শিরোনাম :
Logo চাঁদপুর জেলা পুলিশের মাসিক কল্যাণ সভা ও অপরাধ পর্যালোচনা সভা Logo মডেল সিম্মি হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন প্রেমিক Logo মৃত্যুর গুজবে অভিনেত্রী বললেন ‘আমি বেঁচে আছি’ Logo শান্ত-মুশফিকের ১৩৭ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ Logo বিমান দুর্ঘটনায় ভারতীয় ক্রিকেটারের মৃত্যু Logo পুনরায় ভিসা কার্যক্রম চালু করায় অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা Logo আসছে শক্তিশালী বৃষ্টিবলয় ‘রিমঝিম’, তিন বিভাগে বন্যার শঙ্কা Logo গজারিয়ায় দুর্ঘটনা রোধে ইউটার্ন নির্মাণের দাবিতে নানা শ্রেনী পেশার মানুষের মানববন্ধন. Logo ইসরায়েলে পারমাণবিক হামলা চালানোর বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করলেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী Logo ইরানি এমপিদের একযোগে স্লোগান—‘ধন্যবাদ, ধন্যবাদ পাকিস্তান!’

শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ কী শুধু শোক প্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ!

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ও অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। যেটি কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ জেলা মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয় একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও পাঠদান কার্যক্রমের জন্য পরিচিত, তেমনি অন্যদিকে ক্যাম্পাসের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের জন্যও সমাদৃত। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পুর্ণ আবাসিক ব্যবস্থা না থাকায় নানা কারণে শিক্ষার্থীদের হতে হয় শহরমুখী।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উভয় শহরই প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এদিকে ঝিনাইদহের যাওয়ার রাস্তা প্রায় ভালো থাকলেও কুষ্টিয়া শহরে যাওয়ার রাস্তার বেহাল অবস্থা। প্রায়শই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটে এই রাস্তায়। এতে অনেকেই হয় হতাহত আবার অনেকের প্রাণ চলে যায় এই রাস্তায়। এই হতাহত অথবা নিহতের ঘটনা থেকে ব্যতিক্রম নয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষার্থী যেমন হয়েছেন হতাহত বা গুরুতর আহত তেমনি অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন এই রাস্তায়।

সম্প্রতি (১৬ জুন) পবিত্র ঈদুল আযহার ছুটি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার পথে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে বৃত্তিপাড়া নামক স্থানে বাস-ট্রাকের এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম। একই বাসে দুই ইবি শিক্ষার্থী-সহ কয়েকজন যাত্রী গুরুতর আহত হন। চলতি বছরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এ সড়কে ইবির একটি ভাড়া করা শিক্ষার্থীবাহী বাস ধানক্ষেতে উল্টে পড়ে যায়। এতে হতাহত হন প্রায় ২০ শিক্ষার্থী। এছাড়াও গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে ক্যাম্পাস থেকে সিএনজিতে করে বাড়ি যাওয়ার সময় কুষ্টিয়া শহরে ট্রাকের সাথে সিএনজির সংঘর্ষে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে প্রাণ হারান আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের মনির হোসেন।

এভাবেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন এবং এতে করে অনেক শিক্ষার্থীর প্রাণ চলে যায় অথবা গুরুতর আহত হয়ে ভর্তি হন হাসপাতালে। তবে এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ কী শুধু শোক প্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠন নেতৃবৃন্দের! এদিকে শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে দ্রুত সংস্কার চেয়েও পাননি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। বারবার আলোচনা করার পরেও উপযুক্ত কার্যকরি পদক্ষেপ দেখছেন না ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তবে নিরাপদ সড়কের দাবিতে জোড়ালো আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

এ বিষয়ে ইবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যু শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, এটি একটি শোক ও ব্যর্থতার প্রতিফলন। বারবার এমন দুর্ঘটনা ঘটলেও যদি কেবল শোক প্রকাশেই প্রশাসনের ভূমিকা সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে সমস্যার মূল সমাধান কখনই সম্ভব হবে না। আমাদের ইবি কর্তৃপক্ষ সব সময় শোক প্রকাশেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। কখনো এই সমস্যা সমাধানে আগ্রহী হতে দেখিনি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ রোড সংস্কারে বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। আমরা মনেকরি দ্রুতই কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যেন ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ঘটনা এড়ানো যায়। তাই সড়ক সংস্কারের জন্য যা যা করণীয় সেটি উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের আর্থিক ক্ষতি পূরণ ও সহযোগিতা করতে হবে। এছাড়াও শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “ক্যাম্পাস খোলার পর উপাচার্য বরাবর নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণ, মহাসড়ক সংস্করণ-সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্মারকলিপি প্রদান ও দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানাবো। তবে যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে প্রাথমিক পর্যায় মানববন্ধন কর্মসূচি ও পরবর্তীতে সড়ক অবরোধের মত কঠোর কর্মসূচি পালন করবো।”

ইবি শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, “ছাত্রশিবির সবসময় শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে সচেতন। সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু আমাদের প্রচণ্ডভাবে মর্মাহত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু শোক প্রকাশ করেই দায় এড়াতে পারে না। আমরা বিভিন্ন সময়ে বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ থেকে ক্যাম্পাস পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। আশ্বাস পেলেও এখনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিনি। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হলেই আমরা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবো যেন তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সড়ক সংস্কারের জন্য তাগিদ দেয়। পাশাপাশি নিহত শিক্ষার্থীর ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে হবে। এই দুর্ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি অল্প সময়ের মধ্যে সড়ক সংস্কারসহ সড়ক নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া না হয় আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেবো।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক এস. এম. সুইট বলেন, “আমাদের কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বেহাল দশা এবং লোকাল বাস ও পরিবহনের অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে আর কত প্রাণ ঝড়লে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ প্রশাসনের টনক নড়বে! আমরা এর আগে গত প্রশাসনের সময় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করেছি এবং সর্বশেষ কয়েক মাস আগেও মহাসড়ক অবরোধ করে আমাদের দাবিগুলো জানিয়ে এসেছি। এরপরও প্রশাসন কোন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারিনি। অনতিলম্বে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক সংস্কার না হলে আমরা সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলবো।”

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের শাখা সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ শোক প্রকাশের পাশাপাশি এরকম ঘটনা আর না ঘটানোর জন্য যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া। তারজন্য দরকার হলে সড়ক পরিবহন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রাস্তার দ্রুত সংস্কারের ব্যাপারে আলোচনা করতে হবে এবং বাস ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এছাড়াও নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারের জন্য সার্বিক সাহায্য সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “আর আমরা কোনো শিক্ষার্থী ভাই-বোন কে হারাতে চাই না। তাই যদি এই বিষয়ে কোনো দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে বাংলাদেশে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পক্ষ থেকে জোরদার কর্মসূচি ঘোষণা করবো।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো: শাহীনুজ্জামান বলেন, “এ বিষয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক যোগাযোগ করে থাকি। গতকালের ঘটনায় পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করা হবে এই বিষয়ে থানায় কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও বিআরটিএর এবং শ্যামলী পরিবহন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে একটি ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যেহেতু এটি ঢাকাগামী বাস তাই এই বিষয়ে স্থানীয় বাস মালিকদের সাথে কথা বলে লাভ হবে না। তবে এরকম ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেটি করতে যা যা করণীয় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সেই ব্যবস্থা করবো।”

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁদপুর জেলা পুলিশের মাসিক কল্যাণ সভা ও অপরাধ পর্যালোচনা সভা

শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ কী শুধু শোক প্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ!

আপডেট সময় : ১২:৩৬:২১ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ও অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। যেটি কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ জেলা মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয় একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও পাঠদান কার্যক্রমের জন্য পরিচিত, তেমনি অন্যদিকে ক্যাম্পাসের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের জন্যও সমাদৃত। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পুর্ণ আবাসিক ব্যবস্থা না থাকায় নানা কারণে শিক্ষার্থীদের হতে হয় শহরমুখী।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উভয় শহরই প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এদিকে ঝিনাইদহের যাওয়ার রাস্তা প্রায় ভালো থাকলেও কুষ্টিয়া শহরে যাওয়ার রাস্তার বেহাল অবস্থা। প্রায়শই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটে এই রাস্তায়। এতে অনেকেই হয় হতাহত আবার অনেকের প্রাণ চলে যায় এই রাস্তায়। এই হতাহত অথবা নিহতের ঘটনা থেকে ব্যতিক্রম নয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষার্থী যেমন হয়েছেন হতাহত বা গুরুতর আহত তেমনি অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন এই রাস্তায়।

সম্প্রতি (১৬ জুন) পবিত্র ঈদুল আযহার ছুটি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার পথে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে বৃত্তিপাড়া নামক স্থানে বাস-ট্রাকের এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম। একই বাসে দুই ইবি শিক্ষার্থী-সহ কয়েকজন যাত্রী গুরুতর আহত হন। চলতি বছরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এ সড়কে ইবির একটি ভাড়া করা শিক্ষার্থীবাহী বাস ধানক্ষেতে উল্টে পড়ে যায়। এতে হতাহত হন প্রায় ২০ শিক্ষার্থী। এছাড়াও গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে ক্যাম্পাস থেকে সিএনজিতে করে বাড়ি যাওয়ার সময় কুষ্টিয়া শহরে ট্রাকের সাথে সিএনজির সংঘর্ষে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে প্রাণ হারান আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের মনির হোসেন।

এভাবেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন এবং এতে করে অনেক শিক্ষার্থীর প্রাণ চলে যায় অথবা গুরুতর আহত হয়ে ভর্তি হন হাসপাতালে। তবে এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ কী শুধু শোক প্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠন নেতৃবৃন্দের! এদিকে শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে দ্রুত সংস্কার চেয়েও পাননি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। বারবার আলোচনা করার পরেও উপযুক্ত কার্যকরি পদক্ষেপ দেখছেন না ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তবে নিরাপদ সড়কের দাবিতে জোড়ালো আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

এ বিষয়ে ইবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যু শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, এটি একটি শোক ও ব্যর্থতার প্রতিফলন। বারবার এমন দুর্ঘটনা ঘটলেও যদি কেবল শোক প্রকাশেই প্রশাসনের ভূমিকা সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে সমস্যার মূল সমাধান কখনই সম্ভব হবে না। আমাদের ইবি কর্তৃপক্ষ সব সময় শোক প্রকাশেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। কখনো এই সমস্যা সমাধানে আগ্রহী হতে দেখিনি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ রোড সংস্কারে বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। আমরা মনেকরি দ্রুতই কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যেন ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ঘটনা এড়ানো যায়। তাই সড়ক সংস্কারের জন্য যা যা করণীয় সেটি উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের আর্থিক ক্ষতি পূরণ ও সহযোগিতা করতে হবে। এছাড়াও শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “ক্যাম্পাস খোলার পর উপাচার্য বরাবর নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণ, মহাসড়ক সংস্করণ-সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্মারকলিপি প্রদান ও দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানাবো। তবে যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে প্রাথমিক পর্যায় মানববন্ধন কর্মসূচি ও পরবর্তীতে সড়ক অবরোধের মত কঠোর কর্মসূচি পালন করবো।”

ইবি শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, “ছাত্রশিবির সবসময় শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে সচেতন। সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু আমাদের প্রচণ্ডভাবে মর্মাহত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু শোক প্রকাশ করেই দায় এড়াতে পারে না। আমরা বিভিন্ন সময়ে বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ থেকে ক্যাম্পাস পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। আশ্বাস পেলেও এখনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিনি। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হলেই আমরা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবো যেন তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সড়ক সংস্কারের জন্য তাগিদ দেয়। পাশাপাশি নিহত শিক্ষার্থীর ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে হবে। এই দুর্ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি অল্প সময়ের মধ্যে সড়ক সংস্কারসহ সড়ক নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া না হয় আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেবো।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক এস. এম. সুইট বলেন, “আমাদের কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বেহাল দশা এবং লোকাল বাস ও পরিবহনের অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে আর কত প্রাণ ঝড়লে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ প্রশাসনের টনক নড়বে! আমরা এর আগে গত প্রশাসনের সময় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করেছি এবং সর্বশেষ কয়েক মাস আগেও মহাসড়ক অবরোধ করে আমাদের দাবিগুলো জানিয়ে এসেছি। এরপরও প্রশাসন কোন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারিনি। অনতিলম্বে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক সংস্কার না হলে আমরা সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলবো।”

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের শাখা সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ শোক প্রকাশের পাশাপাশি এরকম ঘটনা আর না ঘটানোর জন্য যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া। তারজন্য দরকার হলে সড়ক পরিবহন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রাস্তার দ্রুত সংস্কারের ব্যাপারে আলোচনা করতে হবে এবং বাস ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এছাড়াও নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারের জন্য সার্বিক সাহায্য সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “আর আমরা কোনো শিক্ষার্থী ভাই-বোন কে হারাতে চাই না। তাই যদি এই বিষয়ে কোনো দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে বাংলাদেশে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পক্ষ থেকে জোরদার কর্মসূচি ঘোষণা করবো।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো: শাহীনুজ্জামান বলেন, “এ বিষয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক যোগাযোগ করে থাকি। গতকালের ঘটনায় পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করা হবে এই বিষয়ে থানায় কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও বিআরটিএর এবং শ্যামলী পরিবহন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে একটি ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যেহেতু এটি ঢাকাগামী বাস তাই এই বিষয়ে স্থানীয় বাস মালিকদের সাথে কথা বলে লাভ হবে না। তবে এরকম ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেটি করতে যা যা করণীয় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সেই ব্যবস্থা করবো।”