ইবিতে রোভার স্কাউটসের বার্ষিক তাঁবুবাস ও দীক্ষানুষ্ঠান সম্পন্ন
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) রোভার স্কাউট গ্রুপের শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ, নেতৃত্ব ও মানবসেবার মানসিকতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনদিনব্যাপী বার্ষিক তাঁবুবাস ও দীক্ষানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বরে সমাপনী পর্বের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হয়।
তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাম্প কার্যক্রম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দীক্ষানুষ্ঠান, বৃক্ষরোপণ, সমাজসেবামূলক কার্যক্রমসহ নানা আয়োজন করা হয়। এছাড়াও হাইকিং, স্কাউটিং সেশন, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও দীক্ষা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রোভার সদস্যরা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় শৃঙ্খলা, নেতৃত্ব, সহযোগিতা ও মানবসেবার শিক্ষা অর্জন করেন।
বার্ষিক তাঁবুবাস ও দীক্ষানুষ্ঠানে অংশ নেওয়া রোভার স্কাউটস সদস্য মো: রিপন ইসলাম বলেন, “এটি ছিল আমার জীবনের প্রথম রোভার স্কাউট ক্যাম্পিং। ক্যাম্পিং শব্দটি শুনলেই আগে থেকেই ভিন্ন রকম অনুভূতি কাজ করত। অবশেষে ক্যাম্পিংয়ে যাওয়ার সুযোগ হলো, তখন বুঝলাম এটি সত্যিই এক অসাধারণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। উপদলে ভাগ হয়ে তাঁবু টাঙানো, বাঁশ-দড়ি দিয়ে কাজ করা, ছয় প্রকার গিঁট ও ল্যাশিং ব্যবহার করে বিভিন্ন গ্যাজেট তৈরি—সবকিছুই ছিল ব্যতিক্রমী ও শিক্ষণীয়। প্রতিদিন অনুষ্ঠিত হতো সেরা গ্যাজেট উপস্থাপনা ও গৌরব পতাকা প্রদান। আলহামদুলিল্লাহ্, আমাদের দল ‘বিনয়ী’ গৌরব পতাকা অর্জন করেছিল। সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অংশ ছিল হাইকিং। রোড ম্যাপ ব্যবহার, সাংকেতিক চিহ্ন প্রয়োগ, কোড ডিকোড করার মতো কাজগুলো এটিকে আরও আকর্ষণীয় ও অ্যাডভেঞ্চারাস করে তুলেছিল। প্রতিদিনের স্কাউটিং সেশন থেকে শিখেছি কীভাবে স্কাউট আইন, নিয়ম ও নীতি ধারণ করতে হয় এবং সর্বদা অপরের সেবায় প্রস্তুত থাকতে হয়। এই ক্যাম্প থেকে সবচেয়ে বড় শিক্ষা ছিল টিমওয়ার্ক, সময় ব্যবস্থাপনা ও আন্তরিকতা।”
পাঁপড়ি রানী মোদক নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “ইতিমধ্যেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপ আয়োজিত বার্ষিক তাঁবুবাস ও দীক্ষানুষ্ঠান ২০২৫ সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সহচরগণ দীক্ষা অর্জন করে সদস্য পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। ২০, ২১ ও ২২ আগস্ট তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই দীক্ষানুষ্ঠান আমার জন্য ছিল এক অভিনব অভিজ্ঞতা, বরং জীবনের প্রথম ক্যাম্পিংও বলা চলে।
এই ক্যাম্পিংয়ে গ্যাজেট তৈরি, তাবু নির্মাণের মাধ্যমে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কীভাবে টিকে থাকতে হয় তা শিখেছি। এছাড়াও অন্যতম আকর্ষণ ছিল হাইকিং। কম্পাস ব্যবহার করে দিক নির্ধারণ, সাংকেতিক চিহ্ন প্রয়োগ এবং বিভিন্ন কোড ডিকোড করে উদ্দেশ্যমূলক ভ্রমণকে সফল করার কৌশল আয়ত্ত করতে পেরেছি। ক্যাম্প ফায়ার ও তাবু জলসা ছিল আরেকটি উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ, যা সুস্থ সাংস্কৃতিক মনন চর্চার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।
সবশেষে, প্রচণ্ড শারীরিক কসরতের মধ্য দিয়ে কীভাবে প্রতিটি পরিস্থিতিতে টিকে থেকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা যায়, সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আর এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই মানবতা, দেশ ও বিশ্বের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার অঙ্গীকার করেছি। যার মূল মন্ত্র—‘সেবায় সদা প্রস্তুত থাকা’। দীক্ষা লাভের মাধ্যমে বিশ্ব স্কাউট আন্দোলনের একটি অংশ হতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত, প্রফুল্ল ও গর্বিত।”
অন্য অংশগ্রহণকারী মো: নুরুন্নবী আকন্দ নিজের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, “তিন দিনব্যাপী এই তাঁবুবাস ও দীক্ষানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ আমার জীবনের ভোলার মতো নয়। প্রথম দিনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় উপাচার্য ও রোভার স্কাউট গ্রুপের সভাপতি অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো: রফিকুল ইসলাম। তাদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। দ্বিতীয় দিনে হাইকিং ছিল আমার কাছে সবচেয়ে চমৎকার অভিজ্ঞতা। প্রাকৃতিক পরিবেশে দলগতভাবে হাঁটা, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা এবং পথে পথে আনন্দ করা—সবই নতুন উদ্দীপনা জাগিয়েছে। তৃতীয় দিনে দীক্ষা অনুষ্ঠানে শপথ গ্রহণের মুহূর্তটি ছিল সবচেয়ে আবেগময়। মনে হয়েছিল মানবসেবা ও আদর্শ জীবন গঠনের এক নতুন দায়িত্ব কাঁধে এসেছে।”
বার্ষিক তাঁবুবাস ও দীক্ষানুষ্ঠানের সার্বিক বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কাউট গ্রুপের ইউনিট কাউন্সিল সভাপতি মো: দিদারুল ইসলাম রাসেল বলেন, “রোভার স্কাউট শুধু একটি সংগঠন নয়, এটি মানুষের সেবায় নিয়োজিত একটি পরিবার। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে সমাজে নেতৃত্ব গড়ে তুলতে এবং মানবকল্যাণে কাজ করতে। আমার বিশ্বাস, প্রতিটি রোভার সততা, শৃঙ্খলা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এ আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের শতাধিক রোভার স্কাউট অংশ নেয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রোভার স্কাউট গ্রুপের সভাপতি অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো: রফিকুল ইসলাম। তাদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যে রোভার সদস্যরা নতুন উদ্দীপনা লাভ করে।