শিরোনাম :
Logo ইবিতে ঠিকাদারদের লাইসেন্স নবায়নের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ Logo জবির স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় আয় ১২ কোটি টাকা Logo বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন চাঁদপুর জেলা শাখার নির্বাচন সম্পন্ন Logo আসিফ মাহমুদের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo সরকার উদ্যোগ না নিলে আমরা বসে থাকব না: নাহিদ ইসলাম Logo সার্কের বিকল্প জোট গঠনে কাজ করছে চীন-পাকিস্তান, রয়েছে বাংলাদেশও Logo পহেলা জুলাই থেকে ৫ আগস্টের কর্মসূচি ঘিরে হুমকি নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo নতুন নেতৃত্বে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘তারুণ্য’ Logo সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সন্ত্রাসী হামলা, আহত-৩০ Logo খুবির দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনকে কটাক্ষ ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগ

মামলাই নেই, অথচ পরোয়ানায় গ্রেফতার!

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ১১:৩৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭
  • ৭৫৮ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানায় আটক, কারাবাস ও হয়রানির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। থানায় নেই কোন মামলা, তবুও নির্দিষ্ট আদালতের সিল সম্বলিত গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে হাজির পুলিশ! ধরে নিয়ে আসা হচ্ছে থানায়। শুধু তাই নয়, এমন পরোয়ানার ভিত্তিতে হাজতবাসও ঘটছে অহরহ। সম্প্রতি এমন কয়েকটি ভুয়া পরোয়ানায় আসামি খালাসের ঘটনায় বিষয়টি সামনে আসে।

ঢাকার আদালতের একটি পরোয়ানার কথা বলে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের উত্তর হাজিপুরের ক্ষুদ্র ব‌্যবসায়ী মাহবুবুর রহমানকে সম্প্রতি ধরে আনে পুলিশ। তাকে বলা হয় তিনি ২০১১ সালে রাজধানীর তুরাগ থানায় দায়ের করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলার আসামি। গত ৬ ডিসেম্বর গ্রেফতারের পর ১২ ডিসেম্বরে নোয়াখালীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত থেকে হাজতি পরোয়ানাসহ ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মাহবুবকে। এরপর ১৭ জানুয়ারি ঢাকার ষষ্ঠ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আদালতে তার জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। এই আদালতের পরোয়ানার কথা বলেই গ্রেফতার করা হয়েছিল তাকে।

মাহবুবের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ ও খায়রুল ইসলাম বলেন, জামিনের আবেদন উপস্থাপনের পর দেখা যায় ওই ক্রমিকের কোনো মামলাই এই আদালতে বিচারাধীন নেই। বিচারক রেহেনা আক্তার বিষয়টি বুঝতে পেরে নির্দোষ মাহবুবকে ভুয়া অভিযোগ ও পরোয়ানার চক্কর থেকে মুক্তি দেন।

একই বিচারক গত বছরের ২ নভেম্বর ভুয়া পরোয়ানায় আটক চাঁদপুরের কচুয়ার দৌলতপুরের আকমত আলীকে মুক্তি দিয়েছিলেন।আদালতের পেশকার হিমেল করিম বলেন, আমাদের আদালতের সিলের সঙ্গে এসব ভুয়া পরোয়ানার সিলের কোনো মিল নেই।

একইভাবে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে কবি ও গবেষক আবদেল মাননানকে গ্রেফতারে পল্টন মডেল থানার উপ-পরিদর্শক কাজী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ একটি ফৌজদারি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে হাজির হন মাননানের ভগ্নীপতি আব্দুল লতিফের পুরানা পল্টনের বাসায়। মাননান তখন বাসায় ছিলেন না। এরপর বার বার লতিফের বাসায় আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য যান। মাননানের স্বজনরা পরোয়ানা দেখতে চাইলে তা দেখানো হয়নি।

মাননান বিষয়টি একটি সংবাদ মাধ্যমে জানালে এসআই মাহমুদের কাছে পরোয়ানার মামলার নম্বর ও আদালতের নাম জানতে চাওয়া হয়। টেলিফোনে ‘বলা যাবে না’ বলে প্রথমে এড়িয়ে যান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে জানান, মামলার নম্বর সিআর ৪১৮/২০১২, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হকের আদালতের পরোয়ানা।

ওই আদালতের মামলার নিবন্ধন খাতা খুলে দেখা যায়, ওই সিরিয়ালের মামলাটি একটি যৌতুকের মামলা। আর আসামির মধ‌্যে আবদেল মাননান নামে কেউ নেই। বিষয়টি তখন ঢাকার মহানগর পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমানকে জানানো হলে তিনি খোঁজ নিয়ে জানান, এটি একটি ভুয়া পরোয়ানা।

তখন ওই আদালতের পরোয়ানা জারিকারক মাইনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরোয়ানায় ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হকের যে স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করা হয়েছে, তা জাল।

একইভাবে ২০১০ সালে অপরাধী না হয়েও ভুয়া পরোয়ানায় গ্রেফতার হয়ে ১৬ দিন ধরে কারাগারে থাকতে হয়েছিল কুমিল্লার চান্দিনার সাকুচ গ্রামের কৃষক আবুল হাশেমকে।ভুয়া পরোয়ানার বিষয়টি ধরা পড়ার পর ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব‌্যুনালের বিচারক মো. রেজাউল ইসলাম ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক হাশেমকে মুক্তি দেন।

তখন অনুসন্ধানে দেখা যায়, তেজগাঁও থানার ওই মামলাটি দুর্নীতি দমন ব্যুরোর (বিলুপ্ত) দায়ের করা একটি দুর্নীতির মামলা। এতে হাশেম নামে কোনো আসামি নেই।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রতিনিয়ত এমন ভুয়া পরোয়ানার মুখোমুখি হয়ে হয়রানি হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। দালালদের যোগসাজশে আদালত কর্মচারী ও পুলিশ সদস‌্যরা মিলে এসব করছে বলে অভিযোগ উঠলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ইবিতে ঠিকাদারদের লাইসেন্স নবায়নের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

মামলাই নেই, অথচ পরোয়ানায় গ্রেফতার!

আপডেট সময় : ১১:৩৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

নিউজ ডেস্ক:

ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানায় আটক, কারাবাস ও হয়রানির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। থানায় নেই কোন মামলা, তবুও নির্দিষ্ট আদালতের সিল সম্বলিত গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে হাজির পুলিশ! ধরে নিয়ে আসা হচ্ছে থানায়। শুধু তাই নয়, এমন পরোয়ানার ভিত্তিতে হাজতবাসও ঘটছে অহরহ। সম্প্রতি এমন কয়েকটি ভুয়া পরোয়ানায় আসামি খালাসের ঘটনায় বিষয়টি সামনে আসে।

ঢাকার আদালতের একটি পরোয়ানার কথা বলে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের উত্তর হাজিপুরের ক্ষুদ্র ব‌্যবসায়ী মাহবুবুর রহমানকে সম্প্রতি ধরে আনে পুলিশ। তাকে বলা হয় তিনি ২০১১ সালে রাজধানীর তুরাগ থানায় দায়ের করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলার আসামি। গত ৬ ডিসেম্বর গ্রেফতারের পর ১২ ডিসেম্বরে নোয়াখালীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত থেকে হাজতি পরোয়ানাসহ ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মাহবুবকে। এরপর ১৭ জানুয়ারি ঢাকার ষষ্ঠ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আদালতে তার জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। এই আদালতের পরোয়ানার কথা বলেই গ্রেফতার করা হয়েছিল তাকে।

মাহবুবের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ ও খায়রুল ইসলাম বলেন, জামিনের আবেদন উপস্থাপনের পর দেখা যায় ওই ক্রমিকের কোনো মামলাই এই আদালতে বিচারাধীন নেই। বিচারক রেহেনা আক্তার বিষয়টি বুঝতে পেরে নির্দোষ মাহবুবকে ভুয়া অভিযোগ ও পরোয়ানার চক্কর থেকে মুক্তি দেন।

একই বিচারক গত বছরের ২ নভেম্বর ভুয়া পরোয়ানায় আটক চাঁদপুরের কচুয়ার দৌলতপুরের আকমত আলীকে মুক্তি দিয়েছিলেন।আদালতের পেশকার হিমেল করিম বলেন, আমাদের আদালতের সিলের সঙ্গে এসব ভুয়া পরোয়ানার সিলের কোনো মিল নেই।

একইভাবে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে কবি ও গবেষক আবদেল মাননানকে গ্রেফতারে পল্টন মডেল থানার উপ-পরিদর্শক কাজী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ একটি ফৌজদারি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে হাজির হন মাননানের ভগ্নীপতি আব্দুল লতিফের পুরানা পল্টনের বাসায়। মাননান তখন বাসায় ছিলেন না। এরপর বার বার লতিফের বাসায় আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য যান। মাননানের স্বজনরা পরোয়ানা দেখতে চাইলে তা দেখানো হয়নি।

মাননান বিষয়টি একটি সংবাদ মাধ্যমে জানালে এসআই মাহমুদের কাছে পরোয়ানার মামলার নম্বর ও আদালতের নাম জানতে চাওয়া হয়। টেলিফোনে ‘বলা যাবে না’ বলে প্রথমে এড়িয়ে যান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে জানান, মামলার নম্বর সিআর ৪১৮/২০১২, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হকের আদালতের পরোয়ানা।

ওই আদালতের মামলার নিবন্ধন খাতা খুলে দেখা যায়, ওই সিরিয়ালের মামলাটি একটি যৌতুকের মামলা। আর আসামির মধ‌্যে আবদেল মাননান নামে কেউ নেই। বিষয়টি তখন ঢাকার মহানগর পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমানকে জানানো হলে তিনি খোঁজ নিয়ে জানান, এটি একটি ভুয়া পরোয়ানা।

তখন ওই আদালতের পরোয়ানা জারিকারক মাইনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরোয়ানায় ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হকের যে স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করা হয়েছে, তা জাল।

একইভাবে ২০১০ সালে অপরাধী না হয়েও ভুয়া পরোয়ানায় গ্রেফতার হয়ে ১৬ দিন ধরে কারাগারে থাকতে হয়েছিল কুমিল্লার চান্দিনার সাকুচ গ্রামের কৃষক আবুল হাশেমকে।ভুয়া পরোয়ানার বিষয়টি ধরা পড়ার পর ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব‌্যুনালের বিচারক মো. রেজাউল ইসলাম ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক হাশেমকে মুক্তি দেন।

তখন অনুসন্ধানে দেখা যায়, তেজগাঁও থানার ওই মামলাটি দুর্নীতি দমন ব্যুরোর (বিলুপ্ত) দায়ের করা একটি দুর্নীতির মামলা। এতে হাশেম নামে কোনো আসামি নেই।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রতিনিয়ত এমন ভুয়া পরোয়ানার মুখোমুখি হয়ে হয়রানি হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। দালালদের যোগসাজশে আদালত কর্মচারী ও পুলিশ সদস‌্যরা মিলে এসব করছে বলে অভিযোগ উঠলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।