ভরণপোষণের জন্য টাকা চাওয়ায় বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা মাকে বেধড়ক মারধর করেছে আপন ২ ছেলে ও তাদের স্ত্রী। বৃদ্ধ বাবা-মা কে ভরনপোষণ না দিয়ে বরং দিনের পর দিন শারিরীকভাবে নির্যাতন করে রক্তাক্ত করে যাচ্ছে তাদের বড় ছেলে সুলতান গাজী তার স্ত্রী সুমি বেগম, মেজু ছেলে শরীফ গাজী তার স্ত্রী আমেনা বেগম।
স্থানীয়রা এই বিষয়ে একাধিক বার বৃদ্ধ বাবা-মা’ র ছেলে সুলতান গাজী ও শরীফ গাজীকে সতর্ক করে দিলেও তারা সবাইকে অমান্য করে প্রতিনিয়ত তাদের বাবা-মাকে অত্যাচার নির্যাতন করেই যাচ্ছে। আর এই নেক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুর সদর উপজেলার ৬নং মৈশাদী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড উত্তর মৈশাদীর গাজী বাড়িতে।
নির্যাতনের শিকার ওই অসুস্থ বৃদ্ধ বাবার নাম মোঃ মালেক গাজী (৭৭) ও মায়ের নাম আমেনা বেগম (৬৭)। ৩ ছেলে ৩ মেয়ে নিয়ে ছিল তাদের অভাবের সংসার।
মালেক গাজী রিকশা চালিয়ে বহু কষ্টের মাধ্যমে ছেলে মেয়েদের বড় করে। বড় ২ ছেলে সিএনজি চালাক। মোটামুটি তাদের সংসার ভালো চললেও চলেনা বাবা মার জন্য ভরনপোষণের খরচ। বারংবার ছেলেদের কাছে ভরনপোষণের খরচের জন্য ধন্না দিয়েও পাত্তা পাওয়ানা মা বাব। বরং দুই ছেলে ও তাদের স্ত্রী হাতে মাইরধোর শিকার হচ্ছে এই অভাগা এই মা বাবা। অভাবের তারনায় বাধ্য হয়ে বাবা মা পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ ২০১৩ সনের ৪৯ নং আইনে আদালতে মামলা দায়ের করে। আদালত ৩ ছেলের প্রত্যকে মাসে ২ হাজার করে মোট ৬ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। ছোট ছেলে মানুষিক ভারসাম্যহীন আরিফ গাজী কিছু টাকা দিলেও বড় দুই ছেলে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কোন ভরনপোষণ না দিয়ে বরং তাদেরকে শারিরীক অত্যাচার, নির্যাতন করে যাচ্ছে। তাদের বড় ছেলে সুলতান গাজী ও মেজু ছেলে শরীফ গাজীর নামে একক ভাবে পিতার শেষ সম্বল ভিটেমাটির সম্পত্তি টুকু লিখে দেওয়ার জন্য বৃদ্ধ বাবাকে চাপ প্রয়োগ করে। বৃদ্ধ বাবা তার সম্পত্তি না লিখে দেওয়াতে তাদের উপর প্রতিনিয়ত চলে শারিরীক অত্যাচার নির্যাতন।
এই নিয়ে পুলিশ সুপার চাঁদপুর বরাবর ও তারা লিখিত অভিযোগ করেন।
ছেলেদের নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা মালেক গাজী কেঁদে কেঁদে জানান আমার বড় দুই ছেলে সুলতান ও শরীফ গাজী আমাকে ও আমার স্ত্রীকে ভরনপোষণ না দিয়ে বরং মারধোর করে। আদালতের নির্দেশও মানে না তারা। ২০ জুন শুক্রবার বাদ আসর আমার বাড়িতে আমাদের এলাকার শফিক ভুঁইয়া, নূরু মেম্বার, চুন্নু মেম্বার, সেলিম খান, হাকিম গাজী, তপন খান সহ আরো গণমান্য ব্যক্তিরা আমাদের পারিবারিক বিষয় নিয়ে একটি শালিসি বসে।
শালিসের এক পর্যায়ে আমার বড় ছেলে উপস্থিত সকলের সামনে আমাকে ধাক্কা মেরে, কিল ঘুষি মারে, পরে লাত্তি মেরে আমাকে মাটিতে ফেলে দেয়। শালিসদাররা আমাকে উদ্ধার করে। পরে দৌড়ে আমার স্ত্রী আসলে আমার ছেলেরা তাকেও লাত্তি, চর থাপ্পড় মারে। গত রমজানেও তারা আমাদেরকে লাঠিসোটা দিয়ে মাইরধোর করেছে।
আমার বড় ২ ছেলে বলে তাদের নামে আমার ভিটিমাটির সম্পত্তি লিখে দিতে। আমি বলেছি আমার সকল ছেলে মেয়ে সমান। আমার মৃত্যুর পরে আমার ভিটেমাটির সম্পত্তি আমার ছেলে মেয়ে মালিক । তারা মানে না, তারা জোরপূর্বক আমার অন্য ছেলে মেয়েদেরকে বঞ্চিত করতে চায়। আমার একটা মেয়ে সালমা বিধবা। তার বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি করে আমার বড় ছেলে সুলতান গাজী ২ লক্ষ টাকা, রাখার নাম করে ১ভরি স্বর্ণও নিয়েছে৷ সালমার ২ টা সন্তান এতিমখানায়, বড় মেয়েটা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিবে। নাতিনের বিয়ের জন্য পাওনা টাকা চাইলেও শুরু হয় অত্যাচার। এই অত্যাচার শেষ পর্যন্ত আসে আমাদের উপর। আমাদের কাছে পালার জন্য সালমার একটা গরু ও ছাগল আছে।
সুলতান ও শরীফ তারা বলে সালমজর গরু, ছাগল বিক্রি করে তাদের টাকা দিতে। না হলে বিষ খাবিয়ে গরু ছাগলও মেরে পেলবে। সন্তান আমাদেরকে ভরনপোষণ না দিয়ে বরং আমাদের সাথে যে অত্যাচার নির্যাতন করে যাচ্ছে তা এই বয়সে আর মেনে নিতে পারছিনা। তারদের সুখের জন্য অথচয় আমরা কত কষ্ট করেছি। আল্লাহ তাদেরকে ভালো রাখুক।