স্বাধীনতা বিরোধীর নামে আবাসিক হলের নামকরণে জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঐক্য, শিক্ষা ও শান্তি এবং প্রগতির মূলমন্ত্রে গড়ে ওঠা সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ।
আজ বুধবার (০৫ মার্চ) সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিবৃতিতে এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। এছাড়াও স্বাধীনতা বিরোধী নামের পরিবর্তে মাওলানা ভাসানীর নামে নামকরণের আহ্বান জানান তারা।
সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ৪টি আবাসিক হল ও একটি একাডেমিক ভবনের নাম পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উক্ত প্রজ্ঞাপন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের দৃষ্টি গোচর হয়েছে। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করে শাহ আজিজুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে। শাহ আজিজুর রহমানের একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ। একইসাথে অতিদ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তনেরও আহ্বান জানানো হয়।
এসময় যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে ইবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহমুদুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নূর আলম বলেন , শাহ আজিজুর রহমানের মতো একজন্য চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর নামে আবাসিক হলের নামকরণ জাতির জন্য এক কলঙ্কজন সিদ্ধান্ত। একই সাথে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা পরিপন্থীও। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের হাতে লুট হয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের বৈষম্যহীন দেশ গড়ার শপথই ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শাহ আজিজুর রহমানের নামে আবাসিক হলের নামকরণের মধ্য দিয়ে ইবি প্রশাসন মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে বলে আমরা মনে করি।
এছাড়াও নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধ, ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী ও এদের মানুষের অধিকার আদায়ের অগ্র নায়ক মাওলানা ভাসানীর নামে আবাসিক হলের নামকরণের দাবি জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, ৪টি আবাসিক হল ও ১টি ভবনের নাম পরিবর্তন করা হলো কিন্তু সেখানে মাওলানা ভাসানীর মতো জাতীয় নেতার নামে কোনো স্থাপনা রাখা হয়নি। যা দুঃখজন। আমরা ইবি প্রশাসনের কাছে রাজাকারের নাম পরিবর্তন ও মাওলানা ভাসানীর নামে আবাসিক হলের নামকরণের আহ্বান জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালযয়ে (ইবি) শেখ পরিবারের নাম থাকা ৪টি হল ও ১টি স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। বুধবার (৫ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়। নতুন সিদ্ধান্ত মোতাবেকে শেখ হাসিনা হল এখন জুলাই ৩৬ হল, শেখ রাসেল হল এখন শহীদ আনাছ হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এখন শাহ আজিজুর রহমান হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল এখন উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দিকা হল এবং ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবন এখন থেকে ইবনে সিনা বিজ্ঞান ভবন নাম করা হয়।
কিন্তু প্রজ্ঞাপনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে শাহ আজিজুর রহমানের নামে নামকরণের সিদ্ধান্তে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। কারণ, শাহ আজিজুর রহমান ছিলেন একাত্তরে পাকিস্তান ন্যাশনাল লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী। এছাড়াও তিনি ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আবদুল মোতালেব মালিকের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সদস্য হন এবং রাজস্বমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধের সময় পাকিস্তান কর্তৃক জাতিসংঘে প্রেরিত প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি জাতিসংঘে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করলেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। শাহ আজিজুর রহমান জাতিসংঘে দেওয়া বক্তব্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করার আহ্বান জানিয়ে বলেন “পাকিস্তানি সৈন্যরা পূর্ব পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে অন্যায় কিছু করেনি। স্বাধীনতা সংগ্রামের নামে সেখানে যা চলছে, তা হলো ভারতের মদদপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের উচিত সেটাকে পাকিস্তানের ঘরোয়া ব্যাপার হিসেবে গ্রহণ করা। ” এছাড়াও তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়ে ছিলেন।