থাই প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করল সাংবিধানিক আদালত

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৩:৪৩ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
  • ৭০৮ বার পড়া হয়েছে

মঙ্গলবার (১ জুলাই) থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রার বিরুদ্ধে আনা নৈতিক লঙ্ঘনের অভিযোগ গ্রহণ করে তাকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন। নয় সদস্যের বেঞ্চের মধ্যে সাতজন বিচারক বরখাস্তের পক্ষে মত দেন। প্রধানমন্ত্রীকে নিজের পক্ষে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

এই সময়ে উপপ্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুনগ্রুংরুয়াংকিত ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও সরকারিভাবে তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ফাঁস হওয়া অডিওতে মে মাসে সীমান্তে সংঘর্ষে এক কম্বোডীয় সেনার মৃত্যুর ফোনালাপে তাকে প্রতিবেশী কম্বোডিয়ার সিনেট প্রেসিডেন্ট হুন সেনের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা করতে শোনা যায়। এই ফোনালাপ জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে এবং তার অপসারণের দাবিতে একটি আইনি আবেদন দায়ের করা হয়।

যদি তাকে শেষ পর্যন্ত অপসারণ করা হয়, তাহলে তিনি হবেন সিনাওয়াত্রা পরিবারের তৃতীয় ব্যক্তি যিনি পূর্ণ মেয়াদ শেষ না করেই ক্ষমতা হারালেন। গত দুই দশক ধরে থাই রাজনীতিতে সিনাওয়াত্রা পরিবার আধিপত্য বিস্তার করে আসছে।

ফাঁস হওয়া কথোপকথনে পেতংতার্নকে থাইল্যান্ডের একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে সমালোচনা করতেও শোনা যায়, যার কারণে তার দেশপ্রেম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তার বিরুদ্ধে আরেকটি নৈতিক লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করছে জাতীয় দুর্নীতি দমন কমিশন, যা থেকেও তাকে অপসারণের ঝুঁকি রয়েছে।

ফাঁস হওয়া ওই ফোনালাপের জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েছেন এবং সাম্প্রতিক সীমান্ত বিরোধের ক্ষেত্রে এটিকে ‘আলোচনার কৌশল’ হিসেবে সমর্থন করেছেন। কিন্তু রক্ষণশীল আইন প্রণেতারা তাকে কম্বোডিয়ার কাছে মাথা নত করার এবং থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনীকে দুর্বল করার অভিযোগ করেছেন।

 

আদালতের রায়ের পর সাংবাদিকদের পেতংতার্ন বলেন, “আদালতের রায় আমি মেনে নিয়েছি। আমি সব সময় আমার দেশের জন্য সর্বোত্তম কাজ করার চেষ্টা করেছি।”

যদি তাকে শেষ পর্যন্ত অপসারণ করা হয়, তবে গত বছরের আগস্টের পর এটি হবে ফেউ থাই পার্টির দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী অপসারণের ঘটনা। গত বছর একই কারণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্রেত্থা থাভিসিনকেও বরখাস্ত করা হয়েছিল, কারণ তিনি তার মন্ত্রিসভায় এক সাবেক আইনজীবীকে নিয়োগ দেন যিনি একসময় জেল খেটেছিলেন।

 

স্রেত্থার বরখাস্তের কয়েক দিনের মধ্যেই পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা শপথ নেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তিনি থাইল্যান্ডের সবচেয়ে কমবয়সী (৩৮ বছর) প্রধানমন্ত্রী এবং তার ফুফু ইয়াংলাক সিনাওয়াত্রার পর দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী।

পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদালতের এই রায় এমন দিনে এলো, যেদিন তার পিতা থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা, যাকে তার সরকারের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে দেখা হতো, তার নিজের রাজনৈতিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছেন।

 

থাকসিন নয় বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সংবাদপত্রে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে রাজতন্ত্রকে অবমাননার অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। মঙ্গলবার তার বিচার শুরু হয়েছে। বিতর্কিত এই রাজনৈতিক নেতা ১৫ বছর নির্বাসনের পর ২০২৩ সালে থাইল্যান্ডে ফিরে আসেন। তিনি থাইল্যান্ডের কুখ্যাত লেস ম্যাজেস্টে আইনের অধীনে অভিযোগের মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে উচ্চ-প্রোফাইল ব্যক্তিত্ব।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

থাই প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করল সাংবিধানিক আদালত

আপডেট সময় : ০৮:৩৩:৪৩ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

মঙ্গলবার (১ জুলাই) থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রার বিরুদ্ধে আনা নৈতিক লঙ্ঘনের অভিযোগ গ্রহণ করে তাকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন। নয় সদস্যের বেঞ্চের মধ্যে সাতজন বিচারক বরখাস্তের পক্ষে মত দেন। প্রধানমন্ত্রীকে নিজের পক্ষে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

এই সময়ে উপপ্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুনগ্রুংরুয়াংকিত ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও সরকারিভাবে তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ফাঁস হওয়া অডিওতে মে মাসে সীমান্তে সংঘর্ষে এক কম্বোডীয় সেনার মৃত্যুর ফোনালাপে তাকে প্রতিবেশী কম্বোডিয়ার সিনেট প্রেসিডেন্ট হুন সেনের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা করতে শোনা যায়। এই ফোনালাপ জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে এবং তার অপসারণের দাবিতে একটি আইনি আবেদন দায়ের করা হয়।

যদি তাকে শেষ পর্যন্ত অপসারণ করা হয়, তাহলে তিনি হবেন সিনাওয়াত্রা পরিবারের তৃতীয় ব্যক্তি যিনি পূর্ণ মেয়াদ শেষ না করেই ক্ষমতা হারালেন। গত দুই দশক ধরে থাই রাজনীতিতে সিনাওয়াত্রা পরিবার আধিপত্য বিস্তার করে আসছে।

ফাঁস হওয়া কথোপকথনে পেতংতার্নকে থাইল্যান্ডের একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে সমালোচনা করতেও শোনা যায়, যার কারণে তার দেশপ্রেম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তার বিরুদ্ধে আরেকটি নৈতিক লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করছে জাতীয় দুর্নীতি দমন কমিশন, যা থেকেও তাকে অপসারণের ঝুঁকি রয়েছে।

ফাঁস হওয়া ওই ফোনালাপের জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েছেন এবং সাম্প্রতিক সীমান্ত বিরোধের ক্ষেত্রে এটিকে ‘আলোচনার কৌশল’ হিসেবে সমর্থন করেছেন। কিন্তু রক্ষণশীল আইন প্রণেতারা তাকে কম্বোডিয়ার কাছে মাথা নত করার এবং থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনীকে দুর্বল করার অভিযোগ করেছেন।

 

আদালতের রায়ের পর সাংবাদিকদের পেতংতার্ন বলেন, “আদালতের রায় আমি মেনে নিয়েছি। আমি সব সময় আমার দেশের জন্য সর্বোত্তম কাজ করার চেষ্টা করেছি।”

যদি তাকে শেষ পর্যন্ত অপসারণ করা হয়, তবে গত বছরের আগস্টের পর এটি হবে ফেউ থাই পার্টির দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী অপসারণের ঘটনা। গত বছর একই কারণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্রেত্থা থাভিসিনকেও বরখাস্ত করা হয়েছিল, কারণ তিনি তার মন্ত্রিসভায় এক সাবেক আইনজীবীকে নিয়োগ দেন যিনি একসময় জেল খেটেছিলেন।

 

স্রেত্থার বরখাস্তের কয়েক দিনের মধ্যেই পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা শপথ নেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তিনি থাইল্যান্ডের সবচেয়ে কমবয়সী (৩৮ বছর) প্রধানমন্ত্রী এবং তার ফুফু ইয়াংলাক সিনাওয়াত্রার পর দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী।

পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদালতের এই রায় এমন দিনে এলো, যেদিন তার পিতা থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা, যাকে তার সরকারের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে দেখা হতো, তার নিজের রাজনৈতিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছেন।

 

থাকসিন নয় বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সংবাদপত্রে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে রাজতন্ত্রকে অবমাননার অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। মঙ্গলবার তার বিচার শুরু হয়েছে। বিতর্কিত এই রাজনৈতিক নেতা ১৫ বছর নির্বাসনের পর ২০২৩ সালে থাইল্যান্ডে ফিরে আসেন। তিনি থাইল্যান্ডের কুখ্যাত লেস ম্যাজেস্টে আইনের অধীনে অভিযোগের মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে উচ্চ-প্রোফাইল ব্যক্তিত্ব।