খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে উপলক্ষে যে সাময়িক যুদ্ধবিরতির (ইস্টার ট্রুস) ঘোষণা দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, তা তিনি নিজেই মানছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
তার অভিযোগ, রুশ প্রেসিডেন্ট ঘোষিত ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইউক্রেনের আকাশে রুশ সামরিক ড্রোন দেখা যাচ্ছে। এছাড়া, রাশিয়ার কুরস্ক ও বেলগোরোদে থাকা ইউক্রেনীয় সেনাদের সঙ্গে রুশ সেনাদের লড়াইও আগের মতোই চলছে।
স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার (১৯ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘হঠাৎ করে যুদ্ধ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট যুদ্ধবিরতির একটা প্রতিকৃতি সবাইকে দেখাতে চাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। কিন্তু ঠিকই ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তার সেনারা।’
যদিও পরে এক্সে আরও একটি পোস্ট দিয়ে পুতিনকে যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর আহ্বান জানান জেলেনস্কি। ইউক্রেন ২০ এপ্রিলের পরও যুদ্ধবিরতি বাড়াতে প্রস্তুত বলে জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
ওই পোস্টে জেলেনস্কি লেখেন, ‘যদি রাশিয়া ফ্রন্টলাইনগুলোতে পুরোপুরিভাবে যুদ্ধ বন্ধ রাখে, তাহলে ইউক্রেনও তাই করবে। রাশিয়ার আচরণই ইউক্রেন প্রতিফলিত করবে। ৩০ দিনের পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এখনো আলোচনার টেবিলে রয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত মস্কোর।’
এই পোস্টের মধ্য দিয়ে জেলেনস্কি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুত করা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির খসড়ার দিকেই ইঙ্গিত করছেন বলে মনে করছেন অনেকে।
এদিকে, যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে ভ্লাদিমির পুতিনের অবস্থানের নিন্দা জানিয়েছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা। এক এক্স পোস্টে তিনি বলেন, ‘৩০ দিনের বিপরীতে মাত্র ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি দিয়ে পুতিন প্রমাণ করতে চাচ্ছেন তিনি যুদ্ধবিরতির জন্য রাজি! কিন্তু তার যে কথায় এবং কাজে মিল নেই, তা আমরা বহুদিন ধরে দেখে আসছি। তাঁর কথায় বিশ্বাস নেই। কাজেই প্রমাণ মিলবে। আমরা সেদিকেই নজর দিচ্ছি।’
গতকাল শনিবার, চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালারি গেরাসিমভের সঙ্গে বৈঠকের পর বিশেষ এই ‘ইস্টার ট্রুস’ ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ঘোষণা অনুযায়ী, স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ রাখবে রাশিয়ার সেনাবাহিনী।
বিবৃতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘মানবিক বিবেচনায় ইস্টারে যুদ্ধ বন্ধ রাখবে রাশিয়া। এ সময় আমি সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিচ্ছি। ধরে নিচ্ছি ইউক্রেনও তা-ই করবে।’
যদিও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজের সেনাদের নির্দেশ দিয়েছেন, ইউক্রেন যদি কোনো হামলা চালায় তা প্রতিহতের জন্য প্রস্তুত থাকতে।
রুশ প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ থাকলেও শত্রু পক্ষের যেকোনো হামলা, উসকানি ও আগ্রাসী আচরণ প্রতিরোধের জন্য পুরোপুরি সতর্ক ও প্রস্তুত থাকবে আমাদের সেনারা।’