শিরোনাম :
Logo চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির উদ্যোগে মাসব্যাপী খাবার পানি-স্যালাইন বিতরণ Logo চাঁদপুরে জুলাই যোদ্ধাদের মাঝে ৫৯ লাখ টাকার চেক বিতরণ Logo জাবি ভর্তিতে অসচ্ছল শিক্ষার্থীর পাশে ছাত্রদল নেতা হিরন Logo ফেসবুকে চাঁদপুরের ইলিশ বিক্রির বিজ্ঞাপন থেকে সাবধান, টাকা নিয়েই করে দিচ্ছে ব্লক Logo বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদান, ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগসমূহকে আইইবি স্বীকৃতি প্রদানের দাবি Logo গজারিয়ার গুয়াগাছিয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার,আটক ৩ Logo চুয়াডাঙ্গায় নিখোঁজের ৩ দিন ভুট্টা ক্ষেতে পড়েছিল আলমগীরের মরদেহ Logo জীবননগরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে গাঁজাসহ আটক ১ Logo বর্ণাঢ্য আয়োজনে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির এক দশক পূর্তি উদযাপন  Logo চোখের চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক গেলেন মির্জা ফখরুল

ফেসবুকে চাঁদপুরের ইলিশ বিক্রির বিজ্ঞাপন থেকে সাবধান, টাকা নিয়েই করে দিচ্ছে ব্লক

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। মাছের রাজাও বলা হয় ইলিশকে। চাঁদপুরের ইলিশ বেশ সুস্বাদু এবং গুণগত মানের জন্য পরিচিত লাভ করছে। এ কারণে চাঁদপুরকে “ইলিশের বাড়ি” হিসেবেও বলা হয়। কারণ এখানে ইলিশের প্রজনন এবং উৎপাদনে ব্যাপকতাও রয়েছে। মৎস্য বিজ্ঞানীরা চাঁদপুরের নদীর পানিতে বিশেষ খাদ্যকণা থাকে, যা ইলিশকে আরও সুস্বাদু করে তোলে মনে করেন। ইলিশের সাথে চাঁদপুরের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। যা এ মাছের প্রতি মানুষের মনের মধ্যে একটি বিশেষ আবেগ তৈরি করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় চাঁদপুরে গড়ে উঠেছে ইলিশের ব্যাণিজিক কেন্দ্র।

 

এ জেলার বিভিন্নস্থানে অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও ইলিশ বিক্রি করা হয়। তবে অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে এক শ্রেণির অসাধু প্রতারক চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক পেজ খুলে প্রতারণা করে আসছে। অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে গ্রাহকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।

খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, ভুয়া ফেসবুক পেজ খুলে চাঁদপুরের বড় বড় ও তাজা ইলিশের ছবি কিংবা ভিডিও তৈরি করে ফাঁদ পেতে চক্রের সদস্যরা। বিভিন্নভাবে মোবাইল নম্বর, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। টাকা পাঠিয়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত ইলিশ পাচ্ছেন না ক্রেতারা। টাকা-পয়সা নিয়ে এক সময় মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দেয় এ চক্র। পরে বার বার যোগাযোগ করেও সাড়া না পেলে বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছে অনেকেই।

ইলিশের ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা জানান, চাঁদপুরের বৈধ কিছু অনলাইন ইলিশ বিক্রেতার লোগো, পুরনো ভিডিও যুক্ত করে অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে প্রতারণা করেই যাচ্ছে চক্রের সদস্যরা। তাদের ফাঁদ থেকে বাদ পড়ছেন না চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। এসব প্রতারকদের তৎপরতার বিষয়টি এখন আর গোপন নেই। জেলা প্রশাসন, পুলিশ থেকে শুরু করে সবারই জানা। এরপরও ধরা পড়ছে না কেউ। প্রশাসন কঠোর হলেও এসব প্রতারক ধরা ছোয়ায় বাইরে থাকছে। তবে প্রতারণা থেকে মুক্তির জন্য চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতন করা হয়েছে।

কয়েকদিন আগে এমনই প্রতারণার শিকার রাজধানী ঢাকার এক চাকরিজীবী কামাল হোসেন। তিনি একটি এনজিওতে চাকরি করেন। ঢাকাতেই থাকেন। চাঁদপুরের ইলিশের স্বাদ নিতে অনলাইনে “ইলিশের রাজ্য চাঁদপুর” নামে একটি ফেসবুক পেজের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি ইলিশ কেনার জন্য এই প্রতারক চক্রকে ১২ হাজার ৩০০ টাকা দেন। কিন্তু চক্রটি ইলিশ তো দূরের কথা, উল্টো কামাল নামে এই ব্যক্তির ফেসবুক আইডি তারা ব্লক করে দিয়েছে।

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক সংবাদকর্মী ও শিক্ষক জানান, ১০-১২ দিন ধরেই অনলাইনে ডিসকাউন্টের (মূল্যছাড়) অফার দেখিয়ে প্রতারক চক্রের একজন তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। ইলিশ আনতে গিয়ে দেখেন, ওই পরিবহনের অস্তিত্বই নেই। প্রতারক যে পরিবহনের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেছে, সেটিও হ্যাক করা হয়েছে এবং সেই ব্যক্তিও প্রতারিত হয়েছেন।

তিনি আরও জানান, প্রতারক তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, নাম, বাবার নামসহ সব তথ্য হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছে। পাঠিয়েছে তরতাজা বড় বড় ইলিশ মাছের ভিডিও, ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স। অফার দিয়েছে দুই কেজি ওজনের ইলিশ মাত্র ৬০০ টাকা কেজি। অথচ এই দামে ১৫ বছর আগেও ইলিশ বিক্রি হয়েছে কিনা মনে করতে পারেন না জেলা শহরের মানুষ। আর এই ওজনের ইলিশ ভরা মৌসুমেও (আগস্ট-অক্টোবর) জেলের জালে ধরা পড়ে না।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, অনলাইনে যেসব ফেসবুক পেজ জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সদস্যদের, সেগুলোর তালিকা করে নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা বহির্ভূত অন্যান্য অনলাইন পেজ থেকে সংশ্লিষ্টদের ইলিশ ক্রয়ের বিষয়ে প্রতারণা হতে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ প্রতারিত হলে আপনার নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করতে পারেন। আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, আমাদের কাছেও অভিযোগ আসে। প্রতারণা যারা করছে, তারা চাঁদপুরের বাইরের লোক হতে পারে। কারণ এখানে তালিকাভুক্ত যারা রয়েছেন, আমরা যতটুকু জানি তারা এটি করছেন না। কেউ করলে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির উদ্যোগে মাসব্যাপী খাবার পানি-স্যালাইন বিতরণ

ফেসবুকে চাঁদপুরের ইলিশ বিক্রির বিজ্ঞাপন থেকে সাবধান, টাকা নিয়েই করে দিচ্ছে ব্লক

আপডেট সময় : ০৪:৪৪:১২ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। মাছের রাজাও বলা হয় ইলিশকে। চাঁদপুরের ইলিশ বেশ সুস্বাদু এবং গুণগত মানের জন্য পরিচিত লাভ করছে। এ কারণে চাঁদপুরকে “ইলিশের বাড়ি” হিসেবেও বলা হয়। কারণ এখানে ইলিশের প্রজনন এবং উৎপাদনে ব্যাপকতাও রয়েছে। মৎস্য বিজ্ঞানীরা চাঁদপুরের নদীর পানিতে বিশেষ খাদ্যকণা থাকে, যা ইলিশকে আরও সুস্বাদু করে তোলে মনে করেন। ইলিশের সাথে চাঁদপুরের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। যা এ মাছের প্রতি মানুষের মনের মধ্যে একটি বিশেষ আবেগ তৈরি করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় চাঁদপুরে গড়ে উঠেছে ইলিশের ব্যাণিজিক কেন্দ্র।

 

এ জেলার বিভিন্নস্থানে অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও ইলিশ বিক্রি করা হয়। তবে অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে এক শ্রেণির অসাধু প্রতারক চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক পেজ খুলে প্রতারণা করে আসছে। অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে গ্রাহকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।

খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, ভুয়া ফেসবুক পেজ খুলে চাঁদপুরের বড় বড় ও তাজা ইলিশের ছবি কিংবা ভিডিও তৈরি করে ফাঁদ পেতে চক্রের সদস্যরা। বিভিন্নভাবে মোবাইল নম্বর, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। টাকা পাঠিয়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত ইলিশ পাচ্ছেন না ক্রেতারা। টাকা-পয়সা নিয়ে এক সময় মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দেয় এ চক্র। পরে বার বার যোগাযোগ করেও সাড়া না পেলে বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছে অনেকেই।

ইলিশের ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা জানান, চাঁদপুরের বৈধ কিছু অনলাইন ইলিশ বিক্রেতার লোগো, পুরনো ভিডিও যুক্ত করে অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে প্রতারণা করেই যাচ্ছে চক্রের সদস্যরা। তাদের ফাঁদ থেকে বাদ পড়ছেন না চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। এসব প্রতারকদের তৎপরতার বিষয়টি এখন আর গোপন নেই। জেলা প্রশাসন, পুলিশ থেকে শুরু করে সবারই জানা। এরপরও ধরা পড়ছে না কেউ। প্রশাসন কঠোর হলেও এসব প্রতারক ধরা ছোয়ায় বাইরে থাকছে। তবে প্রতারণা থেকে মুক্তির জন্য চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতন করা হয়েছে।

কয়েকদিন আগে এমনই প্রতারণার শিকার রাজধানী ঢাকার এক চাকরিজীবী কামাল হোসেন। তিনি একটি এনজিওতে চাকরি করেন। ঢাকাতেই থাকেন। চাঁদপুরের ইলিশের স্বাদ নিতে অনলাইনে “ইলিশের রাজ্য চাঁদপুর” নামে একটি ফেসবুক পেজের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি ইলিশ কেনার জন্য এই প্রতারক চক্রকে ১২ হাজার ৩০০ টাকা দেন। কিন্তু চক্রটি ইলিশ তো দূরের কথা, উল্টো কামাল নামে এই ব্যক্তির ফেসবুক আইডি তারা ব্লক করে দিয়েছে।

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক সংবাদকর্মী ও শিক্ষক জানান, ১০-১২ দিন ধরেই অনলাইনে ডিসকাউন্টের (মূল্যছাড়) অফার দেখিয়ে প্রতারক চক্রের একজন তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। ইলিশ আনতে গিয়ে দেখেন, ওই পরিবহনের অস্তিত্বই নেই। প্রতারক যে পরিবহনের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেছে, সেটিও হ্যাক করা হয়েছে এবং সেই ব্যক্তিও প্রতারিত হয়েছেন।

তিনি আরও জানান, প্রতারক তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, নাম, বাবার নামসহ সব তথ্য হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছে। পাঠিয়েছে তরতাজা বড় বড় ইলিশ মাছের ভিডিও, ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স। অফার দিয়েছে দুই কেজি ওজনের ইলিশ মাত্র ৬০০ টাকা কেজি। অথচ এই দামে ১৫ বছর আগেও ইলিশ বিক্রি হয়েছে কিনা মনে করতে পারেন না জেলা শহরের মানুষ। আর এই ওজনের ইলিশ ভরা মৌসুমেও (আগস্ট-অক্টোবর) জেলের জালে ধরা পড়ে না।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, অনলাইনে যেসব ফেসবুক পেজ জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সদস্যদের, সেগুলোর তালিকা করে নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা বহির্ভূত অন্যান্য অনলাইন পেজ থেকে সংশ্লিষ্টদের ইলিশ ক্রয়ের বিষয়ে প্রতারণা হতে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ প্রতারিত হলে আপনার নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করতে পারেন। আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, আমাদের কাছেও অভিযোগ আসে। প্রতারণা যারা করছে, তারা চাঁদপুরের বাইরের লোক হতে পারে। কারণ এখানে তালিকাভুক্ত যারা রয়েছেন, আমরা যতটুকু জানি তারা এটি করছেন না। কেউ করলে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।