শিরোনাম :
Logo মুমিনুল চান তিনশ’র লিড, দুইশ’তে আটকাতে চায় জিম্বাবুয়ে Logo স্বর্ণের দামে সব রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস Logo দুবাইয়ে বিগ টিকিট লটারি জিতে লাখপতি দুই বাংলাদেশি Logo বাবা হলেন যুক্তরাষ্ট্রে আটক খলিল, দেখতে পারলেন না সদ্যোজাত সন্তানের মুখ Logo এটিএম আজহার মুক্তি না পাওয়ায় আমরা ব্যথিত, তবে হতাশ নই Logo আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ ৩ বিচারপতি থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পক্ষে বিএনপি Logo ধর্ম নিরপেক্ষতা বিলুপ্তে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে একমত বিএনপি Logo হঠাৎ বৃষ্টিতে চাঁদপুর শহরের মুসলিম কবরস্থান রোড এলাকা সড়কের বেহাল দশা, ভোগান্তিতে এলাকাবাসী Logo ইনসাফের আকাঙ্ক্ষা থেকেই চব্বিশের লড়াই:ব্যারিস্টার ফুয়াদ Logo ইবিতে বিভাগের নাম পরিবর্তসহ দুই দফা দাবিতে প্রশাসন ভবন অবরোধ

২০ হাজার টাকায় সন্তানকে বিক্রি করলেন মা

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০২:০৪:২২ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭১০ বার পড়া হয়েছে

সংসারে অভাব অনটন ও স্বামীর বহুবিবাহের কারণে নিজের নবজাতক কন্যা সন্তানকে মাত্র ২০ হাজার টাকায় অন্যের কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে আশামনি খাতুন নামের এক মায়ের বিরুদ্ধে। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাঁদাকাটি গ্রামে সম্প্রতি এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে।

জানা যায়, আশামনি খাতুন (২৫) সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাঁদাকাটি গ্রামের শামীম হোসেনের চতুর্থ স্ত্রী। সন্তানের সুচিকিৎসা ও দুধ কিনতে না পেরে তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নবজাতক শিশু খাদিজা খাতুনকে নগদ বিশ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন বলে জানান ওই হতভাগ্য মা।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আশামনি খাতুনের স্বামী আশাশুনি উপজেলার কাঁদাকাটি গ্রামের সৈয়দ আলী সরদারের ছেলে শামীম হোসেন (২৮) । পেশায় সে একজন টিউবওয়েল মিস্ত্রী। কখনো কখনো সে ইটভাটায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করে। শামীম হোসেন শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর কর্মকারপাড়ায় জনৈক আফসার আলীর বাড়িতে তার পঞ্চম স্ত্রী হোসনে আরা খাতুনকে নিয়ে রাত যাপন করছিলেন। গোপনে বিষয়টি জানতে পারেন আশামনি খাতুন।

এদিকে স্বামীর ৫ম বিয়ের খবর শুনে শুক্রবার ভোরে খোঁজ নিতে ভালুকা চাঁদপুর চলে যান আশামনি খাতুন। সেখানে স্বামী ও তার ৫ম স্ত্রী হোসনে আরার সাথে বাকবিতণ্ডা ও মারামারি শুরু হয়। স্থানীয়দের উপস্থিতিতে স্বামী-স্ত্রীর মারামারি বন্ধ হলেও সুকৌশলে পালিয়ে যায় ৫ম স্ত্রী হোসনে আরা খাতুন।

আশামনি জানান, চলতি সালের জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে স্থানীয় কুল্যার মোড়ে একটা ক্লিনিকে তিনি দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেন। স্বামী খোঁজ খবর না নেওয়ায় ক্লিনিকের খরচ, বাচ্চার ঔষধ ও দুধ কিনতে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একপর্যায়ে নিজের নবজাতক শিশু খাদিজাকে ১৪ দিন বয়সে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে আশাশুনি তেঁতুলিয়া গ্রামের চা বিক্রেতা নিঃসন্তান দম্পতি রবিউল-কাজলের কাছে নগদ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। নিজের সন্তানকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য তিনি এই কাজ করেছেন বলে জানান আশামনি।

অভিযোগে জানা যায়, যেখানে যায় সেখানেই বিয়ে করে শামীম। ২০১৬ সালে সে তালা উপজেলা লাউতাড়া গ্রামে সামাজিকভাবে বিবাহ করলেও সে বিয়ে টিকেনি। এরপর উপজেলার বদরতোলায় টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ করতে গিয়ে বাড়ির মালিকের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। সে বিয়েও টিকেনি। পরবর্তী নিজের চাচাতো বোন বিলকিস খাতুনকে বিয়ে করে। বিলকিসকে নিজ বাড়িতে রেখে ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে শামীম চতুর্থ স্ত্রী হিসাবে আশামনিকে বিয়ে করে। পরে শামীমকে ডিভোর্স দিয়ে অন্যত্র চলে যায় বিলকিস।

আশামনি জানান, তার গর্ভে সন্তান থাকাকালীন বদরতোলায় আবারো টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ করতে গিয়ে ছয়মাস আগে হোসেনে আরাকে বিয়ে করে শামীম। মোবাইলে শামীমের সাথে যোগাযোগ করলেও সে তার ও সন্তানের কোন খোঁজ খবর নেয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি নিজের সন্তানকে বিক্রি করেছেন।

এ বিষয়ে চা বিক্রেতা রবিউলের স্ত্রী কাজল বলেন, আমরা দরদাম করে কয়েকজন স্বাক্ষীর সামনে শর্ত দিয়ে টাকার বিনিময়ে বাচ্চাকে কিনে নিয়েছি। বাচ্চার টিকা কার্ডে পিতা-মাতার নামের স্থানে আমার স্বামী ও আমার নাম দিয়েছি। জন্ম নিবন্ধন সনদে তার নাম রাখা হয়েছে ফারিয়া জান্নাতুল। সে এখন থেকে আমাদের পরিচয়ে পরিচিত হবে।

শামীম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এ বিষয়ে আশাশুনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও পরে আর খোঁজ খবর নেয়নি বলে জানান তিনি।

আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সামছুল আরেফিন বলেন, আমি সম্প্রতি আশাশুনি থানায় নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মুমিনুল চান তিনশ’র লিড, দুইশ’তে আটকাতে চায় জিম্বাবুয়ে

২০ হাজার টাকায় সন্তানকে বিক্রি করলেন মা

আপডেট সময় : ০২:০৪:২২ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

সংসারে অভাব অনটন ও স্বামীর বহুবিবাহের কারণে নিজের নবজাতক কন্যা সন্তানকে মাত্র ২০ হাজার টাকায় অন্যের কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে আশামনি খাতুন নামের এক মায়ের বিরুদ্ধে। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাঁদাকাটি গ্রামে সম্প্রতি এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে।

জানা যায়, আশামনি খাতুন (২৫) সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাঁদাকাটি গ্রামের শামীম হোসেনের চতুর্থ স্ত্রী। সন্তানের সুচিকিৎসা ও দুধ কিনতে না পেরে তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নবজাতক শিশু খাদিজা খাতুনকে নগদ বিশ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন বলে জানান ওই হতভাগ্য মা।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আশামনি খাতুনের স্বামী আশাশুনি উপজেলার কাঁদাকাটি গ্রামের সৈয়দ আলী সরদারের ছেলে শামীম হোসেন (২৮) । পেশায় সে একজন টিউবওয়েল মিস্ত্রী। কখনো কখনো সে ইটভাটায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করে। শামীম হোসেন শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর কর্মকারপাড়ায় জনৈক আফসার আলীর বাড়িতে তার পঞ্চম স্ত্রী হোসনে আরা খাতুনকে নিয়ে রাত যাপন করছিলেন। গোপনে বিষয়টি জানতে পারেন আশামনি খাতুন।

এদিকে স্বামীর ৫ম বিয়ের খবর শুনে শুক্রবার ভোরে খোঁজ নিতে ভালুকা চাঁদপুর চলে যান আশামনি খাতুন। সেখানে স্বামী ও তার ৫ম স্ত্রী হোসনে আরার সাথে বাকবিতণ্ডা ও মারামারি শুরু হয়। স্থানীয়দের উপস্থিতিতে স্বামী-স্ত্রীর মারামারি বন্ধ হলেও সুকৌশলে পালিয়ে যায় ৫ম স্ত্রী হোসনে আরা খাতুন।

আশামনি জানান, চলতি সালের জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে স্থানীয় কুল্যার মোড়ে একটা ক্লিনিকে তিনি দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেন। স্বামী খোঁজ খবর না নেওয়ায় ক্লিনিকের খরচ, বাচ্চার ঔষধ ও দুধ কিনতে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একপর্যায়ে নিজের নবজাতক শিশু খাদিজাকে ১৪ দিন বয়সে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে আশাশুনি তেঁতুলিয়া গ্রামের চা বিক্রেতা নিঃসন্তান দম্পতি রবিউল-কাজলের কাছে নগদ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। নিজের সন্তানকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য তিনি এই কাজ করেছেন বলে জানান আশামনি।

অভিযোগে জানা যায়, যেখানে যায় সেখানেই বিয়ে করে শামীম। ২০১৬ সালে সে তালা উপজেলা লাউতাড়া গ্রামে সামাজিকভাবে বিবাহ করলেও সে বিয়ে টিকেনি। এরপর উপজেলার বদরতোলায় টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ করতে গিয়ে বাড়ির মালিকের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। সে বিয়েও টিকেনি। পরবর্তী নিজের চাচাতো বোন বিলকিস খাতুনকে বিয়ে করে। বিলকিসকে নিজ বাড়িতে রেখে ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে শামীম চতুর্থ স্ত্রী হিসাবে আশামনিকে বিয়ে করে। পরে শামীমকে ডিভোর্স দিয়ে অন্যত্র চলে যায় বিলকিস।

আশামনি জানান, তার গর্ভে সন্তান থাকাকালীন বদরতোলায় আবারো টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ করতে গিয়ে ছয়মাস আগে হোসেনে আরাকে বিয়ে করে শামীম। মোবাইলে শামীমের সাথে যোগাযোগ করলেও সে তার ও সন্তানের কোন খোঁজ খবর নেয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি নিজের সন্তানকে বিক্রি করেছেন।

এ বিষয়ে চা বিক্রেতা রবিউলের স্ত্রী কাজল বলেন, আমরা দরদাম করে কয়েকজন স্বাক্ষীর সামনে শর্ত দিয়ে টাকার বিনিময়ে বাচ্চাকে কিনে নিয়েছি। বাচ্চার টিকা কার্ডে পিতা-মাতার নামের স্থানে আমার স্বামী ও আমার নাম দিয়েছি। জন্ম নিবন্ধন সনদে তার নাম রাখা হয়েছে ফারিয়া জান্নাতুল। সে এখন থেকে আমাদের পরিচয়ে পরিচিত হবে।

শামীম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এ বিষয়ে আশাশুনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও পরে আর খোঁজ খবর নেয়নি বলে জানান তিনি।

আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সামছুল আরেফিন বলেন, আমি সম্প্রতি আশাশুনি থানায় নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।