সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
প্রায় ২০ বছর ধরে ভারতে অবস্থান করছেন জিতেন্দ্র নাথ পোদ্দার। ২০০৭ সালে এনআইডি কার্ড করতে অল্পদিনের জন্য এসে ফিরে যান। এরপর দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশেও আসেননি, নিজের রেখে যাওয়া জমিও বিক্রি করেননি।
অথচ সেই জিতেন্দ্র নাথ পোদ্দারের জমি জালিয়াতির মাধ্যমে রেজিষ্ট্রি করে নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে।
অভিযোগ উঠেছে সাব-রেজিষ্ট্রার মাসুদ রানা, অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম ও দলিল লেখক আব্দুল মতিনের যোগসাজসে ভুয়া ক্রেতার জাল স্বাক্ষরে ৩০ লাখ টাকা মূল্যের জমি রেজিষ্ট্রি করা হয়। আর এর মূল হোতা বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার সমীরন মণ্ডল নামে এক প্রতারক।
এ বিষয়ে দলিল বাতিলের জন্য বেলকুচি সাব-রেজিষ্টার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জিতেন্দ্রনাথ পোদ্দারের ভাতিজা উত্তম কুমার পোদ্দার। ভুক্তভোগী জিতেন্দ্র উপজেলার গাবগাছী গ্রামের মৃত বেনী মাধব পোদ্দারের ছেলে।
গাবগাছি গ্রামের উত্তম কুমার পোদ্দার, শচীন্দ্র নাথ, খুশি রানী পোদ্দার ও দুলালী পোদ্দারসহ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি জিতেন্দ্র নাথ পোদ্দারের রেকর্ডীয় বাড়ি ও ফসলী জমির ২৮.৩৮৩ শতাংশ রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছেন বীরেন্দ্র নাথ পোদ্দার।
তারা বলেন, ২০-২২ বছর আগে জিতেন্দ্র নাথ পোদ্দার ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। ২০০৭ সালে দেশে কয়েকদিনের জন্য এসেছিলেন। এরপর ১৮ বছর ধরেই ভারতে রয়েছেন তিনি। ভারতে অবস্থান করা জিতেন্দ্র নাথের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, তিনি দেশেই আসেননি, তার জমি রেজিষ্ট্রি হয় কিভাবে?
এদিকে ওই জাল স্বাক্ষরে রেজিষ্ট্রি করে নেওয়া জমি বিক্রির জন্য দফায় দফায় বাড়িতে ক্রেতা নিয়ে আসছেন সমীরন মন্ডল। ইতিমধ্যে বাড়িতে থাকা দুটি ঘর ও স্থাপনা ভেঙে বিক্রিও করেছেন তিনি।
অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক শচীন্দ্র নাথ বলেন, জিতেন্দ্র নাথের বড় ভাই বীরেন্দ্র নাথ। তিনি অনেকটা বয়োবৃদ্ধ। তার কোন ছেলে নেই, একমাত্র মেয়ে ও মেয়ে জামাই সমীরন মন্ডলই সকল সম্পত্তির ওয়ারিশ হবেন। এ জন্য বয়োবৃদ্ধ শ্বশুরের নামে ওই জমি জাল দলিল করে নিয়ে এখন বিক্রির চেষ্টা করছেন সমীরন।
এই জাল দলিলের সঙ্গে বেলকুচি সাব রেজিষ্ট্রার, অফিসের কর্মচারি এবং দলিল লেখকও জড়িত বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান।
এদিকে ভারতে থাকা জিতেন্দ্র নাথ বলেন, আমার বাড়িতে ও মাঠে বেশ কিছু সম্পত্তি আছে। ওই সম্পত্তি আমি বিক্রি করিনি। আমি ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশেই যাইনি। শুনলাম আমার জমি দলিল করে নিয়েছে। সমীরন একটা প্রতারক। সে ষড়যন্ত্র করেই এমনটা করেছে। আমি শীঘ্রই দেশে এসে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সমীরন মন্ডল বলেন, জিতেন্দ্র নাথ মন্ডল দেশেই আছেন। আমরা তাকে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে জমিটা কিনেছি। দেশে কোথায় আছেন-এমন প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে উল্টো সাংবাদিদেরকেই খুঁজে বের করতে বলেন।
দলিল লেখক আব্দুল মতিন বলেন, আমি কাগজপত্র ভালো পেয়েছি। এক ভাইয়ের সম্পত্তি আরেক ভাই কিনছে। আমি শুধু দলিলটা লিখে দিয়েছি। বিক্রেতা জিতেন্দ্র নাথ উপস্থিত ছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তো সেটা বলতে পারবো না, কাগজপত্র ভোটার আইডি কার্ড, ছবি এবং লোক আমার অফিসের সামনে জমা দিয়েছি স্যার রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছেন। আমি তো লোকজন চিনি না।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে সাব-রেজিষ্ট্রার মাসুদ রানার কাছে গেলে, তিনি ভিডিও বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, আমি আইনের ছাত্র। দলিল জাল হয়েছে কিনা সেটা আদালত বুঝবে।
জিতেন্দ্র নাথ দেশে না আসলেও তার জমি রেজিষ্ট্রি কিভাবে হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কমিশন গঠন করে দিয়েছিলাম। অফিস সহকারির নেতৃত্বে কমিশন তার বাড়িতে গিয়ে রেজিষ্ট্রি করেছে। এখানে আমার কোন দায় নেই।
জেলা রেজিষ্টার শরীফ তোরাফ হোসেন বলেন, জাল দলিল হয় না, ব্যক্তি পরিবর্তন হতে পারে। তবে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
 
            











 নীলকন্ঠ ডেস্ক:
 নীলকন্ঠ ডেস্ক: 





































