নিউজ ডেস্ক:
বিচারপতি ইমাম শুরাইহ রাহ. ইসলামি ইতিহাসে সুপরিচিত একটি নাম। কুফার বিচারক ছিলেন তিনি। ফিকহ শাস্ত্রে তাঁর পা-িত্য সর্বজনবিদিত। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশাতেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তবে নবীজির সাক্ষাত-সৌভাগ্য তাঁর হয়নি বিধায় তিনি সাহাবি নন; প্রথম সারির একজন বিশিষ্ট তাবেয়ি। ৭৮ কিংবা ৮০ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।
তামিম গোত্রের একজন পূণ্যবতী মহিলার সঙ্গে বিচারপতি শুরাইহের বিবাহ সম্পন্ন হয়। ভদ্র মহিলার নাম ছিল জয়নব বিনতে জারির। বৈবাহিক জীবনের প্রথম রাত্রি তারা কীভাবে যাপন করলেন, শুরাইহ নিজেই সেটার ইতিবৃত্তি তুলে ধরেছেন।
শুরাইহ বলেন, আমি যখন আমার স্ত্রীর কাছে গেলাম, বললাম সুন্নাত হলো, স্বামীর কাছে স্ত্রী আসলে স্বামী যেন দাঁড়িয়ে কিছু নামাজ পড়ে। দাম্পত্যজীবনের কল্যাণ কামনা করে এবং সবরকমের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চেয়ে আল্লাহ তায়ালার দরবারে মুনাজাত করে। শুরাইহ বলেন, সেজন্য আমি ওজু করতে গেলাম। দেখি, সেও আমার মতো ওজু করছে। তারপর দু’ রাকাত নামাজ পড়লাম। দেখি, সেও আমার অনুসরণে নামাজ পড়েছে। নামাজ শেষে আমি তার দিকে অগ্রসর হলাম। কাছে গিয়ে বসলাম এবং কপালে হাত রাখলাম। তখন সে আমাকে বলে উঠল, একটু ধীরে! একটু থামুন! অতঃপর সে তার কথা শুরু করল। ‘সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার। আমি তাঁর প্রশংসা করছি। তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি। দরূদ পাঠ করছি প্রিয়নবী মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনের তরে। হামদ ও সালাতের পর! আপনার ব্যাপারে আমি একেবারে অজ্ঞ। আপনার আচার-ব্যবহার এবং পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। অতএব আমাকে বলে দিন আপনার পছন্দের জিনিস; আমি তা করব এবং অপছন্দের জিনিসও; আমি তা পরিত্যাগ করব। আপনার গোত্রেও এমন নারী আছেন; আপনি যাকে বিয়ে করতে পারতেন। আমার গোত্রেও এমন পুরুষ আছেন; আমি যাকে বিয়ে করতে পারতাম। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো কিছুর ফায়সালা করে দেন, তখন সেটা হবেই। এখন আপনি আমার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, সুতরাং আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করুন। হয়তো উত্তমভাবে আমাকে রাখবেন আর না হয় অনুগ্রহপূর্বক আমাকে ছেড়ে দিবেন। এ কথাই আমার বলার ছিল। আমি মহান আল্লাহর নিকট আমার, আপনার এবং সকল মুসলমানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
শুরাইহ বলেন, আল্লাহর শপথ! নববধূর এসব কথা আমাকেও কথা বলতে বাধ্য করল। আমিও মুখ খুললাম। ‘সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার। আমি তাঁর প্রশংসা করছি। তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি। দরূদ পাঠ করছি প্রিয়নবী মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনের তরে। হামদ ও সালাতের পর! তুমি যে কথাগুলো ব্যক্ত করেছ; যদি ওগুলোর ওপর অটল থাকতে পারো তবে তো আমার বিরাট সৌভাগ্য। আর যদি মুখের দাবিই শুধু হয়, তবে ওগুলো তোমার বিরুদ্ধে প্রমাণ হয়ে থাকবে। আমি এই এই জিনিস পছন্দ করি এবং ওই ওই জিনিস অপছন্দ করি। আমার কোনো ভালো কাজ দেখলে সেটা প্রচার করতে পারবে আর মন্দ কোনো কিছু দেখলে গোপন রাখবে।
এবার সে জিজ্ঞেস করল, এখানে আমার সঙ্গে সাক্ষাত করতে আমার পরিবারের লোকদের আসা-যাওয়ার বেলায় আপনার মতামত কী? বললাম, আমি চাই না যে, বৈবাহিকসূত্রের আত্মীয়রা আমাকে বিরক্ত করবেন।
সে আরও জিজ্ঞেস করল, আপনার প্রতিবেশী লোকদের মধ্যে কে এমন; যে আপনার ঘরে ঢোকার অনুমতি চাইলে আমি অনুমতি দেব আর কে এমন; যাকে অনুমতি দেব না। বললাম, এই এই গোষ্ঠীর লোকেরা ভালো মানুষ এবং ওই ওই গোষ্ঠীর লোকেরা খারাপ।
শুরাইহ বলেন, আমি নববধূর সঙ্গে খুবই মনোজ্ঞ একরাত কাটালাম। এভাবে আমাদের একবছর চলে গেল। কখনও আমার স্ত্রী থেকে অসন্তোষজনক কোনো কিছু চোখে পড়েনি। একবছর পর একদিন আমি বিচারালয় থেকে ঘরে ফিরে দেখি, একজন বৃদ্ধা আমার ঘরে। সে আমার স্ত্রীকে উপদেশ দিচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কে? বলা হলো, তিনি তো তোমার প্রিয়তমার মা। বললাম, শুভেচ্ছা! স্বাগতম! আমি বসার পর তিনি আমার নিকট এসে বললেন, আবু উমাইয়া! তোমার স্ত্রীকে কেমন পেলে? বললাম, উত্তম স্ত্রী ও বিশ্বস্ত জীবনসঙ্গিনী। আপনি তাকে উত্তম শিষ্টাচার শিখিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
(বিস্তারিত: কিতাবুল আগানি; আবুল ফারজ ইসফাহানি, ১৭/২২০-২২৩, মিসর থেকে ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত)