অতএব যার ‘হায়া’ অর্থাৎ লজ্জা নেই, সে দুনিয়াতে মৃত এবং আখেরাতে হতভাগ্য। …অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতা করার সময় তাকে লজ্জা করে, আখেরাতে সাক্ষাতকালে আল্লাহ তাকে শাস্তিদানে লজ্জাবোধ করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতায় লজ্জাবোধ করে না, আল্লাহ তাকে শাস্তিদানে লজ্জাবোধ করবেন না। (ইবনুল কাইয়িম, আল-জাওয়াবুল কাফী লিমান সাআলা আনিদ দাওয়াইশ শাফি, পৃষ্ঠা ৬৯)

ইসলামে লজ্জা ও শালীনতার গুরুত্ব

ইসলামের দৃষ্টিতে লজ্জা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। যেমন—

২. আল্লাহর গুণ : লজ্জা মহান আল্লাহর গুণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীল লজ্জাশীল। তিনি লজ্জা ও শালীনতা পছন্দ করেন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৪০৬)

৩. নবী-রাসুলদের গুণ : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুসা (আ.) ছিলেন অত্যন্ত লজ্জাশীল একজন ব্যক্তি। অধিক লজ্জার কারণে তাঁর শরীরের সামান্য ত্বকও দেখা যায়নি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪০৪)

৪. লজ্জা কল্যাণের বাহক : মহানবী (সা.) বলেছেন, লজ্জা-শালীনতার পুরোটাই কল্যাণ। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৬)
৫. লজ্জা জান্নাত লাভের মাধ্যম : ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ, আর ঈমানদারদের স্থান জান্নাত। অন্যদিকে নির্লজ্জতা দুঃচরিত্রের অঙ্গ, আর দুঃচরিত্রের স্থান জাহান্নাম।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০০৯)

যাপিত জীবনে লজ্জার প্রয়োগ
১. স্বভাবজাত লজ্জা রক্ষা : আল্লাহ সৃষ্টিগতভাবে মানুষের ভেতর লজ্জা ও শালীনতার বোধ রেখেছেন। মুমিনের উচিত তা রক্ষা করা। এজন্য নবীজি (সা.) কারো চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতেন না, তিনি খোলা স্থানে গোসল করতেন না। পাপ কাজে সংকোচ বোধ করা স্বভাবজাত লজ্জার একটি দিক। তাকে গুরুত্ব দেওয়া।

২. একান্ত ব্যক্তিগত জীবনে শালীনতা : একান্ত ব্যক্তিগত জীবনেও মুমিন লজ্জা ও শালীনতা রক্ষা করবে। যেমন আয়েশা (রা.) বলেছেন, আমি ও রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো পরস্পরের লজ্জাস্থান দেখিনি।

৩. কথা-কাজে শালীনতা রক্ষা করা : মুমিন তার কথা ও কাজে লজ্জা ও শালীনতা রক্ষা করে চলবে। কেননা লজ্জা ও শালীনতা না থাকলে ব্যক্তি যে কোনো অন্যায় কাজও করে ফেলতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি নির্লজ্জ হয়ে পড়বে, তখন যা ইচ্ছা তা-ই করো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১২০)

৫. সমাজ থেকে অশ্লীলতা দূর করা : সামাজিক জীবন থেকে অশ্লীলতা দূর করা না গেলে শালীন জীবন যাপন করা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ বলেন, যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিতে ভালোবাসে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। (সুরা নুর, আয়াত : ১৯)

আল্লাহ সবাইকে সুমতি দান করুন। আমিন।