শিরোনাম :
Logo ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি ‘ইসরায়েলের স্কলারশিপ ফিরিয়ে দিলেন রাবি শিক্ষার্থী কামরুল’ Logo গাজায় চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে খুবিতে সমাবেশ Logo গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যার প্রতিবাদে চাঁদপুরে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল Logo ইবিতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রতিবাদ Logo কোরআন ও হাদিসে চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ে মৌলিক নির্দেশনা Logo শিশুর মানসিক গঠনে করণীয় Logo বিশ্বনবী (সা.)-এর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য Logo সিরাজদিখানে ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল। Logo গাজায় হামলা; রাবি প্রশাসন শিক্ষার্থী কর্মচারী কর্মকর্তাদের সংহতি সমাবেশ Logo ফিলিস্তিন গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে কয়রায় বিক্ষোভ মিছিল

গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ১১:৫৯:০৫ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭১২ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ আসন থেকে জামায়াতের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সমসাময়িক বিষয়ে নিয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়েছে তার।

প্রতিবেদক: ঐকমত্য কমিশনে সব রাজনৈতিক দল মতামত জমা দিয়েছে। আপনার দৃষ্টিতে এটি কি সংকট সমাধানের পথ উন্মুক্ত করবে?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: রাজনৈতিক দলগুলোর সবাই সংস্কারের বিষয়ে একমত। সংস্কার হওয়া জরুরি। যেসব ইস্যুতে প্রশ্ন তৈরি করে পাঠানো হয়েছে, তার মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে—সংবিধান, জনপ্রশাসন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া।

এসব বিষয়ে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে, যার সমঝোতা কঠিন হবে। এ বিষয়ে আমি ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের কাছেও জানতে চেয়েছিলাম, সব দলের ভিন্নমতগুলো কিভাবে এক করবেন? তারা বলেছেন, বড় দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের চেষ্টা করবেন। তবে কোনো দল যদি তার অবস্থানে অনড় থাকে এবং সমঝোতায় না আসে, তাহলে সংকট আরো ঘনীভূত হবে। যদি ঐকমত্য না হয়, তাহলে কি সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন হবে? সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে সেটি কি সবাই মেনে নেবে? কেউ মানবে, কেউ মানবে না।

ফলে অনেক প্রশ্ন সামনে চলে আসবে। আমরা ঐকমত্য কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছি, যেসব বিষয়ে একমত হতে চান, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করুন।

প্রতিবেদক: জামায়াত আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে মত দিয়েছে। যদি এটি বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে আপনাদের রাজনৈতিক কৌশল কী হবে?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: আমরা আরো কিছু দাবি উত্থাপন করেছি।

যদি দেখা যায় বড় দলগুলো আমাদের প্রস্তাবে রাজি নয় বা এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না, তাহলে আমাদের কোনো দুঃখ নেই। আমরা আমাদের ধারণা তুলে ধরেছি, এখন না হলে পরে বাস্তবায়িত হতে পারে। তবে আমরা এমন নই যে এটি না হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। আনুপাতিক নির্বাচন হলে ভোটের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হবে, কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব কমবে এবং একটি দক্ষ ও যোগ্য সংসদ গঠিত হবে। কারণ তখন ব্যক্তি প্রার্থী থাকবে না; বরং দল তার যোগ্য প্রতিনিধিদের সংসদে পাঠাবে।

অনেক দলও এটি চায়, তবে বিএনপি এতে রাজি নয়। বড় দলগুলো না চাইলে সরকার এটি বাস্তবায়ন করবে কি না, তা আমরা জানি না। তবে আমরা এই বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাব। জামায়াতে ইসলামী প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব দিয়েছিল, যা শুরুতে অনেকে মানেনি। পরে সবাই মেনে নিয়েছে।

প্রতিবেদক: যদি কিছু সংস্কার করে নির্বাচন করা হয়, তবে আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে? যে ধরনের নির্বাচন কাঠামো চান, তা বাস্তবায়নে কত সময় প্রয়োজন?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: যদি সরকার নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ডিসেম্বরেই নির্বাচন দেয়, তাহলে আমাদের আপত্তি নেই। তবে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে আমাদের আপত্তি থাকবে এবং সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।

প্রতিবেদক: ঈদের পর বর্তমানে আপনাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি কী হবে?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: আমাদের অনেক নেতা ইতিকাফে ছিলেন, কেউ কেউ দেশের বাইরে ছিলেন। এখন আমরা সবার সঙ্গে বসে কর্মসূচি ঠিক করব।

প্রতিবেদক: ইসলামী দলগুলোর ঐক্যপ্রক্রিয়ার বর্তমান অগ্রগতি কী পর্যায়ে রয়েছে?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: আমরা ঐক্য নিয়ে আশাবাদী। ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। ঈদের পর এখন আমরা আবার বসে ঐক্যের কাঠামো চূড়ান্ত করব।

প্রতিবেদক: বিএনপি বা নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্য গঠনের কোনো সম্ভাবনা রয়েছে?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: কিছুই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিছু বিষয়ে আমাদের মধ্যে দূরত্ব আছে। তবে যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন হয় যে সবাই মিলে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ করতে চায় এবং একটি সমঝোতামূলক নির্বাচন করতে চায়, তাহলে ভবিষ্যতে কী হবে, তা বলা কঠিন। যারা রাজপথে থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, তারা যদি কোনো ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে অংশ নিতে চায়, তাহলে আমরা প্রস্তুত।

প্রতিবেদক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় সরকারের কথা বলেছেন। এটি কতটা বাস্তবসম্মত বলে মনে করেন?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: তিনি জাতীয় সরকারের কথা বলেছেন, তবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি। কাদের নিয়ে তিনি সরকার গঠন করবেন—তার দল, তার জোট, নাকি বৃহত্তর ফ্যাসিবাদবিরোধী জোট? এটি পরিষ্কার হলে বোঝা যাবে তার পরিকল্পনা কী।

প্রতিবেদক: বিএনপির সঙ্গে আপনাদের মূল রাজনৈতিক মতপার্থক্য কী?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: বিএনপির সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। দল পৃথক হওয়া মানেই মতাদর্শ পৃথক। নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়ে আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে, তবে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ঐকমত্য থাকা উচিত।

প্রতিবেদক: যদি জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তাহলে কি কোরআনের আইন বাস্তবায়ন করবে?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: সমাজ ও মানব কল্যাণে কোরআনের বিধানের কিছু মৌলিক নীতি আছে। সেই নীতির ভিত্তিতে সমকালীন চাহিদা ও সমস্যার সমাধান হয়। এ ক্ষেত্রে ইসলামের অনেক বক্তব্য আছে। ইসলামের অনেক কল্যাণকর নীতিমালা আছে। সেই আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হবে, যা ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধানের পরিপন্থী হবে না। মানবকল্যাণে যেকোনো আইন-কানুন ইসলামের বিধি-বিধানের পরিপন্থী না হলে, তা ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য গ্রহণযোগ্য।

প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের বিষয়ে জামায়াতের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কী? দলটি কি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: আওয়ামী লীগ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। এদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। তবে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি আমরা করিনি। সরকার চাইলে এটি বিবেচনা করতে পারে।

প্রতিবেদক: ভোটাধিকার পাওয়ার ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ১৬ বছর করার প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। আপনার মতামত কী?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: বর্তমান আইন অনুযায়ী ভোটারের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর রয়েছে। এটি যথাযথ এবং পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।

প্রতিবেদক: ১৯৭১ সালের প্রসঙ্গ তুলে জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখা হচ্ছে বলে মনে করেন?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: ১৯৭১ সালের প্রসঙ্গকে জামায়াতকে ঘায়েল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ইস্যুতে এটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হলেও তাতে কোনো ফল হবে না। আদর্শ ও যুক্তির অভাব হলে অপকৌশল গ্রহণ করা হয়। এটা তারই অংশ।

প্রতিবেদক: জামায়াতে ইসলামীর পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি কী হবে?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা হবে, তবে তা সমতার ভিত্তিতে। ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় রেখেই পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি ‘ইসরায়েলের স্কলারশিপ ফিরিয়ে দিলেন রাবি শিক্ষার্থী কামরুল’

গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়

আপডেট সময় : ১১:৫৯:০৫ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ আসন থেকে জামায়াতের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সমসাময়িক বিষয়ে নিয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়েছে তার।

প্রতিবেদক: ঐকমত্য কমিশনে সব রাজনৈতিক দল মতামত জমা দিয়েছে। আপনার দৃষ্টিতে এটি কি সংকট সমাধানের পথ উন্মুক্ত করবে?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: রাজনৈতিক দলগুলোর সবাই সংস্কারের বিষয়ে একমত। সংস্কার হওয়া জরুরি। যেসব ইস্যুতে প্রশ্ন তৈরি করে পাঠানো হয়েছে, তার মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে—সংবিধান, জনপ্রশাসন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া।

এসব বিষয়ে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে, যার সমঝোতা কঠিন হবে। এ বিষয়ে আমি ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের কাছেও জানতে চেয়েছিলাম, সব দলের ভিন্নমতগুলো কিভাবে এক করবেন? তারা বলেছেন, বড় দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের চেষ্টা করবেন। তবে কোনো দল যদি তার অবস্থানে অনড় থাকে এবং সমঝোতায় না আসে, তাহলে সংকট আরো ঘনীভূত হবে। যদি ঐকমত্য না হয়, তাহলে কি সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন হবে? সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে সেটি কি সবাই মেনে নেবে? কেউ মানবে, কেউ মানবে না।

ফলে অনেক প্রশ্ন সামনে চলে আসবে। আমরা ঐকমত্য কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছি, যেসব বিষয়ে একমত হতে চান, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করুন।

প্রতিবেদক: জামায়াত আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে মত দিয়েছে। যদি এটি বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে আপনাদের রাজনৈতিক কৌশল কী হবে?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: আমরা আরো কিছু দাবি উত্থাপন করেছি।

যদি দেখা যায় বড় দলগুলো আমাদের প্রস্তাবে রাজি নয় বা এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না, তাহলে আমাদের কোনো দুঃখ নেই। আমরা আমাদের ধারণা তুলে ধরেছি, এখন না হলে পরে বাস্তবায়িত হতে পারে। তবে আমরা এমন নই যে এটি না হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। আনুপাতিক নির্বাচন হলে ভোটের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হবে, কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব কমবে এবং একটি দক্ষ ও যোগ্য সংসদ গঠিত হবে। কারণ তখন ব্যক্তি প্রার্থী থাকবে না; বরং দল তার যোগ্য প্রতিনিধিদের সংসদে পাঠাবে।

অনেক দলও এটি চায়, তবে বিএনপি এতে রাজি নয়। বড় দলগুলো না চাইলে সরকার এটি বাস্তবায়ন করবে কি না, তা আমরা জানি না। তবে আমরা এই বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাব। জামায়াতে ইসলামী প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব দিয়েছিল, যা শুরুতে অনেকে মানেনি। পরে সবাই মেনে নিয়েছে।

প্রতিবেদক: যদি কিছু সংস্কার করে নির্বাচন করা হয়, তবে আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে? যে ধরনের নির্বাচন কাঠামো চান, তা বাস্তবায়নে কত সময় প্রয়োজন?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: যদি সরকার নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ডিসেম্বরেই নির্বাচন দেয়, তাহলে আমাদের আপত্তি নেই। তবে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে আমাদের আপত্তি থাকবে এবং সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।

প্রতিবেদক: ঈদের পর বর্তমানে আপনাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি কী হবে?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: আমাদের অনেক নেতা ইতিকাফে ছিলেন, কেউ কেউ দেশের বাইরে ছিলেন। এখন আমরা সবার সঙ্গে বসে কর্মসূচি ঠিক করব।

প্রতিবেদক: ইসলামী দলগুলোর ঐক্যপ্রক্রিয়ার বর্তমান অগ্রগতি কী পর্যায়ে রয়েছে?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: আমরা ঐক্য নিয়ে আশাবাদী। ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। ঈদের পর এখন আমরা আবার বসে ঐক্যের কাঠামো চূড়ান্ত করব।

প্রতিবেদক: বিএনপি বা নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্য গঠনের কোনো সম্ভাবনা রয়েছে?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: কিছুই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিছু বিষয়ে আমাদের মধ্যে দূরত্ব আছে। তবে যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন হয় যে সবাই মিলে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ করতে চায় এবং একটি সমঝোতামূলক নির্বাচন করতে চায়, তাহলে ভবিষ্যতে কী হবে, তা বলা কঠিন। যারা রাজপথে থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, তারা যদি কোনো ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে অংশ নিতে চায়, তাহলে আমরা প্রস্তুত।

প্রতিবেদক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় সরকারের কথা বলেছেন। এটি কতটা বাস্তবসম্মত বলে মনে করেন?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: তিনি জাতীয় সরকারের কথা বলেছেন, তবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি। কাদের নিয়ে তিনি সরকার গঠন করবেন—তার দল, তার জোট, নাকি বৃহত্তর ফ্যাসিবাদবিরোধী জোট? এটি পরিষ্কার হলে বোঝা যাবে তার পরিকল্পনা কী।

প্রতিবেদক: বিএনপির সঙ্গে আপনাদের মূল রাজনৈতিক মতপার্থক্য কী?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: বিএনপির সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। দল পৃথক হওয়া মানেই মতাদর্শ পৃথক। নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়ে আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে, তবে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ঐকমত্য থাকা উচিত।

প্রতিবেদক: যদি জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তাহলে কি কোরআনের আইন বাস্তবায়ন করবে?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: সমাজ ও মানব কল্যাণে কোরআনের বিধানের কিছু মৌলিক নীতি আছে। সেই নীতির ভিত্তিতে সমকালীন চাহিদা ও সমস্যার সমাধান হয়। এ ক্ষেত্রে ইসলামের অনেক বক্তব্য আছে। ইসলামের অনেক কল্যাণকর নীতিমালা আছে। সেই আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হবে, যা ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধানের পরিপন্থী হবে না। মানবকল্যাণে যেকোনো আইন-কানুন ইসলামের বিধি-বিধানের পরিপন্থী না হলে, তা ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য গ্রহণযোগ্য।

প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের বিষয়ে জামায়াতের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কী? দলটি কি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: আওয়ামী লীগ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। এদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। তবে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি আমরা করিনি। সরকার চাইলে এটি বিবেচনা করতে পারে।

প্রতিবেদক: ভোটাধিকার পাওয়ার ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ১৬ বছর করার প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। আপনার মতামত কী?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: বর্তমান আইন অনুযায়ী ভোটারের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর রয়েছে। এটি যথাযথ এবং পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।

প্রতিবেদক: ১৯৭১ সালের প্রসঙ্গ তুলে জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখা হচ্ছে বলে মনে করেন?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: ১৯৭১ সালের প্রসঙ্গকে জামায়াতকে ঘায়েল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ইস্যুতে এটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হলেও তাতে কোনো ফল হবে না। আদর্শ ও যুক্তির অভাব হলে অপকৌশল গ্রহণ করা হয়। এটা তারই অংশ।

প্রতিবেদক: জামায়াতে ইসলামীর পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি কী হবে?

মিয়া গোলাম পরওয়ার: সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা হবে, তবে তা সমতার ভিত্তিতে। ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় রেখেই পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হবে।