নিউজ ডেস্ক:
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদের নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নির্বাচন শেষে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।
সিইসি বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচন অন্যান্য নির্বাচন থেকে ভিন্ন। বিভিন্ন স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। আমি নিজে রাজধানীতে দুটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ’
তিনি বলেন, প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থা থেকে ভিন্ন এবং ভোটার সংখ্যা কম হলেও নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে যাতে কোনো শঙ্কা না থাকে, প্রতিটি ভোটার যাতে নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে, ভোট কেন্দ্রে এসে স্বচ্ছন্দে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন সে জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।
কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যাতে নির্বাচনে প্রচার বা প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন সে জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সংসদ সদস্যরা যাতে এলাকায় থেকে প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। সংসদ সদস্যদের এলাকা ত্যাগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, এ নির্বাচনে যেহেতু ভোটার কম, সেজন্য ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা ছিল একটি চ্যালেঞ্জ। এ জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কোনো ভোটার যাতে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল না মারেন এবং ব্যালটের ছবি তুলতে না পারেন সেজন্য বিশেষ নির্দেশ প্রদান করা হয়। মোবাইল ফোনসহ সকল ধরণের ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে ভোট সেন্টারে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
সিইসি বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, কোস্ট গার্ড, ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োগ করা হয়। ভোটগ্রহণের দিন এবং তার এক দিন আগে ও এক দিন পরে মোট ৩ দিন ভোট কেন্দ্রে ও সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় ফোর্স মোতায়েন করা হয়। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ২০ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের জন্য পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে ১টি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং র্যাবের ১টি করে মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন ছিল। গুরুর্ত্বপূর্ণ প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের এলাকায় ১ প্লাটুন বিজিবি/কোস্ট গার্ড মোতায়েন করা হয়। মোবাইল ফোর্সের ন্যূনপক্ষে ১টি দল ভোট কেন্দ্রের আশে পাশের এলাকায় নিবিড় টহলদানের ব্যবস্থা ছিল।
তিনি বলেন, যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধ এবং তাৎক্ষণিক বিচারের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। জেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা লঙ্ঘন সংক্রান্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার লক্ষ্যে ৬১টি জেলায় মোট ৯১ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরের দিন অর্থাৎ ১২ ডিসেম্বর থেকে ভোট গ্রহণের পরের দিন অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৮ দিনের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, রংপুর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা এই ১০টি জেলার জন্য প্রতিটিতে ৪ জন করে মোট ৪০ জন এবং অবশিষ্ট ৫১ জেলায় প্রতিটিতে ১ জন করে মোট ৫১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়।
সিইসি বলেন, নির্বাচনী অপরাধসমূহ ফোজদারি অপরাধ আমলে নিয়ে বিচার সম্পন্ন করার জন্য মোট ৯১ (একানব্বই) জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ভোটগ্রহণের আগের দিন, ভোটগ্রহণের দিন ও ভোটগ্রহণের পরের দিন অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৪ দিনের জন্য নিয়োজিত হয়। ৬১ জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, রংপুর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা এই ১০টি জেলার জন্য প্রতিটিতে ৪ জন করে মোট ৪০ জন এবং অবশিষ্ট ৫১ টি জেলায় প্রতিটিতে ১ জন করে মোট ৫১ জন নিয়োগ দেয়া হয়।
কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বিভিন্ন স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রথম বারের মত জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন। তিনটি পার্বত্য জেলা ছাড়া ৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ফেনী এবং ভোলা জেলায় সবগুলো পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এই নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা- ৬৩ হাজার ১৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ- ৪৮ হাজার ৩৪৩ জন এবং মহিলা- ১৪ হাজার ৮০০ জন। মোট প্রার্থী- ৩ হাজার ৯৩৮ জন, এর মধ্যে চেয়ারম্যান- ১৪৬ জন, সংরক্ষিত সদস্য- ৮০৬ জন, সাধারণ সদস্য- ২ হাজার ৯৮৬ জন এবং ভোট কেন্দ্র ৯১৫ টি। প্রতি কেন্দ্রে পুরুষ ও মহিলা ভোটারদের পৃথক কক্ষ ছিল।