মিডলইষ্ট আইতে জাফর এ মির্জা একটি বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছেন। এতে তিনি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র বারবার ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট বিশ্বাস করে ভুল করে । যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইরানের ‘শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনে’ কোনো চেষ্টা করছে না বলে জানিয়েছে তবু অতীত ইতিহাস ভিন্ন কথা বলে। ইরান বা মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র বারবারই ভুল করেছে। ইরানের ক্ষেত্রে দেখা গেল, প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে ইরানের সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে। এ হামলার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ২৩ জুন ইরান মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থাপনায় ‘প্রতীকী’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
যুক্তরাষ্ট্র জড়ানোর কারণ ইরানে সরকার পরিবর্তন করা গেলে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা আসবে, এই প্রভাবশালী ধারণা অনেকই বিশ্বাস করেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আইনপ্রণেতারা।
ভালি নাসরের মতো বিশ্লেষকরাও মনে করেন এমন ধারণা ঠিক নয়। কারণ এমনটি করতে গেলে হিতে বিপরীত ফল হতে পারে। খামেনির অপসারণের মধ্য দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে এমন ধারণা ঠিক নয়। কারণ, ‘বিলায়াত–ই–ফকিহ’ ধারণাটি ইরানি বিপ্লবের মতাদর্শিক ভিত্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে।
এই ধর্মতাত্ত্বিক নীতিটাই ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের মেরুদণ্ড। ১৯৭৯ সালে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইরানি বিপ্লবের সময় বিলায়াত-ই-ফকিহ ধারণাটি সরাসরি রাজনৈতিক পরিসরে যুক্ত হয় এবং প্রত্যেক ইরানি এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে।
ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পরবর্তী উত্তরসূরি কে হবেন, এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, আর যে ই হোক তার স্থলাভিষিক্ত যিনি হবেন তিনি কওম শিক্ষাকেন্দ্র থেকেই আসবেন। এটি ইরানে শিয়াদের প্রধান ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র। রুহুল্লাহ খোমেনির আদর্শ, বিশেষ করে বিলায়াত-ই-ফকিহ সম্পর্কে তাঁর ব্যাখ্যা এই শিক্ষাকেন্দ্র প্রচার করে চলেছে।
মানে আলী খামেনিকে সরালেও ব্যবস্থাটি বদলাবে না। আরেকটা ব্যাপার বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া সরকার পরিবর্তন মধ্যপ্রাচ্যে কখনোই কার্যকর হয়নি। ইরানও এর ব্যতিক্রম হবে না।