শিরোনাম :
Logo ১৫ বছর পর আজ বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক Logo সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা, শিথিল থাকবে রেল ব্লকেড কর্মসূচি Logo রাকসু গঠনতন্ত্র অনুমোদন ও নির্বাচন কমিশন গঠন Logo নিয়মবহির্ভূত ভাবে গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন সংলগ্ন গাছ কাটার অভিযোগ Logo খুবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রতি আসনের বিপরীতে ৯৭ জন পরিক্ষার্থী Logo ইবিতে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মিলনমেলায় নববর্ষ উদযাপন Logo ঠিকাদার পলাতক ,ভোগান্তিতে এলাকাবাসি Logo ধর্ষণে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. সুজন চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার Logo ২ জুন বাজেট পেশ করবে অন্তর্বর্তী সরকার Logo বাবার মৃত্যুর পর স্ত্রী রিয়ামনিকে বয়কটের ঘোষণা হিরো আলমের

গ্রহাণুর আঘাতে নাটকীয় বদল ঘটতে পারে পৃথিবীর: গবেষণা

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১০:৩১:৪৯ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ৭৫৬ বার পড়া হয়েছে
মাঝারি আকারের এক গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবীতে অপ্রত্যাশিত উপায়ে নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীদের। তাদের নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বেন্নুর মতোই প্রায় পাঁচশ মিটার ব্যাসের একটি গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ হলে কী ঘটবে তা সিমুলেশনের মাধ্যমে বিশদভাবে গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা।

তারা বলছে, ২১৮২ সালের দিকে এ ধরনের সংঘর্ষ ঘটার ঝুঁকি প্রায় দুই হাজার সাতশর মধ্যে একটি গ্রহাণুর রয়েছে। প্রায় প্রতি একশ থেকে দুইশ হাজার বছরে এ আকারের গ্রহাণু আঘাত হানে পৃথিবীতে। গবেষকরা অনুকরণ করেছেন, এমন সংঘর্ষ ঘটলে পৃথিবীর জলবায়ুর ওপর এর প্রভাব কেমন হবে এবং এর ফলে যে ৪০ কোটি টন ধূলিকণা নির্গত হবে তা কীভাবে বিশ্বকে বদলে দেবে।

তারা বলছেন, পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের ওপর নাটকীয় প্রভাব ফেলবে এই ঘটনা। আর এর প্রভাব এমন হবে যা পৃথিবীতে খাবারের ঘাটতি ও অন্যান্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তবে গবেষণায় আরও ইঙ্গিত মিলেছে, অপ্রত্যাশিত উজ্জ্বল দিকও থাকতে পারে এর।

এ সংঘর্ষ ঘটার তিন বা চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র পরিস্থিতিতে পড়তে পারে পৃথিবীর জলবায়ু। এ সময় সূর্য ম্লান হয়ে যাবে ও ভূপৃষ্ঠকে চার ডিগ্রি পর্যন্ত ঠাণ্ডা করবে এটি। যার ফলে বৃষ্টিপাত ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে ও বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরও কমে যাবে প্রায় ৩২ শতাংশ।

তবে এগুলো কেবল গড় ও পৃথিবীর নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলের পরিস্থিতিকে নাটকীয়ভাবে খারাপ করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।

“শীতের এই আকস্মিক প্রভাব পৃথিবীর উদ্ভিদের বেড়ে ওঠার জন্য প্রতিকূল জলবায়ু পরিস্থিতি তৈরি করবে। ফলে স্থলজ ও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে প্রাথমিকভাবে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া, যা গোটা বিশ্বে খাবার নিরাপত্তায় অনেক ব্যাঘাত ঘটাতে পারে,” বলেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ল্যান দাই।

তবে গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীর এমন অবস্থা বিভিন্ন মহাসাগরকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে। আসলে মহাসাগরের উন্নতি ঘটতে পারে। এ পরিবেশে সামুদ্রিক প্ল্যাঙ্কটন কেবল ছয় মাসের মধ্যে পুনরায় জন্মেছে এবং তারপর এদের সংখ্যা এতোটাই বাড়তে থাকে যে, গ্রহাণুটি আঘাত হানার সময় থেকেও এদের সংখ্যা এ সময় বেশি হয়ে যায়।

ধূলিকণার ওপর লোহার ঘনত্বের ফলাফলের কারণে এমনটি ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা, যা পরে মহাসাগরে নেমে যাবে। শৈবালের জন্য আরও খাবারের যোগান দেবে এটি, ফলে বাড়তে থাকবে শৈবালের সংখ্যা। এরপরে সেই শৈবাল খেয়ে বেঁচে থাকে এমন ছোট শিকারীকে অনেক পরিমাণে খাবারের যোগান দেবে এরা।

ড. লাই বলেছেন, “সিমুলেশনে দেখা গেছে, এ মাত্রাতিরিক্ত ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ও জুপ্ল্যাঙ্কটন জীবজগতের জন্য বয়ে আনবে আশীর্বাদ, যা স্থলজ প্রাণীদের মধ্যে যে উদীয়মান খাবারের ঘাটতি দেখা গিয়েছিল তা দূর করতে সহায়তা করতে পারে এটি।”

“গড়ে প্রতি একশ থেকে দুইশ হাজার বছরে মাঝারি আকারের বিভিন্ন গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ ঘটে। এর মানে হচ্ছে, আমাদের আদি পূর্বপুরুষরা হয়তো আগেও পৃথিবীতে এ ধরনের পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে গেছেন। যার প্রভাব সম্ভবত মানব বিবর্তন, এমনকি আমাদের নিজস্ব জেনেটিক চেহারা গঠনের উপরও পড়েছিল,” বলেছেন এ গবেষণার সহ-লেখক অ্যাক্সেল টিমারম্যান।

‘ক্লাইমেটিক অ্যান্ড ইকোলজিক্যাল রেসপন্স টু বেন্নু টাইপ অ্যাস্টেরয়েড কলিশন’ শিরোনামে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

১৫ বছর পর আজ বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক

গ্রহাণুর আঘাতে নাটকীয় বদল ঘটতে পারে পৃথিবীর: গবেষণা

আপডেট সময় : ১০:৩১:৪৯ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মাঝারি আকারের এক গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবীতে অপ্রত্যাশিত উপায়ে নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীদের। তাদের নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বেন্নুর মতোই প্রায় পাঁচশ মিটার ব্যাসের একটি গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ হলে কী ঘটবে তা সিমুলেশনের মাধ্যমে বিশদভাবে গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা।

তারা বলছে, ২১৮২ সালের দিকে এ ধরনের সংঘর্ষ ঘটার ঝুঁকি প্রায় দুই হাজার সাতশর মধ্যে একটি গ্রহাণুর রয়েছে। প্রায় প্রতি একশ থেকে দুইশ হাজার বছরে এ আকারের গ্রহাণু আঘাত হানে পৃথিবীতে। গবেষকরা অনুকরণ করেছেন, এমন সংঘর্ষ ঘটলে পৃথিবীর জলবায়ুর ওপর এর প্রভাব কেমন হবে এবং এর ফলে যে ৪০ কোটি টন ধূলিকণা নির্গত হবে তা কীভাবে বিশ্বকে বদলে দেবে।

তারা বলছেন, পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের ওপর নাটকীয় প্রভাব ফেলবে এই ঘটনা। আর এর প্রভাব এমন হবে যা পৃথিবীতে খাবারের ঘাটতি ও অন্যান্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তবে গবেষণায় আরও ইঙ্গিত মিলেছে, অপ্রত্যাশিত উজ্জ্বল দিকও থাকতে পারে এর।

এ সংঘর্ষ ঘটার তিন বা চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র পরিস্থিতিতে পড়তে পারে পৃথিবীর জলবায়ু। এ সময় সূর্য ম্লান হয়ে যাবে ও ভূপৃষ্ঠকে চার ডিগ্রি পর্যন্ত ঠাণ্ডা করবে এটি। যার ফলে বৃষ্টিপাত ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে ও বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরও কমে যাবে প্রায় ৩২ শতাংশ।

তবে এগুলো কেবল গড় ও পৃথিবীর নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলের পরিস্থিতিকে নাটকীয়ভাবে খারাপ করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।

“শীতের এই আকস্মিক প্রভাব পৃথিবীর উদ্ভিদের বেড়ে ওঠার জন্য প্রতিকূল জলবায়ু পরিস্থিতি তৈরি করবে। ফলে স্থলজ ও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে প্রাথমিকভাবে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া, যা গোটা বিশ্বে খাবার নিরাপত্তায় অনেক ব্যাঘাত ঘটাতে পারে,” বলেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ল্যান দাই।

তবে গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীর এমন অবস্থা বিভিন্ন মহাসাগরকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে। আসলে মহাসাগরের উন্নতি ঘটতে পারে। এ পরিবেশে সামুদ্রিক প্ল্যাঙ্কটন কেবল ছয় মাসের মধ্যে পুনরায় জন্মেছে এবং তারপর এদের সংখ্যা এতোটাই বাড়তে থাকে যে, গ্রহাণুটি আঘাত হানার সময় থেকেও এদের সংখ্যা এ সময় বেশি হয়ে যায়।

ধূলিকণার ওপর লোহার ঘনত্বের ফলাফলের কারণে এমনটি ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা, যা পরে মহাসাগরে নেমে যাবে। শৈবালের জন্য আরও খাবারের যোগান দেবে এটি, ফলে বাড়তে থাকবে শৈবালের সংখ্যা। এরপরে সেই শৈবাল খেয়ে বেঁচে থাকে এমন ছোট শিকারীকে অনেক পরিমাণে খাবারের যোগান দেবে এরা।

ড. লাই বলেছেন, “সিমুলেশনে দেখা গেছে, এ মাত্রাতিরিক্ত ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ও জুপ্ল্যাঙ্কটন জীবজগতের জন্য বয়ে আনবে আশীর্বাদ, যা স্থলজ প্রাণীদের মধ্যে যে উদীয়মান খাবারের ঘাটতি দেখা গিয়েছিল তা দূর করতে সহায়তা করতে পারে এটি।”

“গড়ে প্রতি একশ থেকে দুইশ হাজার বছরে মাঝারি আকারের বিভিন্ন গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ ঘটে। এর মানে হচ্ছে, আমাদের আদি পূর্বপুরুষরা হয়তো আগেও পৃথিবীতে এ ধরনের পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে গেছেন। যার প্রভাব সম্ভবত মানব বিবর্তন, এমনকি আমাদের নিজস্ব জেনেটিক চেহারা গঠনের উপরও পড়েছিল,” বলেছেন এ গবেষণার সহ-লেখক অ্যাক্সেল টিমারম্যান।

‘ক্লাইমেটিক অ্যান্ড ইকোলজিক্যাল রেসপন্স টু বেন্নু টাইপ অ্যাস্টেরয়েড কলিশন’ শিরোনামে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ।