শিরোনাম :
Logo চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি নেতাকে লাঞ্ছনার অভিযোগে প্রতিবাদ সভা Logo ৭ নং তরপুরচন্ডী ইউনিয়ন ইসলামী আন্দোলনের পরিচিতি সভা ও শপথ অনুষ্ঠান Logo পাল্টাপাল্টি আকাশসীমা বন্ধের মেয়াদ বাড়ালো ভারত-পাকিস্তান Logo ৪২৭ রোহিঙ্গাকে নিয়ে আচমকাই ডুবলো দুই নৌকা Logo আন্দোলনকারীদের মুঠোফোনে যে নির্দেশনা দিলেন ইশরাক Logo যমুনায় যাবে জামায়াতও Logo ইবির ৩৫ জন শিক্ষার্থীকে ডিন’স অ্যাওয়ার্ড প্রদান Logo রিকশাচালকদের রেইনকোট দিয়ে প্রশংসায় ভাসছে বিজয়ীর ফাউন্ডার তানিয়া ইশতিয়াক খান Logo জাতীয় প্রাণীবিজ্ঞান সম্মেলনে রানার-আপ রাবি সোয়ান ইউনিট Logo আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস উপলক্ষে চাঁদপুরে ডিএনসি’র উদ্যোগে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা

চুয়াডাঙ্গায় সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. তন্ময়ের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৮:৫২:২০ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
  • ৭৩৩ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. মো. এহসানুল হকের (তন্ময়) অবহেলা ও অপচিকিৎসার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অপচিকিৎসায় মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকা রোগীর পরিবারসহ ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বাজে আচরণ, অপচিকিৎসা, ক্লিনিকমুখী হতে বাধ্য করাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগীরা অংশ নেন।

মানববন্ধনে মহিমা বেগম (৪৫) নামের এক ভুল চিকিৎসার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীর ছেলে ইমরান হুসাইন বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর মাসের ৩ তারিখে আমার মায়ের ডান হাতের তালুতে বাঁশের একটি অংশ ফুটে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দেখায়, সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডা. এহসানুল হক তন্ময়। তিনি আমার মায়ের হাত দেখে বলেন, হাতের ভেতরে কিছু নেই। আমি তারপর বললাম যে এক্সা-রে ছাড়া কীভাবে বলছেন কিছু নেই? জবাবে তিনি বলেন, তুমি ডাক্তার না আমি? এ বলে শুধু ওষুধ লিখে দেন। সাথে আরও বলেন, যদি খুব বেশি সমস্যা হয়, দুই দিন পরে চেম্বারে দেখাতে। এরপর ওষুধ খাওয়ার পরেও মায়ের হাতের অবস্থার অবনতি হলে আমি তৎক্ষণাৎ মাকে তার চেম্বারে নিয়ে যায়। এসময় তিনি হাত দেখে বলেন, ভেতরে ইনফেকশন হয়েছে, বাঁশের অংশ আছে অপারেশন করা লাগবে। তারপর আমি বলি, আমার আম্মা হার্টের রোগী। তার হার্টের ভাল্ব অপারেশন করা। অপারেশন করার পরে তিনি কোনো ওষুধ খেতে পারেন না, ওষুধ খেলে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায় এবং হার্টের সমস্যা বেড়ে যায়। তিনি আমার কথা শোনার পরে বলেন, কোনো সমস্যা নেই। হাতের ছোট অপারেশন করলেই ঠিক হয়ে যাবে। আমরা ডাক্তারের কথামতো অপারেশন করাতে রাজি হই এবং ৫ তারিখে আম্মার অপারেশন করা হয়। কিন্তু অপারেশনের তিন দিন পর তার হাটের সমস্যা দেখা দেয়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দেখালে তাকে সাথে সাথে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করে দেয়। অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না, যার কারণে সেইখানে তিনি ছয় দিন সিসিইউতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় আসেন।

কিন্তু হাতের অপারেশনের জায়গাটা ঠিক না হয়ে ১৩ অক্টোবর রাতে ফুলে যায়। বেশি ফোলা দেখা দিলে হাত দিয়ে সামান্য চাপ দিতেই অপারেশনের স্থান থেকে রক্ত-পুঁজ এবং একটি বাঁশের চোচ বের হয়, যেটা বের করার জন্য অপারেশন করা হয়েছিল। তাহলে অপারেশন করে তিনি কী বের করলেন হাতের ভেতর থেকে? নাকি অপারেশনের নামে কাটাকাটি করলেন শুধু টাকা নেওয়ার জন্য? এমনকি তার সাথে কথা বললে তিনি তার ভুল স্বীকার করেননি। আমরা সাধারণ মানুষ কাদের ওপর ভরসা করে হাসপাতালে যাব?’

আরেক ভুক্তভোগীর স্বামী মোসারফ হোসেন বলেন, ‘আমার স্ত্রী আঁখি খাতুন পাইলস অপারেশনে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছে। ডা. তন্ময় অপারেশন করার পরে আমার স্ত্রী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে রাজশাহী নিয়ে গেলে সেখানের চিকিৎসক জানান পাইলসের অপারেশনই করা হয়নি। বরং অপারেশনের ফলে পাইল্সের অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। ভারতে নিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসা করাতে হবে। দুই বছর ধরে আমার স্ত্রী ডা. তন্ময়ের অপচিকিৎসার শিকার হয়ে ভুগছে।’

মুরাদ হোসেন নামে আরেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন করেছিলেন ডা. তন্ময়। অপারেশনের পরও পেটের মধ্যে সুতা অবশিষ্ট ছিল। দীর্ঘদিন আমরা এই ডাক্তারের কারণে ভুগছি। এই ডাক্তার মানুষকে মানুষ মনে করে না। প্রচণ্ড বাজে ব্যবহার, প্রচণ্ড রাগী। মনে হয় কোনো কিছুতে তিনি আসক্ত। সকলের সাথে খারাপ ব্যবহার তার অন্যতম একটি স্বভাব।’

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ভুক্তভোগী সোহান উদ্দীন, রাখি বেগম, মুরাদ হোসেন প্রমুখ। মানববন্ধনে প্রায় অর্ধশতাধিক ভুক্তভোগী অংশ নেন। মানববন্ধনে অংশ নেয়া কয়েকজন বক্তব্যে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সময় মতো হাসপাতালে না এসে ক্লিনিকে রোগী দেখা এবং হাসপাতালে আসা রোগীকে সরাসরি ক্লিনিকে দেখানোর জন্য চাপ দেওয়াসহ স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তোলেন।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. এহসানুল হক তন্ময়ের সাথে যোগাযোগের জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। সে কারণে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন চলাকালে হালিমা বেগম (৫৫) নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়। পিত্তথলিতে পাথর (গলব্লাডার স্টোন) রোগে আক্রান্ত ওই রোগীর অপারেশনটিও করছিলেন ডা. এহসানুল হক তন্ময়।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি নেতাকে লাঞ্ছনার অভিযোগে প্রতিবাদ সভা

চুয়াডাঙ্গায় সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. তন্ময়ের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

আপডেট সময় : ০৮:৫২:২০ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. মো. এহসানুল হকের (তন্ময়) অবহেলা ও অপচিকিৎসার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অপচিকিৎসায় মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকা রোগীর পরিবারসহ ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বাজে আচরণ, অপচিকিৎসা, ক্লিনিকমুখী হতে বাধ্য করাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগীরা অংশ নেন।

মানববন্ধনে মহিমা বেগম (৪৫) নামের এক ভুল চিকিৎসার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীর ছেলে ইমরান হুসাইন বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর মাসের ৩ তারিখে আমার মায়ের ডান হাতের তালুতে বাঁশের একটি অংশ ফুটে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দেখায়, সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডা. এহসানুল হক তন্ময়। তিনি আমার মায়ের হাত দেখে বলেন, হাতের ভেতরে কিছু নেই। আমি তারপর বললাম যে এক্সা-রে ছাড়া কীভাবে বলছেন কিছু নেই? জবাবে তিনি বলেন, তুমি ডাক্তার না আমি? এ বলে শুধু ওষুধ লিখে দেন। সাথে আরও বলেন, যদি খুব বেশি সমস্যা হয়, দুই দিন পরে চেম্বারে দেখাতে। এরপর ওষুধ খাওয়ার পরেও মায়ের হাতের অবস্থার অবনতি হলে আমি তৎক্ষণাৎ মাকে তার চেম্বারে নিয়ে যায়। এসময় তিনি হাত দেখে বলেন, ভেতরে ইনফেকশন হয়েছে, বাঁশের অংশ আছে অপারেশন করা লাগবে। তারপর আমি বলি, আমার আম্মা হার্টের রোগী। তার হার্টের ভাল্ব অপারেশন করা। অপারেশন করার পরে তিনি কোনো ওষুধ খেতে পারেন না, ওষুধ খেলে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায় এবং হার্টের সমস্যা বেড়ে যায়। তিনি আমার কথা শোনার পরে বলেন, কোনো সমস্যা নেই। হাতের ছোট অপারেশন করলেই ঠিক হয়ে যাবে। আমরা ডাক্তারের কথামতো অপারেশন করাতে রাজি হই এবং ৫ তারিখে আম্মার অপারেশন করা হয়। কিন্তু অপারেশনের তিন দিন পর তার হাটের সমস্যা দেখা দেয়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দেখালে তাকে সাথে সাথে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করে দেয়। অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না, যার কারণে সেইখানে তিনি ছয় দিন সিসিইউতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় আসেন।

কিন্তু হাতের অপারেশনের জায়গাটা ঠিক না হয়ে ১৩ অক্টোবর রাতে ফুলে যায়। বেশি ফোলা দেখা দিলে হাত দিয়ে সামান্য চাপ দিতেই অপারেশনের স্থান থেকে রক্ত-পুঁজ এবং একটি বাঁশের চোচ বের হয়, যেটা বের করার জন্য অপারেশন করা হয়েছিল। তাহলে অপারেশন করে তিনি কী বের করলেন হাতের ভেতর থেকে? নাকি অপারেশনের নামে কাটাকাটি করলেন শুধু টাকা নেওয়ার জন্য? এমনকি তার সাথে কথা বললে তিনি তার ভুল স্বীকার করেননি। আমরা সাধারণ মানুষ কাদের ওপর ভরসা করে হাসপাতালে যাব?’

আরেক ভুক্তভোগীর স্বামী মোসারফ হোসেন বলেন, ‘আমার স্ত্রী আঁখি খাতুন পাইলস অপারেশনে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছে। ডা. তন্ময় অপারেশন করার পরে আমার স্ত্রী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে রাজশাহী নিয়ে গেলে সেখানের চিকিৎসক জানান পাইলসের অপারেশনই করা হয়নি। বরং অপারেশনের ফলে পাইল্সের অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। ভারতে নিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসা করাতে হবে। দুই বছর ধরে আমার স্ত্রী ডা. তন্ময়ের অপচিকিৎসার শিকার হয়ে ভুগছে।’

মুরাদ হোসেন নামে আরেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন করেছিলেন ডা. তন্ময়। অপারেশনের পরও পেটের মধ্যে সুতা অবশিষ্ট ছিল। দীর্ঘদিন আমরা এই ডাক্তারের কারণে ভুগছি। এই ডাক্তার মানুষকে মানুষ মনে করে না। প্রচণ্ড বাজে ব্যবহার, প্রচণ্ড রাগী। মনে হয় কোনো কিছুতে তিনি আসক্ত। সকলের সাথে খারাপ ব্যবহার তার অন্যতম একটি স্বভাব।’

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ভুক্তভোগী সোহান উদ্দীন, রাখি বেগম, মুরাদ হোসেন প্রমুখ। মানববন্ধনে প্রায় অর্ধশতাধিক ভুক্তভোগী অংশ নেন। মানববন্ধনে অংশ নেয়া কয়েকজন বক্তব্যে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সময় মতো হাসপাতালে না এসে ক্লিনিকে রোগী দেখা এবং হাসপাতালে আসা রোগীকে সরাসরি ক্লিনিকে দেখানোর জন্য চাপ দেওয়াসহ স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তোলেন।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. এহসানুল হক তন্ময়ের সাথে যোগাযোগের জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। সে কারণে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন চলাকালে হালিমা বেগম (৫৫) নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়। পিত্তথলিতে পাথর (গলব্লাডার স্টোন) রোগে আক্রান্ত ওই রোগীর অপারেশনটিও করছিলেন ডা. এহসানুল হক তন্ময়।