৬ মাস হার্ভার্ডে আসতে পারবেন না বিদেশি শিক্ষার্থীরা, ট্রাম্পের স্থগিতাদেশ

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস)। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই নতুন আদেশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে জটিল সম্পর্ক তৈরি করেছে এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিপজ্জনক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য দেয়নি।

এই সিদ্ধান্তের ফলে হার্ভার্ডে নতুন শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হতে ইচ্ছুক বিদেশিদের প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে। এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের ভিসাও স্থগিত করা হয়েছে। এমনকি বর্তমানে হার্ভার্ডে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের বিষয়েও বিবেচনা করতে বলা হয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তরকে।

তবে গত সপ্তাহে একজন ফেডারেল বিচারক ডিএইচএস-এর আগের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ জারি করেছিলেন, যা বুধবারের এই নতুন আদেশের পর পুনরায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই স্থগিতাদেশ ছয় মাসেরও বেশি সময় বাড়ানো হতে পারে।

ট্রাম্প বলেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মীদের নাগরিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে এটি মোকাবিলা করা জরুরি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার অভিযোগও তোলেন।

হার্ভার্ডের প্রতিক্রিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়টি এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ও প্রতিশোধমূলক বলে আখ্যা দিয়েছে। হার্ভার্ড বলেছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী অধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন।

হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার, যা মোট শিক্ষার্থীর ২৭ শতাংশ। এই সিদ্ধান্তের ফলে হাজারো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ এখন ঝুঁকির মুখে।

পেছনের প্রেক্ষাপট
সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে হার্ভার্ডের টানাপোড়েন বেড়েছে। প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল আটকে দিয়েছে এবং ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছে। গত মাসে ডিএইচএস সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম হার্ভার্ডের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সার্টিফিকেশন বাতিল করেছিলেন, যা আদালত দ্রুত স্থগিত করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, হার্ভার্ড-চীন সম্পর্ক এবং গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ মার্কিন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

একই দিনে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও হোয়াইট হাউস অভিযোগ তুলেছে— তারা নাকি ইহুদি শিক্ষার্থীদের নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে। এর ফলস্বরূপ, প্রতিষ্ঠানটির স্বীকৃতি বাতিলের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

ট্যাগস :

৬ মাস হার্ভার্ডে আসতে পারবেন না বিদেশি শিক্ষার্থীরা, ট্রাম্পের স্থগিতাদেশ

আপডেট সময় : ০৬:৫৩:০২ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস)। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই নতুন আদেশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে জটিল সম্পর্ক তৈরি করেছে এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিপজ্জনক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য দেয়নি।

এই সিদ্ধান্তের ফলে হার্ভার্ডে নতুন শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হতে ইচ্ছুক বিদেশিদের প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে। এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের ভিসাও স্থগিত করা হয়েছে। এমনকি বর্তমানে হার্ভার্ডে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের বিষয়েও বিবেচনা করতে বলা হয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তরকে।

তবে গত সপ্তাহে একজন ফেডারেল বিচারক ডিএইচএস-এর আগের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ জারি করেছিলেন, যা বুধবারের এই নতুন আদেশের পর পুনরায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই স্থগিতাদেশ ছয় মাসেরও বেশি সময় বাড়ানো হতে পারে।

ট্রাম্প বলেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মীদের নাগরিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে এটি মোকাবিলা করা জরুরি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার অভিযোগও তোলেন।

হার্ভার্ডের প্রতিক্রিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়টি এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ও প্রতিশোধমূলক বলে আখ্যা দিয়েছে। হার্ভার্ড বলেছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী অধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন।

হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার, যা মোট শিক্ষার্থীর ২৭ শতাংশ। এই সিদ্ধান্তের ফলে হাজারো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ এখন ঝুঁকির মুখে।

পেছনের প্রেক্ষাপট
সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে হার্ভার্ডের টানাপোড়েন বেড়েছে। প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল আটকে দিয়েছে এবং ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছে। গত মাসে ডিএইচএস সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম হার্ভার্ডের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সার্টিফিকেশন বাতিল করেছিলেন, যা আদালত দ্রুত স্থগিত করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, হার্ভার্ড-চীন সম্পর্ক এবং গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ মার্কিন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

একই দিনে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও হোয়াইট হাউস অভিযোগ তুলেছে— তারা নাকি ইহুদি শিক্ষার্থীদের নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে। এর ফলস্বরূপ, প্রতিষ্ঠানটির স্বীকৃতি বাতিলের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।