চীনের কুনমিংয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হলেও একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্লিউজি) গঠনে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ। কূটনৈতিক সূত্র অনুযায়ী, চীন এই জেডব্লিউজি গঠনের প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশ তা প্রত্যাখ্যান করে, কারণ প্রতিনিধি দলের এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমোদন ছিল না এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল।
বৈঠকের পর চীন যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশ তাতেও রাজি হয়নি। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হয় যে, চীন ও পাকিস্তান আলাদাভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে খসড়া দেখতে চাইলে, খসড়ার কয়েকটি বিষয়ে, বিশেষ করে জেডব্লিউজি গঠনের প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ভিন্নমত পোষণ করে। বাংলাদেশের আপত্তি সত্ত্বেও চীন গত শুক্রবার (২০ জুন, ২০২৫) তাদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তবে পাকিস্তান তাদের বিজ্ঞপ্তির খসড়া বাংলাদেশকে দেখায়নি।
পাকিস্তানের বিজ্ঞপ্তিতে এই বৈঠককে ‘বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তান ত্রিপক্ষীয় কাঠামোর প্রথম বৈঠক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা একটি নতুন জোট গঠনের ইঙ্গিত দেয়। তবে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এই বিষয়ে স্পষ্ট করেছেন যে, কুনমিংয়ের বৈঠকে কোনো জোট গঠনের সিদ্ধান্ত হয়নি। মূলত বেশ কিছু খাতে সম্ভাব্য ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ জেডব্লিউজি যুগ্ম সচিব পর্যায়ে করার এবং প্রথম বৈঠক ইসলামাবাদে করার প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশের আপত্তির কারণে এ নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
জানা গেছে, গত মাসের মাঝামাঝি চীন বাংলাদেশকে এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে আমন্ত্রণ জানালেও বাংলাদেশ বৈঠকে যোগ দেওয়া নিয়ে দ্বিধায় ছিল। কারণ, বৈঠকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে চীন তখন কোনো স্পষ্ট ধারণা দেয়নি। সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন কূটনীতিকের মতে, বাংলাদেশের এই বৈঠক এড়িয়ে চলাই উচিত ছিল, কারণ এই উদ্যোগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।
চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডং, বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী এবং পাকিস্তানের অতিরিক্ত সচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ ভিডিও লিংকের মাধ্যমে বৈঠকে যুক্ত ছিলেন।