সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে পরিকল্পনা করে কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. মনিরুজ্জামান ও নার্স জোবেদাকে হত্যা করে পরিচ্ছন্নকর্মী লাকী খাতুন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচ্ছন্নকর্মী (আউট সোসিং) লাকী খাতুনকে (৪৫) চাকরিচ্যুত করা, খারাপ ব্যবহার, বকাঝকা করা এবং দীর্ঘ সময় ডিউটি করানোর ক্ষোভ থেকেই পরিকল্পিতভাবে চিকিৎসক ও নার্সকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ একথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, খাবারের সঙ্গে উচ্চ মাত্রার বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। বিষয়টি খাবার পরিবেশনকারী পরিচ্ছন্নকর্মী আটক লাকী খাতুন রিমান্ডে স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে লাকী খাতুন ৬ মে সিরাজগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) দুপুরে কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী এসএম আলমগীরের (৪৭) বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচ অ্যান্ড এফপিও ডা. মনিরুজ্জামান, সিনিয়র স্টাফ নার্স জোবেদা খাতুন ও আলমগীর হোসেন। পরে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে নার্স জোবেদা খাতুন ও পরে ডা. মনিরুজ্জামনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় কাজিপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপর দেয়া হয়। পরে ডিবি পুলিশ ৩ মে সন্ধ্যায় কাজীপুর উপজেলার বেড়ীপোটল গ্রামের জহরুল ইসলামের স্ত্রী লাকি খাতুনকে আটকের পর ৩দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও জানান, ডা. মনিরুজ্জামান তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। চাকরিচ্যুত করার ভয় দেখাতেন। বিষয়টি তিনি তার পরকীয়া প্রেমিক তোমছের আলীকে অবগত করেন। ইতোপূর্বে তোমছেরের স্ত্রীকে হাসপাতালে আয়া পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে ডা. মনিরুজ্জামান তাকে চাকরি দেয়নি। এতেও ক্ষুব্ধ ছিল তোমছের আলী। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রেমিকা তোমছের আলী ও পরকীয়া প্রেমিকা লাকী খাতুন মিলে ডা. মনিরুজ্জামানকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তাদের হত্যার জন্য স্থানীয় আশরাফ আলী ওরফে আছাব আলী কবিরাজের কাছে থেকে বিষ আনে। গত ২৫ এপ্রিল লাকী খাতুন ও পিয়ন চাঁন মিয়া অফিস সহকারী আলমগীরের বাড়ি থেকে খাবার আনেন। পরে ডা. মনিরুজ্জামানের পাশের কক্ষে খাবার রেখে তাতে বিষ মিশিয়ে ডা. মনিরুজ্জামান, নার্স জোবেদা খাতুন ও অফিস সহকারী আলমগীরকে খেতে দেয়। এই খাবার খেয়ে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর রাতে ডা. মনিরুজ্জামান ও নার্স জোবেদা খাতুনের মৃত্যু হয়। আলমগীর হোসেন এখনও শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ পরিচ্ছন্নকর্মী লাকী খাতুন তার পরকীয়া প্রেমিক তোমছের আলী ও কবিরাজ আশরাফ আলীকে গ্রেফতার করেছে।###