বাংলাদেশের ফুটবল বহুদিন পর যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে এক প্রবাসীর আগমনে। হামজা চৌধুরীর মাঠে নামা নতুন স্বপ্নও জাগিয়েছে দেশের ফুটবলে। তার পথ ধরেই জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন আরও দুই প্রবাসী ফুটবলার—ফাহামিদুল ইসলাম ও শমিত সোম। পরশু সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে হারলেও ঢাকার স্টেডিয়ামে দেখা গেছে এক ঝলক নতুন সম্ভাবনার। পরদিনই হামজা ও শমিত ফিরে গেছেন নিজ নিজ গন্তব্যে—ইংল্যান্ড ও কানাডায়।
তবে এবার ইংল্যান্ডে ফিরলেও হামজার ক্লাব ঠিকানায় পরিবর্তন আসতে পারে। ধারে খেলা শেফিল্ড ইউনাইটেডের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ, তাই আপাতত ফিরতে হচ্ছে মূল দল লেস্টার সিটিতে যাদের সঙ্গে তার আরও দুই বছরের চুক্তি আছে।
এদিকে গুঞ্জন উঠেছে, গ্রিসের শীর্ষ ক্লাব অলিম্পিয়াকোস তাকে দলে নিতে আগ্রহী। গুঞ্জন যদি সত্যি হয়, তবে আগামী মৌসুমেই উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার সুযোগ পেতে পারেন এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। তবে নতুন ক্লাব বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে হামজা কেবল মাঠের নয়, মাঠের বাইরের আর্থিক দিকগুলোও নিশ্চয়ই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন।
শেফিল্ড ইউনাইটেডে থাকতে হামজা কত বেতন পেতেন কিংবা মূল ক্লাব লেস্টার সিটিতে সর্বশেষ তার আয় কত ছিল, এ নিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের কৌতূহল আছে। যদিও ক্লাবগুলো ফুটবলারদের পারিশ্রমিকের অঙ্কটা বরাবরই গোপন রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু নানা মাধ্যম হয়ে শেষ পর্যন্ত অঙ্কটা প্রকাশ পেয়েই যায়।
ফুটবল অর্থনীতি ও বাণিজ্য নিয়ে কাজ করা গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান ক্যাপোলজি যেমন বিশ্বের বিভিন্ন লিগে খেলা ফুটবলারদের সার্বিক তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। ক্যাপোলজির তথ্য অনুযায়ী, শেফিল্ডে থাকতে হামজা সপ্তাহে ৪১ হাজার ৪৭৩ ইউরো (৫৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা) বেতন পেতেন। সেই হিসেবে ক্লাব থেকে তার দৈনিক আয় ছিল ৫ হাজার ৯২৪ ইউরো (৮ লাখ ২৬ হাজার টাকা)।
হামজার সঙ্গে শেফিল্ডের ধারের চুক্তি ছিল ২৭ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত। এই ১২৪ দিনে তার পাওয়ার কথা ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৫৭৬ ইউরো (১০ কোটি ২৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা)।
ক্যাপোলজি আরও বলছে, ২০২৪–২৫ মৌসুমে হামজাই ছিলেন শেফিল্ডের সর্বোচ্চ বেতনভোগী ফুটবলার। তার সমান বেতন পেয়েছেন চিলিয়ান ফরোয়ার্ড বেন ব্রেরেটন দিয়াজ ও ইংলিশ স্ট্রাইকার রিয়ান ব্রুস্টার।
২৭ জানুয়ারির আগে হামজা খেলেছেন লেস্টার সিটিতে। তবে সেখানে তার সাপ্তাহিক বেতন অনেক কম ছিল—১৭ হাজার ৭৭৪ ইউরো (২৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা)। সেই হিসাবে দৈনিক আয় ছিল ২ হাজার ৫৩৯ ইউরো (৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা)। এই বেতন শেফিল্ডে পাওয়া বেতনের অর্ধেকেরও কম। আবার লেস্টারে ফেরার পর হামজার বেতন আগের মতোই থাকবে নাকি বাড়বে, তা জানা যাবে ২০২৫–২৬ মৌসুম শুরুর পর।
লেস্টার শহরের স্থানীয় পত্রিকা লেস্টার মার্কারি বলছে, শেফিল্ড প্রিমিয়ার লিগে উঠলে তারা হামজাকে লেস্টারের কাছ থেকে কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিত। কিন্তু হামজা হয়তো টানা দুই মৌসুম ক্লাবটির হয়ে চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে চাইবেন না। এদিকে লেস্টার নাকি তাকে বিক্রি করে দিতে চায়।
গ্রিসের রেডিও স্টেশন স্পোর্ট এফএমের সাংবাদিক জর্জ সানাকাস সম্প্রতি জানিয়েছেন, হামজাকে দলে ভেড়াতে চায় দেশটির সফলতম ক্লাব অলিম্পিয়াকোস। ক্লাবটির বর্তমান কোচ হোসে লুইস মেন্দিলিবারের নাকি হামজার খেলা বেশ মনে ধরেছে। মেন্দিলিবার যে কৌশলে অলিম্পিয়াকোসকে খেলান, তার সঙ্গে হামজা সহজেই মানিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২৪–২৫ মৌসুমে গ্রিক সুপার লিগের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অলিম্পিয়াকোস, ফলে তারা সরাসরি জায়গা করে নিয়েছে আগামী মৌসুমের উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে। হামজা চৌধুরী যদি এই ক্লাবে যোগ দেন, তবে সেটিই হবে তাঁর ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ প্রতিযোগিতায় প্রথম অংশগ্রহণ।
তবে অলিম্পিয়াকোস যদি তাকে দলে ভেড়াতে চায়, সেক্ষেত্রে লেস্টার সিটি কত অর্থে তাকে ছাড়তে রাজি হবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ট্রান্সফারমার্কেটের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, হামজার বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ৪৫ লাখ ইউরো, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬২ কোটি ৯০ লাখ টাকা।