১৫ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৮:১৮:০৬ অপরাহ্ণ, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪
  • ৭৪৯ বার পড়া হয়েছে

মাত্র ১৫ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশে দুই ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এরই মধ্যে রবিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন হালদারকে (৩৫) গুলিতে নিহত হয়েছেন। এর আগে শনিবার রাতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবি (৪৮)।

মুন্সীগঞ্জ : পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার বেলা দেড়টার দিকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের ওয়াহেদ আলী উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এতে সভাপতি পদে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী স্থানীয় মনির দেওয়ান ৯ ভোট ও পাঁচগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মিলেনুর রহমান পান ২ ভোট। নির্বাচনী ফল ঘোষণার পর স্কুলের মাঠে মিলেনুর রহমান ও মনির দেওয়ান গ্রুপের মধ্যে হট্টগোল লাগে। সভাপতি পদে ভোটে হেরে যাওয়া মিলেনুর রহমানের সমর্থক নুর মোহাম্মদ হালদার ওই সময় ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন হালদারকে দোষারোপ করে তেড়ে যায়। সুমন হালদার তার প্রতিবাদ করলে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে নূর মোহাম্মদ পিস্তল বের করে প্রকাশ্যে ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন হাওলাদারকে গুলি করেন। স্থানীয় লোকজন চেয়ারম্যান সুমন হালদারকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন হালদারের ছোট ভাই ইমন হালদার এই ঘটনার বিষয়ে বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যা। গত ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনে আমার ভাই সুমন জয়লাভ করে, প্রতিদ্বন্দ্বী মিলেনুর মিলন পরাজিত হন। তখন থেকেই আমার ভাইয়ের প্রতি তারা ক্ষুব্ধ এবং সেই জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড।

এদিকে এই গুলিবিদ্ধ হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান। তিনি জানান, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে প্রকাশ্য ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হচ্ছেন শেখ নূর হোসেন হালদার, কাউসার হালদার ও নূর হালদার।

টঙ্গিবাড়ী থানার ওসি মোল্লা সোয়েব আলী জানান, হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।

খুলনা : ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবি (৪৮) দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ওয়াপদার মোড় স্থানে এ হত্যাকা- ঘটে। ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহত রবি ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।

রবিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পোস্টমর্টেম শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। তবে হত্যাকাণ্ডে র ঘটনায় কোনো মামলা বা সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের শহিদ জোবায়েদ আলী মিলনায়তনে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শেষে ৮ নম্বর শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবি মোটরসাইকেলে খুলনার বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের গুটুদিয়া ওয়াপদার মোড় নামকস্থানে পৌছালে দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে পেছন দিক থেকে ৪/৫ রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। এ সময় পিঠে একাধিক গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয় লোকজন তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ হোসেন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি পিঠে ৭টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। বিগত ইউপি নির্বাচনে তিনি দলের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ কারণে তার ওপরে অনেকে ক্ষিপ্ত ছিলেন।

ডুমুরিয়া থানার ওসি সুকান্ত সাহা বলেন, খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। সেখান থেকে ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবির ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে হত্যাকা-ের ঘটনায় কোনো মামলা বা সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

১৫ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা

আপডেট সময় : ০৮:১৮:০৬ অপরাহ্ণ, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪

মাত্র ১৫ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশে দুই ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এরই মধ্যে রবিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন হালদারকে (৩৫) গুলিতে নিহত হয়েছেন। এর আগে শনিবার রাতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবি (৪৮)।

মুন্সীগঞ্জ : পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার বেলা দেড়টার দিকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের ওয়াহেদ আলী উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এতে সভাপতি পদে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী স্থানীয় মনির দেওয়ান ৯ ভোট ও পাঁচগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মিলেনুর রহমান পান ২ ভোট। নির্বাচনী ফল ঘোষণার পর স্কুলের মাঠে মিলেনুর রহমান ও মনির দেওয়ান গ্রুপের মধ্যে হট্টগোল লাগে। সভাপতি পদে ভোটে হেরে যাওয়া মিলেনুর রহমানের সমর্থক নুর মোহাম্মদ হালদার ওই সময় ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন হালদারকে দোষারোপ করে তেড়ে যায়। সুমন হালদার তার প্রতিবাদ করলে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে নূর মোহাম্মদ পিস্তল বের করে প্রকাশ্যে ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন হাওলাদারকে গুলি করেন। স্থানীয় লোকজন চেয়ারম্যান সুমন হালদারকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন হালদারের ছোট ভাই ইমন হালদার এই ঘটনার বিষয়ে বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যা। গত ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনে আমার ভাই সুমন জয়লাভ করে, প্রতিদ্বন্দ্বী মিলেনুর মিলন পরাজিত হন। তখন থেকেই আমার ভাইয়ের প্রতি তারা ক্ষুব্ধ এবং সেই জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড।

এদিকে এই গুলিবিদ্ধ হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান। তিনি জানান, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে প্রকাশ্য ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হচ্ছেন শেখ নূর হোসেন হালদার, কাউসার হালদার ও নূর হালদার।

টঙ্গিবাড়ী থানার ওসি মোল্লা সোয়েব আলী জানান, হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।

খুলনা : ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবি (৪৮) দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ওয়াপদার মোড় স্থানে এ হত্যাকা- ঘটে। ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহত রবি ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।

রবিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পোস্টমর্টেম শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। তবে হত্যাকাণ্ডে র ঘটনায় কোনো মামলা বা সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের শহিদ জোবায়েদ আলী মিলনায়তনে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শেষে ৮ নম্বর শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবি মোটরসাইকেলে খুলনার বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের গুটুদিয়া ওয়াপদার মোড় নামকস্থানে পৌছালে দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে পেছন দিক থেকে ৪/৫ রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। এ সময় পিঠে একাধিক গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয় লোকজন তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ হোসেন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি পিঠে ৭টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। বিগত ইউপি নির্বাচনে তিনি দলের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ কারণে তার ওপরে অনেকে ক্ষিপ্ত ছিলেন।

ডুমুরিয়া থানার ওসি সুকান্ত সাহা বলেন, খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। সেখান থেকে ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবির ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে হত্যাকা-ের ঘটনায় কোনো মামলা বা সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।