বুধবার | ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo খুবিতে রফিক আজম ট্রাভেল স্কলারশিপ চালুর লক্ষ্যে এমওইউ স্বাক্ষর Logo খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়ীজ এসোসিয়েশন সিবি’এর দোয়া মাহফিল Logo জলবায়ু সহিষ্ণু ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশের কৃষকদের সক্ষম করে তুলতে হবে— আন্তর্জাতিক সেমিনারে নোবিপ্রবি উপাচার্য Logo পুলিশের অভিযানে পলাশবাড়ীতে চোরাই মাল উদ্ধার : দুই ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী আটক Logo পলাশবাড়ীতে জুলাই যোদ্ধার বাবার প্রভাব খাটিয়ে জমি দখলের অভিযোগ Logo পর্যটক সেন্টমার্টিন পৌঁছলে ফুল দিয়ে পর্যটকদের বরণ Logo বিএনপি চেয়ারপার্সনের রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় জীবননগরে ছাত্রদল ও শ্রমিকদের দোয়া Logo জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নিরাপত্তা জোরদারে ব্যাপক প্রস্তুতি সরকারের Logo কারুবাক পাণ্ডুলিপি পুরস্কার পেলেন এইচএম জাকির Logo চাঁদপুরে নতুন খাবারের আকর্ষণ ‘কাচ্চি ডাইন’ গ্রাহকদের ভিড় বেড়েই চলছে

শেরওয়ানি পাগড়ি পরিয়ে ঘোড়ার গাড়ি’তে করে বিদ্যালয় কর্মচারীর রাজকীয় বিদায়-

  • আপডেট সময় : ১১:৫১:৫৫ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ৭৮৯ বার পড়া হয়েছে

{"remix_data":[],"source_tags":[],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"transform":1},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false}

চট্টগ্রাম: মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্মচারী নুরুল আবছার।৪৮ বছর ধরে বাজিয়েছেন বিদ্যালয়’টির ‘ঘন্টা’ অবশ্যই শুধু সে নয় তার প্রপিতামহ বাদশা মিয়া, দাদা ছেরাজুল হক, বাবা মুন্সি মিয়াও কর্মরত ছিলেন এই বিদ্যালয়ে।রোববার (২ফেব্রুয়ারি) ৪৮ বছরের পথচলায় বিদ্যালয়ের শেষ ঘণ্টা বাজিয়ে কর্মজীবনের সম্পাপ্তি ঘটান নুরুল আবছার।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রিয় ‘আবছার কাকু’ অন্যদিকে শিক্ষকদের ‘আবছার ভাই’ দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরে যাচ্ছেন আর তাই তাকে দেওয়া হলো ভিন্নধর্মী এক বিদায় সংবর্ধনা।এদিন, কর্মজীবনের শেষ ঘন্টা বাজান নুরুল আবছার।এরপর স্কাউট দলের সদস্যরা তাকে কাঁধে তুলে সংবর্ধনাস্থলে নিয়ে যান।

বিদায় অনুষ্ঠানের আসস অলংকৃত করেন অনুষ্ঠানের মধ্যমনি বিদ্যালয় কর্মচারী আবছার।একসময় শিক্ষকদের পাশাপাশি একসারিতে অনুষ্ঠানে বসার সুযোগ না হলেও আজ অনুষ্ঠানটার আয়োজনই তাকে ঘিঁরে।সংবর্ধনায় সহকর্মী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের অনেকে তার কর্মময় জীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন, সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নানা উপহার সামগ্রী, অর্থ সহায়তা দিয়ে সম্মান জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এদিন, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে এবং শিক্ষক নিতাই দাশের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলম, আছিউর রহমান, রেজাউল করিম, তারেক নিজামী, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের অভিভাবক সদস্য আবু সুফিয়ান চৌধুরী, শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস, মারিয়া আক্তার, কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস হাবিবা, মেহেদী হাসান, তাহসিনা তাবাচ্ছুম তানিশা, বিবি ফাতেমা, ওবায়দুল ইসলাম চৌধুরী।এ সময় অনুভূতি ব্যক্ত করেন সংবর্ধিত স্কুল কর্মচারী নুরুল আবছারও।

সংবর্ধনা শেষে শেরওয়ানি পাগড়ি পরিয়ে নুরুল আবছারকে ঘোড়ার গাড়িতে করে বিদায় জানান প্রিয় বিদ্যাঙ্গন থেকে। স্কাউট দলের সদস্যরা বাদ্যের তালে তালে এবং বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী সারিবদ্ধভাবে তাকে জোরারগঞ্জ বাজার প্রদক্ষিণ শেষে বাড়ি পৌঁছে দেন। এসময় অন্যরকম এক আবহ সৃষ্টি হয়।

এসময় নুরুল আবছার বলেন, ১৬০ টাকা বেতনে এই স্কুলে চাকরি শুরু করি। এরপর একপর্যায়ে ৩ মাসে মিলে সরকারিভাবে ৩৬০ টাকা বেতন পেতাম। আজ আমার বিদায়ের মধ্যদিয়ে আমাদের ৪ প্রজন্মের কর্মচারী হিসেবে চাকরি জীবনের সমাপ্তি হল। চাকরি জীবনে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী এ স্কুলে চাকরি করেছেন। আমাকে যেভাবে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে সেটি আমি আগে কখনো দেখিনি। আমি বর্তমান প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলমসহ সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের কর্মচারী নুরুল আবছার তার জীবনের মূল্যবান সময়টুকু এই বিদ্যালয়ে কাটিয়েছেন। তার বর্ণাঢ্য বিদায় অনুষ্ঠানের মাঝেও আমাদের অনেককিছু শেখার আছে। এখানে শেখার আছে যে বিষয়টি সেটা হলো ভালো কাজ করলে সততার সাথে চললে তার কখনো না কখনো স্বীকৃতি মিলে। অবশেষে নুরুল আবছারও তার ভালোভাবে কাটানো কর্মজীবনের স্বীকৃতি পেলেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলম বলেন, তিনি এতটাই বিশ্বস্ত যে বিদ্যালয়ের সব লেনদেন করতেন। অনেক সময় ৮-১০ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতেন আবার বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে ৮-১০ লাখ টাকা তুলে আনতেন। আমি এ বিদ্যালয়ে পাঠদান করছি প্রায় ১৮ বছর। এরমধ্যে তিনি কখনো ১ টাকাও এদিক সেদিক করেননি। এ রকম বিশ্বস্ত কর্মচারী আমরা আর পাবো কিনা জানি না।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

খুবিতে রফিক আজম ট্রাভেল স্কলারশিপ চালুর লক্ষ্যে এমওইউ স্বাক্ষর

শেরওয়ানি পাগড়ি পরিয়ে ঘোড়ার গাড়ি’তে করে বিদ্যালয় কর্মচারীর রাজকীয় বিদায়-

আপডেট সময় : ১১:৫১:৫৫ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চট্টগ্রাম: মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্মচারী নুরুল আবছার।৪৮ বছর ধরে বাজিয়েছেন বিদ্যালয়’টির ‘ঘন্টা’ অবশ্যই শুধু সে নয় তার প্রপিতামহ বাদশা মিয়া, দাদা ছেরাজুল হক, বাবা মুন্সি মিয়াও কর্মরত ছিলেন এই বিদ্যালয়ে।রোববার (২ফেব্রুয়ারি) ৪৮ বছরের পথচলায় বিদ্যালয়ের শেষ ঘণ্টা বাজিয়ে কর্মজীবনের সম্পাপ্তি ঘটান নুরুল আবছার।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রিয় ‘আবছার কাকু’ অন্যদিকে শিক্ষকদের ‘আবছার ভাই’ দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরে যাচ্ছেন আর তাই তাকে দেওয়া হলো ভিন্নধর্মী এক বিদায় সংবর্ধনা।এদিন, কর্মজীবনের শেষ ঘন্টা বাজান নুরুল আবছার।এরপর স্কাউট দলের সদস্যরা তাকে কাঁধে তুলে সংবর্ধনাস্থলে নিয়ে যান।

বিদায় অনুষ্ঠানের আসস অলংকৃত করেন অনুষ্ঠানের মধ্যমনি বিদ্যালয় কর্মচারী আবছার।একসময় শিক্ষকদের পাশাপাশি একসারিতে অনুষ্ঠানে বসার সুযোগ না হলেও আজ অনুষ্ঠানটার আয়োজনই তাকে ঘিঁরে।সংবর্ধনায় সহকর্মী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের অনেকে তার কর্মময় জীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন, সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নানা উপহার সামগ্রী, অর্থ সহায়তা দিয়ে সম্মান জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এদিন, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে এবং শিক্ষক নিতাই দাশের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলম, আছিউর রহমান, রেজাউল করিম, তারেক নিজামী, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের অভিভাবক সদস্য আবু সুফিয়ান চৌধুরী, শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস, মারিয়া আক্তার, কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস হাবিবা, মেহেদী হাসান, তাহসিনা তাবাচ্ছুম তানিশা, বিবি ফাতেমা, ওবায়দুল ইসলাম চৌধুরী।এ সময় অনুভূতি ব্যক্ত করেন সংবর্ধিত স্কুল কর্মচারী নুরুল আবছারও।

সংবর্ধনা শেষে শেরওয়ানি পাগড়ি পরিয়ে নুরুল আবছারকে ঘোড়ার গাড়িতে করে বিদায় জানান প্রিয় বিদ্যাঙ্গন থেকে। স্কাউট দলের সদস্যরা বাদ্যের তালে তালে এবং বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী সারিবদ্ধভাবে তাকে জোরারগঞ্জ বাজার প্রদক্ষিণ শেষে বাড়ি পৌঁছে দেন। এসময় অন্যরকম এক আবহ সৃষ্টি হয়।

এসময় নুরুল আবছার বলেন, ১৬০ টাকা বেতনে এই স্কুলে চাকরি শুরু করি। এরপর একপর্যায়ে ৩ মাসে মিলে সরকারিভাবে ৩৬০ টাকা বেতন পেতাম। আজ আমার বিদায়ের মধ্যদিয়ে আমাদের ৪ প্রজন্মের কর্মচারী হিসেবে চাকরি জীবনের সমাপ্তি হল। চাকরি জীবনে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী এ স্কুলে চাকরি করেছেন। আমাকে যেভাবে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে সেটি আমি আগে কখনো দেখিনি। আমি বর্তমান প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলমসহ সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের কর্মচারী নুরুল আবছার তার জীবনের মূল্যবান সময়টুকু এই বিদ্যালয়ে কাটিয়েছেন। তার বর্ণাঢ্য বিদায় অনুষ্ঠানের মাঝেও আমাদের অনেককিছু শেখার আছে। এখানে শেখার আছে যে বিষয়টি সেটা হলো ভালো কাজ করলে সততার সাথে চললে তার কখনো না কখনো স্বীকৃতি মিলে। অবশেষে নুরুল আবছারও তার ভালোভাবে কাটানো কর্মজীবনের স্বীকৃতি পেলেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলম বলেন, তিনি এতটাই বিশ্বস্ত যে বিদ্যালয়ের সব লেনদেন করতেন। অনেক সময় ৮-১০ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতেন আবার বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে ৮-১০ লাখ টাকা তুলে আনতেন। আমি এ বিদ্যালয়ে পাঠদান করছি প্রায় ১৮ বছর। এরমধ্যে তিনি কখনো ১ টাকাও এদিক সেদিক করেননি। এ রকম বিশ্বস্ত কর্মচারী আমরা আর পাবো কিনা জানি না।