নিউজ ডেস্ক:জীবননগর উপজেলার হাসাদহ-রায়পুর সড়ক প্রশস্তকরণের অজুহাতে একটি অসাধু মহল সড়কের দুই ধারে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির গাছ কোনো টেন্ডার ছাড়ায় কেটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ও সামাজিক বনায়ন সমিতির নেতাদের ম্যানেজ করে এসব গাছ কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ভাবে গাছ কেটে সাবাড় করার কারণে এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে দেখা গেছে, জীবননগর উপজেলা হাসাদহ-রায়পুর সড়কের মাধবপুর সাগরঘাটা ব্রিজ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তার দুই ধারে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান বড় বড় গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। উপজেলা বন সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মচারী মাহবুুবুর রহমান কাটা গাছের কিছু দূরেই অবস্থান করছেন। গাছগুলো কাটার পর গাছের ডালপালা সাথে সাথেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, গাছের বড় বড় লগগুলো নেওয়া হচ্ছে সামাজিক বনায়ন সমিতির সম্পাদক হাবিবুর রহমান হবির বাড়ি-সংলগ্ন স্থানে। সামাজিক বনায়ন সমিতির সৃজন করা বাগানের বাইরেও সরকারি রাস্তায় থাকা বিগত ২৫-৩০ বছর আগে সৃজন করা কিংবা তার আগে বেড়ে ওঠা মূল্যবান গাছ কেটে নেয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। ফলে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব গাছের মধ্যে কিছু গাছ চলে যাচ্ছে প্রভাবশালী মহলের বাড়ির আসবাব তৈরির জন্য নির্দিষ্ট স্থানে।
এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাসাদহ-রায়পুর সড়কে কয়েক যুগ ধরে বেড়ে ওঠা বিভিন্ন প্রজাতির গাছের মাঝে সামাজিক বনায়নের বাগান সৃজন করা হয়। সামাজিক বনায়ন কর্তৃক সৃজন করা বাগান সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় অধিকাংশ গাছ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এখন সামাজিক বনায়নের গাছ কাটার নামে রাস্তার সমস্ত গাছপালা কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। রাস্তা প্রস্তুকরণের অজুহাতে রাস্তার দুই ধারের গাছপালা কেটে এলাকাকে মরুভূমি বানানো হচ্ছে। এতে করে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার শঙ্কা থাকলেও লাভবান হচ্ছে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। সামাজিক বনায়নের সৃজন করা গাছের পাশাপাশি বড় বড় মেহগুনি, চটকা, শিশু, নিম ইত্যাদি মূল্যবান গাছও কেটে নেওয়া হচ্ছে।
হাসাদহ-রায়পুর সড়কে সামাজিক বনায়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হবি বলেন, ‘রাস্তা প্রশস্তকরণের কারণে ঠিকাদার ভেকু মেশিন দিয়ে প্রথমে কয়েকটি গাছ তুলে ফেলে দেয়। গাছ কাটার ব্যাপারে কোনো টেন্ডার হয়নি। বনবিভাগ রেঞ্জার সব ক্ষমতার মালিক। ইউএনও স্যারের সাথে বনবিভাগের মিটিং হয়। ওই মিটিংয়ে আমাদেরকে ডাকা হয়নি। তবে মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গাছ কাটা হচ্ছে এবং কাটা শেষ হলে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ বিক্রি করা হবে। দুই-একটি ছাড়া কোনো গাছ মরা নয়। গাছের গুড়িগুলো আমার বাড়ির কাছে রাখা হচ্ছে আর ডালপালা বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।’
উপজেলা বন সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম কাজল বলেন, ‘সামাজিক বনায়নের গাছগুলো বাধ্য হয়ে কাটা হচ্ছে। রাস্তা প্রশস্তকরণে ঠিকাদার গাছগুলো ভেকু মেশিন দিয়ে উপড়ে ফেলছিল। তা ছাড়া যে গাছগুলো কাটা হচ্ছে, তা অধিকাংশ মরা গাছ। সমিতির লোকজন গাছ কাটছে আর আমাদের লোকজন সেগুলো দেখভাল করছেন। সমিতির লাগানো গাছই কাটা হচ্ছে। টেন্ডার হয়নি ঠিক, তবে বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানানো হয়েছে। কাটা গাছগুলো সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের নেতা হাবিবুর রহমান হবির বাড়িতে রাখা হচ্ছে। পরবর্তীতে টেন্ডার দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘হাসাদহ-রায়পুর সড়কে গাছ কাটার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। এ বিষয়ে আগে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, আমার মনে পড়ছে না। কারণ, সামাজিক বনায়নের গাছ কাটার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগে এবং তারপর কাটার সিদ্ধান্ত হয়।’