নিউজ ডেস্ক:
আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এটি অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার ১১তম এবং বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে টানা ৯ম বাজেট। আসন্ন বাজেট ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি লন্ডন সফরকালে জানিয়েছেন। চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানিয়েছে, প্রতি বছর বাজেটকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দল, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনার আয়োজন করা হয়। এ বছরও সে ধরনের প্রাক-বাজেট আলোচনার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব বৈঠকে আলোচনা থেকে যেসব সুপারিশ উঠে আসবে বাজেটে সেগুলোর প্রতিফলন ঘটানো হবে।
আসন্ন বাজেটে জিডিপি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় প্রথম দিকে সামান্য মন্থর হলেও অর্থবছরের মধ্য ভাগ থেকে রাজস্ব আদায়ে গতি বেড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মনে করছে, অর্থবছরের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। বিশেষ করে, এনবিআর রাজস্ব আদায়ে বেশকিছু নতুন পদক্ষেপ নেওয়ায় রাজস্ব আদায়ে গতি ফিরে এসেছে।
সূত্র জানায়, অন্যান্য অর্থবছরের মত আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো হবে। এজন্য করের বোঝা না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর, এমন খাদ্যের ওপর কর বাড়নো হতে পারে। অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি জাঙ্ক ফুডের (ফাস্ট ফুড) ওপর কর বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ ছাড়া রাজস্ব আদায় বাড়তে নতুন আরো কিছু খাত চিহ্নিত করা হয়েছে।
এনবিআরের তথ্য অনুসারে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায়ে ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ে চলতি অর্থবছরে সর্বাধিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এনবিআর।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের নীতিগত দিক সম্পর্কে মতবিনিময়ের উদ্দেশ্যে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রাক-বাজেট আলোচনা শুরু হবে। প্রথম দিন অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই), ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ (ইআরজি), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সন্ধ্যা ৬টায় এ মতবিনিময় সভা হবে।
দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা হবে ৯ মার্চ বেলা ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়। বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) নেতাদের সঙ্গে ২৩ মার্চ বিকেল ৪টায় শেরে বাংলা নগরে এনইসি ভবনে মতবিনিময় করা হবে। সব মন্ত্রণালয়/বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিবদের সঙ্গে বৈঠক হবে ২৮ মার্চ বিকেল ৩টায় সচিবালয়ে। ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরামের সঙ্গে বৈঠক হবে ৩১ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়। জাতীয় সংসদের চারটি স্থায়ী কমিটির (অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি) সভাপতি ও সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক হবে ৪ এপ্রিল এনইসি সম্মেলন কক্ষে বিকেল ৪টায়।
এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে প্রথম পর্বের বৈঠক হবে ৪ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় পর্বের বৈঠক হবে ৬ এপ্রিল বিকেল ৩টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের বৈঠক হবে ৩০ এপ্রিল বিকেল ৩টায় সচিবালয়ে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা হবে ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়।
প্রতি বছর অর্থমন্ত্রী বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই-এর আয়োজনে কৃষকদের উপস্থিতিতে সরাসরি প্রচারিত ‘কৃষি বাজেট, কৃষকের বাজেট’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ বছর অনুষ্ঠানটি ১২ এপ্রিল বরিশালে হবে। এ ছাড়াও এফবিসিসিআই ও এনটিভি আয়োজিত ‘কেমন বাজেট চাই’অনুষ্ঠানটি ২ মে সন্ধ্যা ৬টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে হবে। মাছরাঙ্গা টেলিভিশন ও এমসিসিআই আয়োজিত প্রাক-বাজেট অনুষ্ঠানটি হবে ১২ মে। অনুষ্ঠানটি মাছরাঙ্গা টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করবে।