রিপোর্ট : ইমাম বিমান: “কালেমাগো মুসলমান এক হও এক হও” এই স্লোগানকে সামনে রেখে ২২ ফেব্রুয়ারী বাদ মাগরিবে শুরু হওয়া দুই দিন ব্যাপী ঝালকাঠি নেছারাবাদ দরবার শরীফের বার্ষিক ইছালে সাওয়াব মাহফিল সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুরের উদ্ভোধনী বক্তব্যের মধ্যে শুরু হওয়া দুই দিন ব্যাপী ইছালে ছাওয়াব মাহফিলের শেষ দিনে সমাপনি বয়ানের মাধ্যমে সভাপতির ভাষণে মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুর বলেন, “ব্যক্তিকে নয় বরং সমষ্টিকে নিয়েই ইসলাম” এজন্যই আল্লাহ তায়ালা ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং নিজের পাশাপাশি অন্যদেরকেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর হুকুম করেছেন। তাই মুমিনের কর্তব্য হচ্ছে শয়তানের হাত থেকে নিজেকে, সমাজকে এবং রাষ্ট্রকে হেফাজত করা। কেননা আত্মশুদ্ধি, সমাজশুদ্ধি ও রাজনৈতিক সংশোধন ব্যতীত মুসলমানের ঈমান পূর্ণ হতে পারে না। হাদীস শরীফে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর একজন খাস ওলীসহ একটি জনপদ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন; কারণ ঐ আল্লাহর ওলী নিজে আত্মশুদ্ধি করেছিলেন বটে কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্র সংশোধনের ব্যাপারে তিনি কিছুই করেননি। আপনি নিজে শয়তানের হাত থেকে বেঁচে ভাল মানুষ সেজে বসে থাকবেন আর ফেরেশতারা এসে আপনাকে মাথায় তুলে বেহেশ্তে নিয়ে যাবে; এ আশা আহাম্মকের হতে পারে, প্রকৃত ঈমানদারের নয়। নিজে অন্যায় করবো না-ঠিক আছে কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদ-প্রতিরোধে সামার্থানুযায়ী সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে; তবে তা যেন হয় একমাত্র মাওলা পাকের রেযা ও খুশির উদ্দেশ্যে, দুনিয়ার বাহ্বা যেন মকসুদ না হয়।
এ সময় নেছারাবাদী হুজুর তার সমাপনি বয়ানের মাধ্যমে সরকারের নিকট বিভিন্ন বিষয়ে ০৬ দফা প্রস্তাব ঘোষনা করেন। ঝালকাঠি এনএস কামিল (নেছারাবাদ) মাদ্রাসা ময়দানে ২ দিন ব্যাপী মাহফিলের শনিবার বাদ ফজর সমাপনি ভাষণে তিনি এ প্রস্তাব দেন। নেছারাবাদী হুজুরের ০৬ দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- ১. সিরাতুল মুস্তাকীম-বর্জিত উগ্র ও শিথিলপন্থীদের প্রতিরোধ পূর্বক সহজ-সরল-নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষকে তাদের কবল থেকে রক্ষা করা; ০২. সাম্প্রদায়িকতামুক্ত আদর্শ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ইসলামী নেজাম প্রতিষ্ঠার ইস্যুতে ‘ইত্তেহাদ মায়াল ইখতেলাফ’- মতানৈক্যসহ ঐক্য নীতির আলোকে ইসলামপন্থী ও দেশপ্রেমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া; ০৩. আসন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রত্যেক দল থেকে সৎ-যোগ্য-দেশপ্রেমিক ও যেকোনো ধর্মের ধার্মিক ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া এবং ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে উপরোক্ত গুণের অধিকারী ব্যক্তিকেই ভোটারদের ভোট দেয়া; ০৪. জাতিকে মেধাশূন্য করার পাঁয়তারা রোধে প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ সর্বপ্রকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমাজের সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা; ০৫. মাতৃসমাজের মর্যাদা রক্ষায় এবং সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধে বেপর্দেগী, অশ্লীলতা, পর্ণগ্রাফী ও কুরুচিপূর্ণ অনুষ্ঠান বন্ধসহ এসবের লালনকারী সংস্থা ও মিডিয়াসমূহকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা এবং ০৬. শতাব্দীর ভয়াবহ নিধন যজ্ঞের শিকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষায় এবং বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে সামরিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টিসহ বর্মী সরকার ও তথাকথিত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদেরকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের জন্য শক্তিশালী ক‚টনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।
প্রস্তাব শেষে নেছারাবাদী হুজুর আরো বলেন- ‘শয়তানের ওয়াসওয়াসার কারণে মানুষ দুনিয়ার মোহে অন্ধ হয়ে যায়, অনেক সময় পাপকেও সে পাপ বলে মনে করে না; আর একটা সমাজে যখন অধিকাংশ মানুষ পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে তখন আল্লাহ তায়ালা ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অত্যাচারী শাসকদের মতো মারাত্মক বিপদ চাপিয়ে দিয়ে সেই সমাজকে ধ্বংস করে দেন। আজ বিশ্বব্যাপী উগ্রতার পাশাপাশি শাসনের নামে স্বৈরাচার এবং ধর্মীয় ও রাজনৈতিক হানাহানিসহ সুদ-ঘুষ, দুর্নীতি-দুষ্কৃতি, বেপর্দেগী-ব্যভিচার, অশ্লীলতা-বেহায়াপনা, মদ-জুয়া ইত্যাদি অন্যায়-অপকর্মের যে মহামারি আমরা লক্ষ্য করছি, এর একমাত্র কারণ হচ্ছে- শয়তান নির্মিত দুনিয়াদারী এবং ঈমানদারদের অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা। সুতরাং দল-মত-ছেলছেলা নির্বিশেষে প্রত্যেক ঈমানদারকে ‘ইত্তেহাদ মায়াল ইখতেলাফ’- ‘মতানৈক্যসহ ঐক্য’ নীতির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং শয়তান থেকে বাঁচার জন্য ছলফে-ছালেহীন ও আওলিয়ায়ে কেরামের পদাঙ্ক অনুসরণ পূর্বক হামেশা আল্লাহ পাকের যিকিরে মশগুল থাকতে হবে, অন্যথায় ঈমান হারানোর ভয়াবহ পরিণতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, ওলীয়ে কামেল, প্রখ্যাত দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. প্রতিষ্ঠিত ঝালকাঠি নেছারাবাদ দরবার শরীফের এ মাহফিলে ওয়াজ-নসীহতের পাশাপাশি ইসলামী জীবন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় তা’লীম ও প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য গত ২২ ফেব্রুয়ারী বাদ মাগরিব নেছারাবাদী হুজুরের উদ্বোধনী বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয় দুই দিন ব্যাপী ইছালে ছাওয়াব মাহফিলে দেশের খ্যাতনামা মুহাক্কেক ওলামায়ে কেরাম এতে উপস্থিত থেকে মূল্যবান নসীহত পেশ করেন। ৮টি প্যান্ডেল, ৫ শতাধিক মুয়াল্লিম, ১০ সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক সেই সাথে মাহফিল এরিয়ায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা দিতে সিসি ক্যামেরা ও জেলা পুলিশের তদারকিতে এবারের মাহফিলে প্রায় ০৩ লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশগ্রহন করলেও কোন সমস্যা ছাড়াই মাহফিল সম্পন্ন হয়।