শিরোনাম :
Logo সাতক্ষীরা ও কলারোয়া সীমান্তে বিজিবির বিশেষ অভিযান ৯৮ বোতল ভারতীয় মদসহ ১৫ লক্ষ টাকার মালামাল জব্দ Logo আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা,কয়রা যুবকের মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য Logo উপাচার্যের আশ্বাসের এক বছরেও হয়নি জুলাই কর্নারের বাস্তবায়ন Logo আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চাঁদপুর জেলা পুলিশের ভূমিকাঃ আইনশৃঙ্খলায় ইতিবাচক পরিবর্তন Logo ইবিতে শিক্ষক সংকট চরমে, দ্রুত নিয়োগের সুপারিশ  Logo সাতক্ষীরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মহাসিন আলম সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন Logo সাতক্ষীরা ও কলারোয়া সীমান্তে বিজিবির বিশেষ অভিযান ৯৮ বোতল ভারতীয় মদসহ ১৫ লক্ষ টাকার মালামাল জব্দ Logo মায়ের হাতেই সন্তানের সুশিক্ষার ভিত — ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হাবিবুর রহমান  Logo কয়রায় পানি প্রাপ্তি বিষয়ক অ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত Logo সোনালী সুদিন সমাজকল‍্যান সংস্থার উদ্যোগে দুস্থদের মাঝে সাইকেল ও নগদ অর্থ বিতরণ

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চাঁদপুর জেলা পুলিশের ভূমিকাঃ আইনশৃঙ্খলায় ইতিবাচক পরিবর্তন

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চাঁদপুর জেলা পুলিশের ভূমিকাঃ আইনশৃঙ্খলায় ইতিবাচক পরিবর্তন
সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী, চাঁদপুর।

‘মানুষ মরণশীল’ এই সত্যকে ধারণ করে পৃথিবীর নিয়মেই প্রতিটা মানুষকে মৃত্যুর হাত ধরে একদিন অনন্ত জীবনে চলে যেতে হয়।

এই যে আমাদের পৃথিবীতে আসা এবং চলে যাওয়া, মাঝের এই সময়টা ব্যক্তির কর্মকান্ড পৃথিবীতে তাঁকে অনন্ত জীবন দান করে। ব্যক্তির ভালো কর্মকান্ড তাকে যেমনিভাবে সম্মানিত করে বাঁচিয়ে রাখে ঠিক তেমনিভাবে তার কু’কর্মের জন্যও তিনি অনন্তকাল বেঁচে থাকেন।

ক্ষুদ্র এ জীবনে যে ক’জন ব্যক্তি পৃথিবীতে সৎকর্ম রেখে গেছেন তারা যুগযুগান্তর ধরে বেঁচে আছেন এবং অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার পদে মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম গত ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই সততা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন।

মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পুলিশে চাকুরী, অপরাধ দমন, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা, মাদক দ্রব্য উদ্ধার, কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম বেগবান, সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও ডাকাত আটক, মাদক, সন্ত্রাস, বাল্য বিয়ে ও নারী-শিশু নির্যাতনের ব্যাপরে জিরো টালারেন্স ঘোষণাসহ চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটনে রয়েছে তার অসামান্য অবদান। তার যুগোপযোগী দক্ষ নেতৃত্বে জেলার অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটেছে।

তিনি অত্র জেলায় সব ধরণের যানবাহন হতে চাঁদাবাজি বন্ধ করে সুধীজনদের প্রশংসা পেয়েছেন। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রার্থীদের দ্রুত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এবং সার্টিফিকেট প্রাপ্তি সহজীকরণ ও দীর্ঘসূত্রিতা অবসানের লক্ষ্যে তার কার্যালয়ে হটলাইন প্রতিষ্ঠাপূর্বক আবেদন প্রাপ্তির দ্রুততম সময়ের মধ্যে সার্টিফিকেট প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা পরিহারের লক্ষ্যে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে ও অন্যকে উৎসাহিত করতে তিনি সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে তিনি জনপ্রতিনিধি, সুধীজন, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া প্রতিনিধি, সর্বস্তরের জনগণ এবং সকল অফিসার ফোর্সদের সাথে বিভিন্ন সময় মতবিনিময় করেন। এর মাধ্যমে তিনি জেলা পুলিশের মূল মেসেজ সকলের নিকট পৌঁছে দিতে সক্ষম হন।

পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব জেলা পুলিশকে ঢেলে সাজিয়েছেন। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে মাঠ পর্যায়ের সকল বিষয়ে খোঁজ খবর রাখছেন। তিনি অনেকটাই প্রমাণ করেছেন পুলিশ জনগণের বন্ধু।

ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বুঝতে পেরেছেন, যে মাদক ভয়াবহ রুপ ধারণ করে বর্তমান সমাজের প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পরেছে। তাই শুধুমাত্র শাস্তি দিয়ে কিছুতেই মাদক সমূলে নির্মূল করা সম্ভব নয়। আর এজন্য তিনি চাঁদপুর জেলাকে মাদকমুক্ত করতে কিছু ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছেন।

তিনি সুশীল সমাজের সহযোগিতায় বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে জেলার জনবহুল এলাকা, হাট বাজারগুলোতে মাদকবিরোধী প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।

পাশাপশি তিনি ‘মাদক বিক্রেতা ও মাদক সেবনকারীদের এ পথ থেকে সরে না আসলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে’ বলে হুশিয়ার করে দিচ্ছেন।

এছাড়াও পুলিশ সুপারের কঠোর অবস্থানের ফলে চাঁদপুর জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্যান্য জেলার চেয়ে স্বাভাবিক রয়েছে বলে জেলাবাসী বিশ্বাস করেন।

চাঁদপুর জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে মতলব উত্তর উপজেলার আলোচিত হাবিব উল্লাহ হত্যা, কচুয়ায় ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা চালক ফারুক হোসেন হত্যা, মতলব দক্ষিণে আলোচিত ফাতেমা বেগম রুপালী হত্যা, মতলব দক্ষিণে ইজি বাইক চালক মহিন মিয়াজী হত্যা, শাহরাস্তিতে আলমগীর হোসেন হত্যা ও হাজীগঞ্জে বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আজাদ সরকার হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন।

চাঁদপুর জেলা পুলিশ ২১৯৪ টি মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও রহস্য উদঘাটন শেষে ৫০৫৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার, ২৮ টি ধারালো অস্ত্র, ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৮ রাউন্ড গুলি এবং ২১ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করেছে।

এই সময়ে ৩০৮২৮ পিস ইয়াবা, ২৬৯.৩৮২ কেজি গাঁজা, ১.২৫ লিটার দেশী, ২০১ বোতল বিদেশী মদ এবং ১৪০ বোতল ফেনসিডিল চাঁদপুর জেলা পুলিশ উদ্ধার করে মাদকের সাথে আটককৃতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় অন্তর্গত ৮টি থানায় সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেলের ও এলআইসি সফল প্রচেষ্টায় বিভিন্ন কারণে মোবাইল ফোন হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মোবাইল ফোন মালিকদের সাধারণ ডায়েরির (জিডি) প্রেক্ষিতে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গেল এক বছরে ৩ হাজার ৬৬৪ টি জিডির প্রেক্ষিতে হারানো অথবা চুরি যাওয়া মোট ১ হাজার ১৪১টি মোবাইল ফোন উদ্ধার পূর্বক প্রকৃত মালিকের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা পুলিশের সংশ্লিষ্ট তথ্যসূত্রে আরও জানা গেছে, বিভিন্ন মামলায় পলাতক ও পরোয়ানাভূক্ত ৭৭৭১ জন আসামিকে গ্রেপ্তারপূর্বক আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

এছাড়াও জিডির প্রেক্ষিতে ৬৫৪ জন নিখোঁজ ব্যক্তি (ভিকটিম) উদ্ধার করে তাদের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেছে জেলা পুলিশ।

নারী ও শিশু সহায়তা হেল্প ডেক্স থেকে ২৮৩ জন সেবা গ্রহণ করেছে এবং ২০১ জনের অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে।

প্রবাসীদের তাৎক্ষণিক ও সার্বক্ষণিক সেবা নিশ্চিত করতে হট লাইন নাম্বার চালু করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে ১২৮ জন সেবা গ্রহণ করেছে এবং ৯৬ টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা পুলিশ আরো জানায়, গেল এক বছরে পুলিশ সুপারের সাথে ১২১০ জন দর্শনার্থী স্ব শরীরে এসে সেবা গ্রহণ করেছেন এরমধ্যে ৮৬০ জন পুরুষ এবং ৩৫০ জন নারী।

বিগত বছরে চাঁদপুরবাসীর নিরাপত্তা রক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলার ৮টি থানায় নিয়মিত পুলিশ টহল, চেক পোস্ট পরিচালনা,
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অভিযান, বিভিন্ন থানায় ওপেন হাউজ ডে, কমিউনিটি পুলিশিং সভা, জেলা পুলিশের ফেসবুক পেইজে সতর্কতামূলক পোষ্ট, বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ঘটনায় প্রেস ব্রিফিং সহ নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

চাঁদপুরবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে পুলিশ সুপার
মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম বলেন, দেখতে দেখতে দায়িত্বের এক বছর অতিবাহিত হয়েছে। অনেক বড় জেলা হিসেবে এ জেলায় অপরাধ প্রবনতা তুলনামূলক কম, মানুষজনও শিক্ষিত ও সচেতন। তাই সবকিছুই বিশেষ ভাবে পর্যবেক্ষণে রেখে কাজ করে যাচ্ছি। পুলিশের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি জেলা পুলিশকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এ কাজে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। নেই কোনো অসুবিধা।

বরং রয়েছে দেশের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করতে পারার এক অপরিসীম পরিতৃপ্তি। যতদিন এ জেলায় থাকছি, প্রতি মুহুর্তই আমি আমার দায়িত্ব সর্বোচ্চ নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাব।’

পুলিশ সুপার বলেন, মাদক আমাদের সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। মাদকের সাথে কোন আপোষ নেই, মাদককে কোনভাবেই ছাড় ছাড় দেয়া যাবেনা। চাকুরী জীবনে আমি কখনো মাদকের সাথে আপোষ করিনি ভবিষ্যতেও করবোনা। যুব সমাজকে রক্ষায় জেলায় মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান অব্যহত থাকবে।

পুলিশ সুপার আরো বলেন— সমাজের অসহায়, নির্যাতিত মানুষের পুলিশ বাহিনীর নিকট ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা অনেক বেশী। চাঁদপুর জেলা পুলিশ মানুষের আশা—ভরসার ধারক ও বাহক হয়ে উঠতে চায়। ইতিমধ্যেই পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পদ্ধতির স্বচ্ছতায় পুলিশ সুপারের সভাপতিত্বে সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কনস্টেবল পদে ১৫৫ জন তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন পূরণ হয়।

পরিশেষে পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, চাঁদপুরের সম্মানিত নাগরিক ও রেমিটেন্স যোদ্ধাগণ জেলা পুলিশের প্রতি আস্থা রেখেছেন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, সেজন্য জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্যের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ রইল।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

সাতক্ষীরা ও কলারোয়া সীমান্তে বিজিবির বিশেষ অভিযান ৯৮ বোতল ভারতীয় মদসহ ১৫ লক্ষ টাকার মালামাল জব্দ

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চাঁদপুর জেলা পুলিশের ভূমিকাঃ আইনশৃঙ্খলায় ইতিবাচক পরিবর্তন

আপডেট সময় : ০২:০৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চাঁদপুর জেলা পুলিশের ভূমিকাঃ আইনশৃঙ্খলায় ইতিবাচক পরিবর্তন
সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী, চাঁদপুর।

‘মানুষ মরণশীল’ এই সত্যকে ধারণ করে পৃথিবীর নিয়মেই প্রতিটা মানুষকে মৃত্যুর হাত ধরে একদিন অনন্ত জীবনে চলে যেতে হয়।

এই যে আমাদের পৃথিবীতে আসা এবং চলে যাওয়া, মাঝের এই সময়টা ব্যক্তির কর্মকান্ড পৃথিবীতে তাঁকে অনন্ত জীবন দান করে। ব্যক্তির ভালো কর্মকান্ড তাকে যেমনিভাবে সম্মানিত করে বাঁচিয়ে রাখে ঠিক তেমনিভাবে তার কু’কর্মের জন্যও তিনি অনন্তকাল বেঁচে থাকেন।

ক্ষুদ্র এ জীবনে যে ক’জন ব্যক্তি পৃথিবীতে সৎকর্ম রেখে গেছেন তারা যুগযুগান্তর ধরে বেঁচে আছেন এবং অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার পদে মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম গত ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই সততা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন।

মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পুলিশে চাকুরী, অপরাধ দমন, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা, মাদক দ্রব্য উদ্ধার, কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম বেগবান, সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও ডাকাত আটক, মাদক, সন্ত্রাস, বাল্য বিয়ে ও নারী-শিশু নির্যাতনের ব্যাপরে জিরো টালারেন্স ঘোষণাসহ চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটনে রয়েছে তার অসামান্য অবদান। তার যুগোপযোগী দক্ষ নেতৃত্বে জেলার অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটেছে।

তিনি অত্র জেলায় সব ধরণের যানবাহন হতে চাঁদাবাজি বন্ধ করে সুধীজনদের প্রশংসা পেয়েছেন। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রার্থীদের দ্রুত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এবং সার্টিফিকেট প্রাপ্তি সহজীকরণ ও দীর্ঘসূত্রিতা অবসানের লক্ষ্যে তার কার্যালয়ে হটলাইন প্রতিষ্ঠাপূর্বক আবেদন প্রাপ্তির দ্রুততম সময়ের মধ্যে সার্টিফিকেট প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা পরিহারের লক্ষ্যে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে ও অন্যকে উৎসাহিত করতে তিনি সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে তিনি জনপ্রতিনিধি, সুধীজন, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া প্রতিনিধি, সর্বস্তরের জনগণ এবং সকল অফিসার ফোর্সদের সাথে বিভিন্ন সময় মতবিনিময় করেন। এর মাধ্যমে তিনি জেলা পুলিশের মূল মেসেজ সকলের নিকট পৌঁছে দিতে সক্ষম হন।

পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব জেলা পুলিশকে ঢেলে সাজিয়েছেন। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে মাঠ পর্যায়ের সকল বিষয়ে খোঁজ খবর রাখছেন। তিনি অনেকটাই প্রমাণ করেছেন পুলিশ জনগণের বন্ধু।

ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বুঝতে পেরেছেন, যে মাদক ভয়াবহ রুপ ধারণ করে বর্তমান সমাজের প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পরেছে। তাই শুধুমাত্র শাস্তি দিয়ে কিছুতেই মাদক সমূলে নির্মূল করা সম্ভব নয়। আর এজন্য তিনি চাঁদপুর জেলাকে মাদকমুক্ত করতে কিছু ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছেন।

তিনি সুশীল সমাজের সহযোগিতায় বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে জেলার জনবহুল এলাকা, হাট বাজারগুলোতে মাদকবিরোধী প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।

পাশাপশি তিনি ‘মাদক বিক্রেতা ও মাদক সেবনকারীদের এ পথ থেকে সরে না আসলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে’ বলে হুশিয়ার করে দিচ্ছেন।

এছাড়াও পুলিশ সুপারের কঠোর অবস্থানের ফলে চাঁদপুর জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্যান্য জেলার চেয়ে স্বাভাবিক রয়েছে বলে জেলাবাসী বিশ্বাস করেন।

চাঁদপুর জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে মতলব উত্তর উপজেলার আলোচিত হাবিব উল্লাহ হত্যা, কচুয়ায় ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা চালক ফারুক হোসেন হত্যা, মতলব দক্ষিণে আলোচিত ফাতেমা বেগম রুপালী হত্যা, মতলব দক্ষিণে ইজি বাইক চালক মহিন মিয়াজী হত্যা, শাহরাস্তিতে আলমগীর হোসেন হত্যা ও হাজীগঞ্জে বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আজাদ সরকার হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন।

চাঁদপুর জেলা পুলিশ ২১৯৪ টি মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও রহস্য উদঘাটন শেষে ৫০৫৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার, ২৮ টি ধারালো অস্ত্র, ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৮ রাউন্ড গুলি এবং ২১ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করেছে।

এই সময়ে ৩০৮২৮ পিস ইয়াবা, ২৬৯.৩৮২ কেজি গাঁজা, ১.২৫ লিটার দেশী, ২০১ বোতল বিদেশী মদ এবং ১৪০ বোতল ফেনসিডিল চাঁদপুর জেলা পুলিশ উদ্ধার করে মাদকের সাথে আটককৃতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় অন্তর্গত ৮টি থানায় সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেলের ও এলআইসি সফল প্রচেষ্টায় বিভিন্ন কারণে মোবাইল ফোন হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মোবাইল ফোন মালিকদের সাধারণ ডায়েরির (জিডি) প্রেক্ষিতে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গেল এক বছরে ৩ হাজার ৬৬৪ টি জিডির প্রেক্ষিতে হারানো অথবা চুরি যাওয়া মোট ১ হাজার ১৪১টি মোবাইল ফোন উদ্ধার পূর্বক প্রকৃত মালিকের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা পুলিশের সংশ্লিষ্ট তথ্যসূত্রে আরও জানা গেছে, বিভিন্ন মামলায় পলাতক ও পরোয়ানাভূক্ত ৭৭৭১ জন আসামিকে গ্রেপ্তারপূর্বক আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

এছাড়াও জিডির প্রেক্ষিতে ৬৫৪ জন নিখোঁজ ব্যক্তি (ভিকটিম) উদ্ধার করে তাদের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেছে জেলা পুলিশ।

নারী ও শিশু সহায়তা হেল্প ডেক্স থেকে ২৮৩ জন সেবা গ্রহণ করেছে এবং ২০১ জনের অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে।

প্রবাসীদের তাৎক্ষণিক ও সার্বক্ষণিক সেবা নিশ্চিত করতে হট লাইন নাম্বার চালু করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে ১২৮ জন সেবা গ্রহণ করেছে এবং ৯৬ টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা পুলিশ আরো জানায়, গেল এক বছরে পুলিশ সুপারের সাথে ১২১০ জন দর্শনার্থী স্ব শরীরে এসে সেবা গ্রহণ করেছেন এরমধ্যে ৮৬০ জন পুরুষ এবং ৩৫০ জন নারী।

বিগত বছরে চাঁদপুরবাসীর নিরাপত্তা রক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলার ৮টি থানায় নিয়মিত পুলিশ টহল, চেক পোস্ট পরিচালনা,
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অভিযান, বিভিন্ন থানায় ওপেন হাউজ ডে, কমিউনিটি পুলিশিং সভা, জেলা পুলিশের ফেসবুক পেইজে সতর্কতামূলক পোষ্ট, বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ঘটনায় প্রেস ব্রিফিং সহ নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

চাঁদপুরবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে পুলিশ সুপার
মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম বলেন, দেখতে দেখতে দায়িত্বের এক বছর অতিবাহিত হয়েছে। অনেক বড় জেলা হিসেবে এ জেলায় অপরাধ প্রবনতা তুলনামূলক কম, মানুষজনও শিক্ষিত ও সচেতন। তাই সবকিছুই বিশেষ ভাবে পর্যবেক্ষণে রেখে কাজ করে যাচ্ছি। পুলিশের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি জেলা পুলিশকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এ কাজে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। নেই কোনো অসুবিধা।

বরং রয়েছে দেশের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করতে পারার এক অপরিসীম পরিতৃপ্তি। যতদিন এ জেলায় থাকছি, প্রতি মুহুর্তই আমি আমার দায়িত্ব সর্বোচ্চ নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাব।’

পুলিশ সুপার বলেন, মাদক আমাদের সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। মাদকের সাথে কোন আপোষ নেই, মাদককে কোনভাবেই ছাড় ছাড় দেয়া যাবেনা। চাকুরী জীবনে আমি কখনো মাদকের সাথে আপোষ করিনি ভবিষ্যতেও করবোনা। যুব সমাজকে রক্ষায় জেলায় মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান অব্যহত থাকবে।

পুলিশ সুপার আরো বলেন— সমাজের অসহায়, নির্যাতিত মানুষের পুলিশ বাহিনীর নিকট ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা অনেক বেশী। চাঁদপুর জেলা পুলিশ মানুষের আশা—ভরসার ধারক ও বাহক হয়ে উঠতে চায়। ইতিমধ্যেই পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পদ্ধতির স্বচ্ছতায় পুলিশ সুপারের সভাপতিত্বে সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কনস্টেবল পদে ১৫৫ জন তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন পূরণ হয়।

পরিশেষে পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, চাঁদপুরের সম্মানিত নাগরিক ও রেমিটেন্স যোদ্ধাগণ জেলা পুলিশের প্রতি আস্থা রেখেছেন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, সেজন্য জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্যের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ রইল।