বৃহস্পতিবার | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo পদত্যাগ করলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ Logo সাতক্ষীরা-কলারোয়া সীমান্তে বিজিবির বিশেষ অভিযানে ভারতীয় মদ ও ঔষধসহ আড়াই লক্ষাধিক টাকার চোরাচালানী মালামাল জব্দ Logo কয়রায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভা Logo চাঁদপুর ভূঁইয়ার ঘাট ডিঙ্গি মাঝি সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন Logo টেকনাফে বিজিবির অভিযানে সাগর পথে মানব পাচারকালে দুই দালালসহ ৭ জন ভিকটিম উদ্ধার Logo দেশকে এগিয়ে নেয়ার ‘ডিটেইল প্ল্যানিং’ শুধু বিএনপির আছে: তারেক রহমান Logo রাশিয়াকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো অধিকার নেই কিয়েভের : জেলেনস্কি Logo তফসিল ঘোষণার পর বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ, আন্দোলন থেকে বিরত থাকার আহ্বান Logo চাঁদপুরে সোনালী ব্যাংকের সিবিএ নেতা আবদুস সামাদ মিয়ার ইন্তেকাল—সহকর্মীদের মাঝে গভীর শোক Logo পলাশবাড়ীতে পাক হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা

শিশুর মানসিক গঠনে করণীয়

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৩:২৭:৫২ অপরাহ্ণ, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭৮৫ বার পড়া হয়েছে
সন্তানের প্রতিপালন মা-বাবার দায়িত্ব। তারাই সন্তানকে আগামী দিনের গড়ে তোলেন। শিশুর প্রতিপালনের দুটি দিক : এক. বাহ্যিক প্রতিপালন। যেমন শিশুর খাবার ও চিকিত্সার ব্যবস্থা করা, দুই. তার মনস্তত্ব গঠন। ইসলাম শিশুর বাহ্যিক ও মানসিক উভয় প্রকার গঠন নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে। মা-বাবা যেমন শিশুর খাবার, পোশাক, স্বাস্থ্য-চিকিত্সার মতো বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখবে, তেমনি তারা ঈমান, আখলাক ও চিন্তা-ভাবনাগুলোর প্রতিও লক্ষ্য রাখবে। সৃষ্টিগতভাবেই সন্তানের প্রতি মা-বাবা অত্যন্ত স্নেহশীল। আল্লাহ মা-বাবার ভেতর এমন মমত্ব ও ভালোবাসা তৈরি করে দেন যে, তারা শিশুর সর্বপ্রকার ভালো-মন্দের খেয়াল রাখে। নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে সব প্রয়োজন পূরণ করে। তবে মা-বাবাকে তখনই দায়িত্বশীল বলা যাবে, যখন তারা সন্তানের দৈহিক গঠনের মতো, মানসিক গঠনকেও গুরুত্ব দেবে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করবে যেন শিশুটি সুস্থ দেহের মতো সুস্থ চিন্তা-ভাবনা ও বিশ্বাস নিয়ে গড়ে ওঠে।

ইসলাম সন্তানের মানসিক গঠনে বিশুদ্ধ বোধ ও বিশ্বাসকে গুরুত্ব দেয়। অর্থাত্ মা-বাবা শিশুকে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসগুলো শেখানের মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্বাস ও চেতনা নিয়ে বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে। কেননা বিশুদ্ধ বিশ্বাসই শিশুর নীতি-নৈতিকতার রক্ষাকবজ। যে শিশু এই বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে উঠবে যে একজন আল্লাহ আছেন এবং তিনি আমাকে দেখছেন। আল্লাহ পরকালে ভালো ও মন্দ কাজের উপযুক্ত প্রতিদান দেবেন, তখন সে অন্যায় ও অপরাধে লিপ্ত হতে দ্বিধা করবে। আলী (রা.) বলেন, তোমরা শিশুকে তিনটি বিষয় শেখাও। তা হলো, নবীজি (সা.)-এর ভালোবাসা, নবীপরিবারের ভালোবাসা এবং কোরআনের তিলাওয়াত। (তাবারানি)

এখানে এমন তিনটি বিষয় শেখাতে বলা হয়েছে, যার সঙ্গে শিশুর মনস্তত্ব ও বিশ্বাস সম্পর্কিত। নবীজি (সা.)-এর ভালোবাসা শিশুকে ধর্মপ্রাণ ও আল্লাহমুখী করবে, নবীপরিবার ও সাহাবিদের ভালোবাসা তাঁকে সত্যান্বেষী ও সত্যপ্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করবে এবং কোরআনের জ্ঞান তাঁকে দুনিয়া ও আখেরাতে সুপথ প্রদর্শন করবে।

সন্তানের মানসিক গঠনের সর্বোত্তম সময় শৈশব। কেননা শিশু নিষ্কলুষ পরিচ্ছন্ন হূদয় নিয়ে জন্ম করে। যা বিশুদ্ধ বোধ ও বিশ্বাস ধারণের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত। আবু হুরায়রা বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক নবজাতকই ফিতরাতের ওপর জন্ম লাভ করে। অতঃপর তার পিতামাতা তাকে ইহুদি, খ্রিস্টান বা অগ্নিপূজারী রূপে গড়ে তোলে। যেমন চতুষ্পদ পশু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে কোনো (জন্মগত) কানকাটা দেখতে পাও?’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫১৮)

উল্লিখিত হাদিস থেকে সন্তানের মানসিক গঠনে মা-বাবার ভূমিকা ও পরিবার-প্রতিবেশের প্রভাব সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। অর্থাৎ মা-বাবা যদি দায়িত্বশীল ও সচেতন হন এবং সন্তানের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করতে পারেন, তবে সন্তান সুষ্ঠু মন-মানসিকতা নিয়ে বড় হবে। নতুবা তার মানসিক অবস্থা হবে অসুস্থ।

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, শৈশবে শিশুর মানসিক গঠন ঠিক করা ঠিক ততটাই সহজ একটি চারা গাছকে বিশেষ অবয়ব দেওয়া যতটা সহজ। শৈশবে খুব সহজেই শিশুর চিন্তা-ভাবনা ও মন-মানসিকতা সুন্দরভাবে গড়ে তোলা যায়। তার জীবনের গতিধারা সুপথে পরিচালিত করা যায়। একটি সুনির্দিষ্ট মনোভাব নিয়ে বড় হওয়ার পর তাঁর চিন্তার পরিবর্তন কঠিন হয়ে যায়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) শিশুর মানসিক গঠনের প্রতি অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। হাদিস ও সিরাত গ্রন্থগুলোতে তার অসংখ্য প্রমাণ বিদ্যমান। আমর ইবনে আবি সালামা (রা.) বলেন, আমি শৈশবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে খাবার খাচ্ছিলাম। আমার হাত এদিক সেদিক করছিলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, বত্স! আল্লাহর নাম স্মরণ কোরো, ডান হাতে খাও এবং নিজের সামনে থেকে খাও। (সহিহ মুসলিম)

একইভাবে আবদুল্লাহ বিন আমের (রা.) বলেন, একদিন মহানবী (সা.) আমাদের বাড়ি আগমন করলেন। আমার মা আমাকে ডাকলেন, এসো তোমাকে একটি জিনিস দেব। নবীজি (সা.) আমার মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তাকে কি দিতে চাও? মা বললেন, খেজুর দিতে চাই। তিনি বললেন, যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে তবে তোমার নামে একটি মিথ্যা বলার পাপ লিপিবদ্ধ হতো। (সুনানে আবু দাউদ)

নবীজি (সা.) উল্লিখিত হাদিসে শিশুর সঙ্গে প্রতারণামূলক আচরণ করতে নিষেধ করেছেন। কেননা তা শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং তাকে মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত করে। এছাড়াও শিশুরা মূলত তার মা-বাবা ও পরিবারের বড়দের অনুসরণ করতে ভালোবাসে। শিশুর মানসিক গঠনে মা-বাবার সুন্দর আচরণ ও জীবন যাপনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আল্লাহ সবাইকে শিশুর মানসিক গঠনে যত্নশীল হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

পদত্যাগ করলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ

শিশুর মানসিক গঠনে করণীয়

আপডেট সময় : ০৩:২৭:৫২ অপরাহ্ণ, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
সন্তানের প্রতিপালন মা-বাবার দায়িত্ব। তারাই সন্তানকে আগামী দিনের গড়ে তোলেন। শিশুর প্রতিপালনের দুটি দিক : এক. বাহ্যিক প্রতিপালন। যেমন শিশুর খাবার ও চিকিত্সার ব্যবস্থা করা, দুই. তার মনস্তত্ব গঠন। ইসলাম শিশুর বাহ্যিক ও মানসিক উভয় প্রকার গঠন নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে। মা-বাবা যেমন শিশুর খাবার, পোশাক, স্বাস্থ্য-চিকিত্সার মতো বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখবে, তেমনি তারা ঈমান, আখলাক ও চিন্তা-ভাবনাগুলোর প্রতিও লক্ষ্য রাখবে। সৃষ্টিগতভাবেই সন্তানের প্রতি মা-বাবা অত্যন্ত স্নেহশীল। আল্লাহ মা-বাবার ভেতর এমন মমত্ব ও ভালোবাসা তৈরি করে দেন যে, তারা শিশুর সর্বপ্রকার ভালো-মন্দের খেয়াল রাখে। নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে সব প্রয়োজন পূরণ করে। তবে মা-বাবাকে তখনই দায়িত্বশীল বলা যাবে, যখন তারা সন্তানের দৈহিক গঠনের মতো, মানসিক গঠনকেও গুরুত্ব দেবে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করবে যেন শিশুটি সুস্থ দেহের মতো সুস্থ চিন্তা-ভাবনা ও বিশ্বাস নিয়ে গড়ে ওঠে।

ইসলাম সন্তানের মানসিক গঠনে বিশুদ্ধ বোধ ও বিশ্বাসকে গুরুত্ব দেয়। অর্থাত্ মা-বাবা শিশুকে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসগুলো শেখানের মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্বাস ও চেতনা নিয়ে বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে। কেননা বিশুদ্ধ বিশ্বাসই শিশুর নীতি-নৈতিকতার রক্ষাকবজ। যে শিশু এই বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে উঠবে যে একজন আল্লাহ আছেন এবং তিনি আমাকে দেখছেন। আল্লাহ পরকালে ভালো ও মন্দ কাজের উপযুক্ত প্রতিদান দেবেন, তখন সে অন্যায় ও অপরাধে লিপ্ত হতে দ্বিধা করবে। আলী (রা.) বলেন, তোমরা শিশুকে তিনটি বিষয় শেখাও। তা হলো, নবীজি (সা.)-এর ভালোবাসা, নবীপরিবারের ভালোবাসা এবং কোরআনের তিলাওয়াত। (তাবারানি)

এখানে এমন তিনটি বিষয় শেখাতে বলা হয়েছে, যার সঙ্গে শিশুর মনস্তত্ব ও বিশ্বাস সম্পর্কিত। নবীজি (সা.)-এর ভালোবাসা শিশুকে ধর্মপ্রাণ ও আল্লাহমুখী করবে, নবীপরিবার ও সাহাবিদের ভালোবাসা তাঁকে সত্যান্বেষী ও সত্যপ্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করবে এবং কোরআনের জ্ঞান তাঁকে দুনিয়া ও আখেরাতে সুপথ প্রদর্শন করবে।

সন্তানের মানসিক গঠনের সর্বোত্তম সময় শৈশব। কেননা শিশু নিষ্কলুষ পরিচ্ছন্ন হূদয় নিয়ে জন্ম করে। যা বিশুদ্ধ বোধ ও বিশ্বাস ধারণের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত। আবু হুরায়রা বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক নবজাতকই ফিতরাতের ওপর জন্ম লাভ করে। অতঃপর তার পিতামাতা তাকে ইহুদি, খ্রিস্টান বা অগ্নিপূজারী রূপে গড়ে তোলে। যেমন চতুষ্পদ পশু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে কোনো (জন্মগত) কানকাটা দেখতে পাও?’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫১৮)

উল্লিখিত হাদিস থেকে সন্তানের মানসিক গঠনে মা-বাবার ভূমিকা ও পরিবার-প্রতিবেশের প্রভাব সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। অর্থাৎ মা-বাবা যদি দায়িত্বশীল ও সচেতন হন এবং সন্তানের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করতে পারেন, তবে সন্তান সুষ্ঠু মন-মানসিকতা নিয়ে বড় হবে। নতুবা তার মানসিক অবস্থা হবে অসুস্থ।

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, শৈশবে শিশুর মানসিক গঠন ঠিক করা ঠিক ততটাই সহজ একটি চারা গাছকে বিশেষ অবয়ব দেওয়া যতটা সহজ। শৈশবে খুব সহজেই শিশুর চিন্তা-ভাবনা ও মন-মানসিকতা সুন্দরভাবে গড়ে তোলা যায়। তার জীবনের গতিধারা সুপথে পরিচালিত করা যায়। একটি সুনির্দিষ্ট মনোভাব নিয়ে বড় হওয়ার পর তাঁর চিন্তার পরিবর্তন কঠিন হয়ে যায়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) শিশুর মানসিক গঠনের প্রতি অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। হাদিস ও সিরাত গ্রন্থগুলোতে তার অসংখ্য প্রমাণ বিদ্যমান। আমর ইবনে আবি সালামা (রা.) বলেন, আমি শৈশবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে খাবার খাচ্ছিলাম। আমার হাত এদিক সেদিক করছিলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, বত্স! আল্লাহর নাম স্মরণ কোরো, ডান হাতে খাও এবং নিজের সামনে থেকে খাও। (সহিহ মুসলিম)

একইভাবে আবদুল্লাহ বিন আমের (রা.) বলেন, একদিন মহানবী (সা.) আমাদের বাড়ি আগমন করলেন। আমার মা আমাকে ডাকলেন, এসো তোমাকে একটি জিনিস দেব। নবীজি (সা.) আমার মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তাকে কি দিতে চাও? মা বললেন, খেজুর দিতে চাই। তিনি বললেন, যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে তবে তোমার নামে একটি মিথ্যা বলার পাপ লিপিবদ্ধ হতো। (সুনানে আবু দাউদ)

নবীজি (সা.) উল্লিখিত হাদিসে শিশুর সঙ্গে প্রতারণামূলক আচরণ করতে নিষেধ করেছেন। কেননা তা শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং তাকে মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত করে। এছাড়াও শিশুরা মূলত তার মা-বাবা ও পরিবারের বড়দের অনুসরণ করতে ভালোবাসে। শিশুর মানসিক গঠনে মা-বাবার সুন্দর আচরণ ও জীবন যাপনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আল্লাহ সবাইকে শিশুর মানসিক গঠনে যত্নশীল হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।