর মা’কে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন দুই ছেলে !

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ০১:০৫:৩৯ অপরাহ্ণ, শনিবার, ১৯ আগস্ট ২০১৭
  • ৭৪২ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

মা! শব্দটি পৃথিবীর যে কোনও সন্তানের কাছে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে প্রিয়। প্রত্যেক সন্তানই মাকে ভালবাসে।

৪৬ বছর পর্যন্ত যদি মায়ের সঙ্গে দেখা না হয়। তাহলে তার কষ্ট যে কী পরিমাণ তা পরিমাপ করা কঠিন। তবে মায়ের মুখটি একবার দেখাতেই মিলিয়ে গেছে সাড়ে চার দশকের সব কষ্ট।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দরগুলোর একটি টেক্সাসের ডালাস ফোর্ট ওর্থ এয়ারপোর্ট। গত ১১ আগস্ট শুক্রবার এই বিমানবন্দরের লবিতে শত শত ভ্রমণকারী যাত্রার পথে সাক্ষী হলো এক অদ্ভুত ও আবেগময় পুনর্মিলনের। দীর্ঘ ৪৬ বছর মাকে খুঁজে পেলেন তার দুই পুত্র।

রেমন্ড আব্রু (৪৭) ও অ্যান্থনি উইগস (৪৬) পুয়ের্তো রিকোতে জন্ম নেওয়া দুই ভাই। একদম শৈশবে তারা গর্ভধারিনী মায়ের কোল হারিয়ে ফেলেন। এমনকি বিচ্ছিন্ন হয়ে যান নিজেরাও। কিন্তু প্রকৃতির রহস্যময় খেলায় দীর্ঘ ৪৬ বছর পর পুনর্মিলন ঘটলো এই পরিবারের। ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট মিলিয়ে সন্তানরা নিশ্চিত হন তাদের মায়ের পরিচয়।

এই পরিবারের বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে জানা যায় ৬৪ বছর বয়সী মা এলসি রামিরেজের কাছ থেকে। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে পুয়ের্তো রিকোর সোশাল সার্ভিসের হস্তক্ষেপে দুই ভাই রেমন্ড আব্রু ও অ্যান্থনি উইগস আলাদা হয়ে যান। ছোট ভাইয়ের চেয়ে ১০ মাসের বড় রেমন্ড আব্রুকে দেওয়া হয় তার দাদা-দাদির তত্বাবধানে। পরবর্তীতে তিনি টেক্সাসে সামরিক বাহিনীতে কর্মরত নিজ বাবার কাছে চলে যান।

অপরদিকে সদ্য জন্মগ্রহণ করা ছোট্ট অ্যান্থনিকে দত্তক দেওয়া হয় উইগস পরিবারের কাছে। আর বিবাহ বিচ্ছেদে বিধ্বস্ত মা রামিরেজ পুয়ের্তো রিকো থেকে পাড়ি জমান ম্যাসাচুসেটসে। সে কারণে দুই ভাই ও তাদের মায়ের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। চলতে থাকে দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার বিষন্ন দিন।

অ্যান্থনির বর্ণনায় জানা যায় তাদের পুনর্মিলনের গল্প। ছোট বেলা থেকেই নিজের আসল বাবা-মায়ের পরিচয় জানতে আগ্রহী ছিলেন তিনি। বার্থ সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজপত্র ঘেঁটে তিনি খুঁজে বের করতে সক্ষম হন হারানো ভাইকে। দীর্ঘ ২৭ বছর পর অ্যান্থনি দেখা পান বড় ভাই রেমন্ডের।

দুই ভাই মিলিত হওয়ার পর থেমে থাকেনি তাদের অনুসন্ধান। দু’জনই আবার তাদের মাকে খুঁজে বের করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। কিন্তু অনেক দিন ধরে অনেক রকম চেষ্টার পরেও যখন তারা সফল হতে পারলেন না, তখন ধরে নিয়েছিলেন মা বুঝি আর বেঁচে নেই!

অবশেষে এক ডিএনএ টেস্ট বদলে দিলো সবকিছু। একদিন অ্যান্থনির বান্ধবী তার ডিএনএ পরীক্ষাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন, যার মাধ্যমে অনুরূপ ডিএনএর অন্যান্য ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা যাবে ডাটাবেজ থেকে। এভাবে অ্যান্থনি তার মায়ের এক ভাগ্নের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হলেন। তার কাছ থেকেই জানতে পারলেন মা এখনো বেঁচে আছে। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে পেয়ে যান মায়ের ফোন নাম্বার।

মায়ের ফোন নাম্বার জোগাড় করে আর দেরি করেননি এই দুই ভাই। সঙ্গে সঙ্গে ভয়েস মেসেজ পাঠান তারা। নিজের পুত্রের কণ্ঠ যতোদিন পরেই শোনা হোক না কেন, একজন মা সেই ডাক কখনোই চিনতে ভুল করেন না। ফোন পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন রামিরেজ।

অতঃপর তাদের দেখা হয় ডালাস ফোর্ট ওর্থ এয়ারপোর্টে। ৪৬ বছর পর ঘটে পরিবারটির মধুর পুনর্মিলন। একে অন্যকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। এই পুনর্মিলনের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যান্থনি ও রেমন্ডের চার ছেলে-মেয়ে। জীবনে প্রথমবার দাদীকে দেখতে পেয়ে আনন্দে পূর্ণ হয়ে উঠে চার নাতি-নাতনিরও হৃদয়।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

৪৬ বছর পর মা’কে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন দুই ছেলে !

আপডেট সময় : ০১:০৫:৩৯ অপরাহ্ণ, শনিবার, ১৯ আগস্ট ২০১৭

নিউজ ডেস্ক:

মা! শব্দটি পৃথিবীর যে কোনও সন্তানের কাছে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে প্রিয়। প্রত্যেক সন্তানই মাকে ভালবাসে।

৪৬ বছর পর্যন্ত যদি মায়ের সঙ্গে দেখা না হয়। তাহলে তার কষ্ট যে কী পরিমাণ তা পরিমাপ করা কঠিন। তবে মায়ের মুখটি একবার দেখাতেই মিলিয়ে গেছে সাড়ে চার দশকের সব কষ্ট।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দরগুলোর একটি টেক্সাসের ডালাস ফোর্ট ওর্থ এয়ারপোর্ট। গত ১১ আগস্ট শুক্রবার এই বিমানবন্দরের লবিতে শত শত ভ্রমণকারী যাত্রার পথে সাক্ষী হলো এক অদ্ভুত ও আবেগময় পুনর্মিলনের। দীর্ঘ ৪৬ বছর মাকে খুঁজে পেলেন তার দুই পুত্র।

রেমন্ড আব্রু (৪৭) ও অ্যান্থনি উইগস (৪৬) পুয়ের্তো রিকোতে জন্ম নেওয়া দুই ভাই। একদম শৈশবে তারা গর্ভধারিনী মায়ের কোল হারিয়ে ফেলেন। এমনকি বিচ্ছিন্ন হয়ে যান নিজেরাও। কিন্তু প্রকৃতির রহস্যময় খেলায় দীর্ঘ ৪৬ বছর পর পুনর্মিলন ঘটলো এই পরিবারের। ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট মিলিয়ে সন্তানরা নিশ্চিত হন তাদের মায়ের পরিচয়।

এই পরিবারের বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে জানা যায় ৬৪ বছর বয়সী মা এলসি রামিরেজের কাছ থেকে। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে পুয়ের্তো রিকোর সোশাল সার্ভিসের হস্তক্ষেপে দুই ভাই রেমন্ড আব্রু ও অ্যান্থনি উইগস আলাদা হয়ে যান। ছোট ভাইয়ের চেয়ে ১০ মাসের বড় রেমন্ড আব্রুকে দেওয়া হয় তার দাদা-দাদির তত্বাবধানে। পরবর্তীতে তিনি টেক্সাসে সামরিক বাহিনীতে কর্মরত নিজ বাবার কাছে চলে যান।

অপরদিকে সদ্য জন্মগ্রহণ করা ছোট্ট অ্যান্থনিকে দত্তক দেওয়া হয় উইগস পরিবারের কাছে। আর বিবাহ বিচ্ছেদে বিধ্বস্ত মা রামিরেজ পুয়ের্তো রিকো থেকে পাড়ি জমান ম্যাসাচুসেটসে। সে কারণে দুই ভাই ও তাদের মায়ের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। চলতে থাকে দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার বিষন্ন দিন।

অ্যান্থনির বর্ণনায় জানা যায় তাদের পুনর্মিলনের গল্প। ছোট বেলা থেকেই নিজের আসল বাবা-মায়ের পরিচয় জানতে আগ্রহী ছিলেন তিনি। বার্থ সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজপত্র ঘেঁটে তিনি খুঁজে বের করতে সক্ষম হন হারানো ভাইকে। দীর্ঘ ২৭ বছর পর অ্যান্থনি দেখা পান বড় ভাই রেমন্ডের।

দুই ভাই মিলিত হওয়ার পর থেমে থাকেনি তাদের অনুসন্ধান। দু’জনই আবার তাদের মাকে খুঁজে বের করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। কিন্তু অনেক দিন ধরে অনেক রকম চেষ্টার পরেও যখন তারা সফল হতে পারলেন না, তখন ধরে নিয়েছিলেন মা বুঝি আর বেঁচে নেই!

অবশেষে এক ডিএনএ টেস্ট বদলে দিলো সবকিছু। একদিন অ্যান্থনির বান্ধবী তার ডিএনএ পরীক্ষাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন, যার মাধ্যমে অনুরূপ ডিএনএর অন্যান্য ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা যাবে ডাটাবেজ থেকে। এভাবে অ্যান্থনি তার মায়ের এক ভাগ্নের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হলেন। তার কাছ থেকেই জানতে পারলেন মা এখনো বেঁচে আছে। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে পেয়ে যান মায়ের ফোন নাম্বার।

মায়ের ফোন নাম্বার জোগাড় করে আর দেরি করেননি এই দুই ভাই। সঙ্গে সঙ্গে ভয়েস মেসেজ পাঠান তারা। নিজের পুত্রের কণ্ঠ যতোদিন পরেই শোনা হোক না কেন, একজন মা সেই ডাক কখনোই চিনতে ভুল করেন না। ফোন পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন রামিরেজ।

অতঃপর তাদের দেখা হয় ডালাস ফোর্ট ওর্থ এয়ারপোর্টে। ৪৬ বছর পর ঘটে পরিবারটির মধুর পুনর্মিলন। একে অন্যকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। এই পুনর্মিলনের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যান্থনি ও রেমন্ডের চার ছেলে-মেয়ে। জীবনে প্রথমবার দাদীকে দেখতে পেয়ে আনন্দে পূর্ণ হয়ে উঠে চার নাতি-নাতনিরও হৃদয়।